ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ববিতে ১৮ জুলাই ‘লীগ বহিষ্কার’ কর্মসূচির প্রস্তাব শিক্ষার্থীদের

আব্দুল্লাহ জাইফ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২২:১৫, ৯ জুলাই ২০২৫

ববিতে ১৮ জুলাই ‘লীগ বহিষ্কার’ কর্মসূচির প্রস্তাব শিক্ষার্থীদের

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার এক বছর পার হলেও বিচার হয়নি। বরং অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে মাসব্যাপী প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে আগামী ১৮ জুলাই ‘লীগ বহিষ্কার’ কর্মসূচি পালনের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৪টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে এ প্রস্তাব দেন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ রায়। এ ছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই মাসজুড়ে ১৩টি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—জুলাই ছাত্র-জনতার বিজয় র‌্যালি ও বিজয় ভোজ, জুলাই অ্যাম্বাসেডর ও সম্মাননা প্রদান, শর্টফিল্ম-ভিডিও প্রদর্শনী, পোস্টার ও স্লোগান প্রতিযোগিতা, “জুলাই ৩৬” ভাবনা প্রতিযোগিতা, রচনা-কবিতা-চিত্রাঙ্কন-গ্রাফিতি প্রতিযোগিতা, রিমেম্বারেন্স ভিডিও শেয়ার, শহিদ পরিবার ও আহতদের সম্মাননা (ক্রেস্ট প্রদান), “জুলাই কর্নার” উদ্বোধন, “জুলাই ৩৬” স্মৃতিফলক নির্মাণ, “জুলাই শহিদ দিবস” উপলক্ষে আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ এবং “সৈরাচার মুক্ত দিবস” উদযাপন।

সৌরভ রায় বলেন, “আমি জুলাই আন্দোলনের একজন আহত সৈনিক। আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার কোনো বিচার হয়নি। তারা এখনও মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাসব্যাপী আন্দোলন শুরু হোক ‘লীগ বহিষ্কার’ কর্মসূচির মাধ্যমে।”

সভায় উপস্থিত ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, “ছাত্রলীগের বিচার না হওয়া আমাদের জন্য লজ্জাজনক। ১৮ জুলাই ‘ছাত্রলীগ বহিষ্কার’ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের নতুন অধ্যায় শুরু হোক।”

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শুধু ছাত্রলীগ নয়, বরং আন্দোলন দমনে পেছন থেকে ইন্ধনদাতা কিছু শিক্ষকেরও বিচার প্রয়োজন। লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, “আপনি (ভিসি) সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডেকেছেন, কিন্তু উপস্থিত হয়েছে হাতে গোনা কয়েকজন। এর মূল কারণ, প্রতিটি বিভাগে ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। তারা চায় না জুলাই আন্দোলন সফল হোক।”

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম বলেন, “বিচার ছাড়া আমরা কীভাবে আওয়ামী দোসর শিক্ষকদের সঙ্গে এক প্রোগ্রামে বসব?”

সভায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (অন্তর্বর্তীকালীন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম শিক্ষার্থীদের ‘টু দ্য পয়েন্ট’ হয়ে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে বলেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে তিনি বিব্রতবোধ করেন।

রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহসিন উদ্দিন বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামী ১৮ জুলাই আমরা ‘লীগ বহিষ্কার’-এর ঘোষণা দেব। শিক্ষকদের বিষয়টি কিছুটা জটিল হলেও নীতিগতভাবে আমরা একমত হয়েছি।”

উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য উপাচার্যের ডাকা আলোচনা সভায় মাত্র ১২ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিস্ট দোসর শিক্ষকদের সভায় আহ্বান করার অভিযোগ এনে সভাটি বর্জনের ঘোষণা দেন। পরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে আলাদা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মিমিয়া

×