
ছবিঃ সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে পৃথক চারটি স্থানে আব্দুস সালাম, সেলিম মন্ডল, মো. সুজন খান ও আলাউদ্দিন গুলিতে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (৭২), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৩), সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান (৬৪)সহ ১৮ জনের নামে ও আরো অজ্ঞাত ৩৮০ জনকে আসামী করে পৃথক ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
গত ৩০ জুনে তিনটি ও ২৭ জুনে একটিসহ মোট চারটি মামলা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা হয়। এতে বাদী হয়েছেন মো. সিরাজুল ইসলাম (৫৮), মুনজিল হোসেন (৫০), মো. আল আমিন (২৩) ও মো. ওয়াজেদ আলী (৪০)।
মামলা দায়েরের বিষয়টি বুধবার বিকেলে সাংবাদিকরা অবহিত হন। বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এ ৪টি মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মো. আল আমিন বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (৭২), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৩), সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান (৬৪), শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান (৩৭), শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান (৪৫) ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নং ওয়াডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল (৪২)। এই মামলায় অজ্ঞাত নামা আসামী রয়েছেন-৬০-৭০ জন।
মো. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান (৬৪), শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান (৩৭), শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান (৪৫) ও সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল (৪২)। মামলাটি অজ্ঞাত হিসেবে আসামী রয়েছে ১০০-১৫০ জন। মুনজিল হোসেনের বাদী হওয়া মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের অজ্ঞাত নামা ৭০-৮০ জন আসামি করা হয়েছে।
ওয়াজেদ আলীর দায়ের করা মামলায়: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (৭২), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৩), সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান (৬৪), শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান (৩৭), শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান (৪৫) ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল (৪২)। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী রয়েছেন -৬০-৭০ জন।
মামলার এজাহারগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ১৯ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বৃষ্টি হার্ডওয়ার দোকানের সামনে ছাত্র জনতা আন্দোলন করাকালীন সময়ে বাদী মুনজিল হোসেনের ছেলে মো. সুজন খান (২৯) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেদিন এই মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিরা ঘটনাস্থলে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে ভিকটিম সুজন খানের নাভির নিচে কোমড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। পরদিন ২০ জুলাই বিকেল ৪ টার সময়ে বাদী সিরাজুল ইসলামের ছোট ভাই আলাউদ্দিন (৩৬) আন্দোলনরতদের সঙ্গে যোগ দেন। ওইদিন বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাদানিনগর অংশে বিক্ষোভ চালিয়ে গেলে তাদের দমাতে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করা হয়। তখন ভিকটিম আলাউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে।
আবার ২০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের ডাচ্ বাংলা ব্যাংক শাখার সামনে বাদী আল আমিনের ছোট ভাই ভিকটিম আব্দুস সালাম গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধের দুদিন পর ডাচ্ বাংলা ভবন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০ জুলাই একইদিন মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ভবনের সামনে মামলার বাদী ওয়াজেদ আলীর ছোট ভাই ভিকটিম সেলিম মন্ডল গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, গত ২৭ জুন একটি ও বাকি ৩টি হত্যা মামলা ৩০ জুন দায়ের করা হয়েছে। এ চারটি মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আলীম