ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ০০:০১, ৩ জুলাই ২০২৫

শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা

শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা

২০২৪ সালের ৩ জুলাই (বুধবার) কোটা পুনর্বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন’-এর ব্যানারে  মিছিল শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।

মিছিলে আন্দোলনকারীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি বলে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা আড়াইটার পর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দোয়েল চত্বর ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে দিয়ে শাহবাগে এসে মিছিলটি থামে বিকেল পৌনে চারটার দিকে। শাহবাগ মোড়ে সড়কের ওপর অবস্থান নেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের এই কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, কোটা প্রথা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।

যেহেতু ৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) উচ্চ আদালতে শুনানি, তাই সেখানে যেন আপামর শিক্ষার্থীদের স্বার্থের পক্ষে রায় দেওয়া হয়, সেই লক্ষ্যে শুধু ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকার বাইরে এদিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তারা ৩য় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
সে সময় আন্দোলনে অংশ না নিতে মধ্যরাতে হলে হলে গিয়ে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। জানা যায়, ঢাবি, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজসহ ঢাকার বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রুমে রুমে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়।  
২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। তখনো আন্দোলন দমাতে আন্দোলনকারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় শেখ হাসিনা সরকার, ছাত্রলীগ ও পুলিশ।

এ সময় কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দাবি মানতে বাধ্য হয় সরকার। ফলে, ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থার বৈষম্য ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন।

সেই রিটের রায়ে ২০২৪ সালের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে সঙ্গে আরও কয়েকটি দাবি যুক্ত করেন তারা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি মোট চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

×