
ছবি: জনকণ্ঠ
চাঁদপুর সদরের বাবুরহাট থেকে মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কের মাঝপথে ৩ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ঐ এলাকার গ্রামবাসীর জন্য যেন দুর্ভোগের স্থায়ী রূপ নিয়েছে। দীর্ঘ এক দশকেও এই সড়কে হয়নি কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন। সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বিপদে পড়ছে নারী-শিশু, বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও গর্ভবতী নারীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ। ফলে বহু বছর ধরে এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।
সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলা মৈশাদী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাবুরহাট মৈশাদী ফিডার রোডের এলাকা। বড় বড় গর্তে পড়ে প্রায়ই বিকল হচ্ছে যানবাহন, ঘটছে দুর্ঘটনাও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেহাল দশার এই সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হলেও শুরু হয়নি সংস্কারকাজ। এদিকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষিপণ্য নির্মাণ সামগ্রী স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। দ্রুত এই সড়কের মেরামত না করা হলে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এই অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি।
মূল সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন রিকশা, সিএনজি, অটোরিকশা, ছোটবড় ট্টাক, মোটরসাইকেলসহ অনেক যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির কোনো সংস্কার না হওয়ায় পিচ উঠে অসংখ্য স্থানে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। আর বৃষ্টিতে ভোগান্তি ওঠে চরমে। তাই একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজারো মানুষ। সড়কের পিচ উঠে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় জনজীবনে বেড়েছে চরম দুর্ভোগ।
প্রতিদিনই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে উল্টে যাচ্ছে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশাসহ আটকে পড়ছে প্রাইভেটকার ও মালবাহী কাভার্ড ভ্যান। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এই সড়কে চলাচলকারী অসংখ্য মানুষ। আর বৃষ্টির পানি জমে একেকটি গর্ত যেন পরিণত হয়েছে ছোট ডোবায়। বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সড়কটি সরকার কয়েক বছর আগে করলেও ড্রেনেজ সিস্টেম না থাকায় সড়কে পানি জমে রাস্তার এই বেহাল দশা। আমাদের চলাচলে খুব অসুবিধা হচ্ছে। এক বস্তা চাল যে বাড়িতে নেব, সে উপায়ও নাই। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার পর বাংলাদেশের সড়ক পথের যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত ও ভারসাম্যহীন নগরায়ন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ক্রমেই দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলা বাবুরহাটের শেষ সীমানার পর থেকে মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও মেরামত কাজের জন্য সড়কজুড়ে ইটের খোয়া বিছানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইটের খোয়া পড়ে থাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে পানি জমে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু খানাখন্দ ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করেছে। ঝুঁকির মধ্যেই হেলেদুলে চলছে সব ধরনের ছোট-বড় যানবাহন।
স্থানীয়রা জানান, একমাত্র এই সড়কটি দিয়েই দুইটি ইউনিয়নের লোকজন চাঁদপুর শহরে যাতায়াত করেন। শাহাতলী ও মৈশাদী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের লোকজনসহ অনেকে মোটরসাইকেলে দ্রুত শহরে প্রবেশ করতে এই সড়ক ব্যবহার করেন। কিন্তু সড়কের বেহাল দশায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। সবজি ও কৃষিপণ্য নিয়ে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। বেড়েছে পরিবহন খরচও। প্রতিদিন সড়কের খানাখন্দে পড়ে রাস্তার ওপর বিকল হচ্ছে নানা যানবাহন।
স্থানীয় বাসিন্দা মুদি দোকানি সিটু খান বলেন, মৈশাদী ইউনিয়নে প্রচুর শাকসবজি উৎপাদন হয়। এগুলো যানবাহনে করে চাঁদপুর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। কিন্তু সড়কটি বেহাল থাকার কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। ফলে কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সিএনজি চালক মিন্টু বকাউল বলেন, বেহাল সড়কের কারণে প্রসূতি নারীদের যথাসময়ে সদর হাসপাতালে নেওয়া যায় না। সম্প্রতি এক প্রসূতিকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতেই সন্তান প্রসব হয়েছে। সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দে চাকা পড়ে সিএনজি উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। খানাখন্দে পানি জমি সড়কটি পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে।
ট্রাকচালক সবুজ বলেন, ইটের খোয়া বিছানো এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সময় বেশি লাগছে। এতে তেল খরচও বাড়ছে। এছাড়াও গাড়ির নাট-বোল্ট খুলে পড়ে যাচ্ছে। পাতি বেঁকে যাওয়াসহ মাঝেমধ্যে চাকা গর্তে পড়ে গাড়ি সড়কেই বিকল হয়ে যায়।
হামানকর্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, বাবুরহাট মৈশাদী ফিডার রোডের ৪ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৩ কিলোমিটার পথ ভাঙ্গাচুরার কারণে হামানকর্দি পাইকদি,শাহাতলী, ভাটেরগাও, আশিকাটি ও মৈশাদী গ্রামের বাসিন্দাসহ ৪ টি প্রাইমারি স্কুল, ৪টি হাইস্কুল একটি কলেজ ও একটি মাদ্রাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভোগান্তি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাফেরা করতে হয়। তিনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান।
বাবুরহাট মৈশাদী রাস্তার পাশে অবস্থিত হামানকর্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুব আলম বলেন, এই চার কিলোমিটার সড়ক এলাকাবাসীর জন্য এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক সংস্কার কাজ ফেলে রাখায় এলাকার অনেক মানুষকে চাঁদপুরে অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসা যাওয়ার সময় স্যান্ডেল/জুতা হাতে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে আসতে হয়। এর মধ্যে অনেক ছাত্রছাত্রী গর্তের মধ্যে পা পড়ে গিয়ে পাও ভেঙ্গে গেছে। অথচ প্রায় তিন বছরেও এলজিইডি এই চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজে আন্তরিকতার প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক সরকার বলেন আমার ওয়ার্ডের সবগুলি রাস্তা থেকে এই প্রধান সড়কটির সবচাইতে বেহাল দশা, ইতিমধ্যে ৯নং ওয়ার্ডের জনগণকে নিয়ে আমার নিজের উদ্যোগে ইটের খোয়া ও বালি ফেলে কিছুটা সংস্কার করে দিয়েছি কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। তাই সড়কটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাই।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ববরঞ্জন রায় বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদে আসার সময় এই ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে আসতে হয়, যত দ্রুত সম্ভব এই রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান তিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান কবীর বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন যাবত এভাবে থাকায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। আমরা ২০২৫-২৬অর্থবছরে এই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রকল্প প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। ফলে সড়কটি দ্রুত সংস্কার হলে ঐ এলাকার জনগণ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাবে।
আবির