
ছবি: সংগৃহীত।
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় চার দিন পেরিয়ে গেলেও মূল হোতারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত এক নারীসহ মামলার ৫ নম্বর আসামিকে আটক করেছে। এই নির্মম ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ইতোমধ্যে অভিযুক্ত শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের তিন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর স্বামী ঢাকার একটি হোটেলে চাকরি করেন। তার তিন স্ত্রী রয়েছেন—দুইজন ঢাকায় এবং তৃতীয় স্ত্রী তজুমদ্দিনে থাকেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তিনি বড় স্ত্রীকে নিয়ে ভোলার তজুমদ্দিনের বাড়িতে আসেন। গত শনিবার রাতে তৃতীয় স্ত্রী তাকে বাসায় ডেকে নেন। অভিযোগ রয়েছে, সেদিন রাতে উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, যুবদল কর্মী আলাউদ্দিনসহ ছাত্রদলের কয়েকজন মিলে ছয়-সাতজনের একটি সন্ত্রাসী দল ঘরে ঢুকে তাকে বেধড়ক মারধর করে।
তারা বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী সংসার করতে রাজি নন—এই অভিযোগে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তিনি অপারগতা জানালে তাকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে রোববার সকালে তার প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তারা পাঁচ লাখ টাকার বদলে এক লাখ টাকা দাবি করে, এবং টাকার আশ্বাস পেয়ে স্বামীকে দোকানে নিয়ে যাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বের করে।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, স্বামীকে বাইরে নেওয়ার পর ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে সন্ত্রাসীরা পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। চিৎকারে প্রতিবেশী নারীরা জানালা খুলতে চেষ্টা করেন। পা ধরে আকুতি জানিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি তিনি। এ ঘটনা কাউকে না বলার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানান।
ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানির পর সন্ত্রাসীরা তাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর স্বামী ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে অভিযোগ গ্রহণ করে। এরপর গৃহবধূকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পর অভিযুক্তদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান আসামি ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল কর্মী আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকেলে তজুমদ্দিন উপজেলা সদরে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়। বক্তারা বলেন, অপরাধীদের দলীয় পরিচয় যাই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন—তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা মিন্টু, সদস্য সচিব ওরম আসাদ রিন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন মনু, যুবদল নেতা হাসান সাফা পিন্টু, চাঁদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন জুফিকার, শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন লিটন ও সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম প্রমুখ।
তজুমদ্দিন উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি ইকবাল হোসেন লিটন অভিযুক্ত ফরিদ উদ্দিনকে দল থেকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তজুমদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাসেল ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জয়নাল আবেদীন সজীবকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে ঘটনার ৫ নম্বর আসামি মানিককে র্যাব-৮ অভিযান চালিয়ে আটক করে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহব্বত খান জানান, সোমবার ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ফরিদ ও আলাউদ্দিনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত ঝর্ণা বেগম (তৃতীয় স্ত্রী) কে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সায়মা ইসলাম