ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

নিশ্চুপ প্রশাসন

কেরানীগঞ্জে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২ জুলাই ২০২৫

কেরানীগঞ্জে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

কেরানীগঞ্জে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কালিন্দি ইউনিয়নের মাদারীপুুরে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। কেরানীগঞ্জের মধ্যে মাদকের অন্যতম ঘাঁটি মাদারীপুর এলাকা। এই এলাকার ছোট বড় মিলে প্রায় ডজন খানেক মাদক কারবারি রয়েছে। সেই কয়েক যুগ ধরে এ অঞ্চলটি মাদকের স্বর্গরাজ্য। কেরানীগঞ্জজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান চললেও মাদারীপুর এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরা এখনো অধরা।

অদৃশ্য এক ‘হোয়াইট কালার’ গডফাদারের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক।  বুধবার সকালে সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদারীপুর এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে মাদক বিক্রি করে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। দুই এক মাস পর আবার জামিনে বের হয়ে সেই একই মাদক ব্যবসা শুরু করে। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।

শুধু কি আমাদের এলাকায় তারা মাদক বিক্রি করে, অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও লোক আসে মাদারীপুরের মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাদক ক্রয় করতে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা যে কোনো মুহূর্তে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। অভিযোগ রয়েছে, এলাকায় মাদকের মূলহোতা আলম (৫৬) নিজের বাসাকে মাদকের হাব হিসেবে ব্যবহার করছে। তাকে সহায়তা করছে রবিন (৪৫), অপু (৩৬) মাহবুব (৩৭) ও সোলায়মান (৫২), জসিম (২৪), আরাফ (২১), মুহিত (৪৫), কিরামত (৩৫)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদারীপুরের স্থানীয় যুবক বলেন,  মাদক কারবারিদের প্রভাব ও হুমকির কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। সন্ধ্যার পর তাদের মাদক ব্যবসা চলে প্রকাশ্যেই। যেন প্রশাসনের চোখে ধুলা দিয়েই বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছেন এ অবৈধ কার্যক্রম। এমনকি তারা নিজেরাও  জানিয়েছেন তারা ধরা পড়লে  জেলে যায় আর আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় মুরুব্বি বলেন,  ইতোপূর্বে কয়েক দফায় মাদকসহ অনেক আসামি মাদারীপুুর থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস শেষে পুনরায় ব্যবসা চালিয়ে আসছে। মাদক মামলা ছাড়াও রয়েছে নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলা। বছরের পর বছর মাদক ব্যবসা চলমান রাখলেও ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না আমাদের এলাকার মানুষ। অনেকটা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই মাদারীপুর, বরিশুর এলাকায় চলছে মাদক বাণিজ্য।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার সামাজিক বন্ধন, নিরাপত্তা ও নৈতিকতা সবকিছুই ভেঙে পড়েছে। মাদকের ছোবলে শিশু-কিশোররাও ঝুঁকির মুখে। জরুরি ভিত্তিতে অভিযানের বিকল্প নেই। আর সময় নেই, এখনই এই চক্রের বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক, শক্তিশালী এবং ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। 
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সত্যিকারের সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসে, তাহলে এই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে এলাকাটি রক্ষা করা সম্ভব। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, দ্রুত প্রশাসনকে সক্রিয় করুন। নয়তো, স্থানীয় সমাজ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মনিরুল হক ডাবলু বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি চালু রয়েছে। মাদারীপুর এলাকায় ইতোমধ্যে মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ কাজ করছে। সাদা পোশাকেও  পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

×