
দৈনিক জনকণ্ঠ
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কালিন্দি ইউনিয়নের মাদারীপুুরে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। প্রশাসনের নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। কেরানীগঞ্জের মধ্যে মাদকের অন্যতম ঘাটি মাদারীপুর এলাকা।
এই এলাকার ছোট বড় মিলে প্রায় দুজন খানিক মাদক কারবারি রয়েছে। সেই কয়েক যুগ ধরে এ অঞ্চলটি মাদকের স্বর্গরাজ্য। কেরানীগঞ্জ জুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান চললেও মাদারীপুর এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা এখনও অধরা। অদৃশ্য এক ‘হোয়াইট কালার’ গডফাদারের ছত্র ছায়ায় গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক।
আজ ( ০২ জুলাই ) বুধবার সকালে সরেজমিনে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মাদারীপুর এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে মাদক বিক্রি করেই যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়।
দু এক মাস পর আবার জামিনে বের হয়ে সেই একই মাদক ব্যবসা শুরু করে। আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। কেননা আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। শুধু কি আমাদের এলাকায় তারা মাদক বিক্রি করে। অনেকদূর দূরান্ত থেকে ও লোক আসে মাদারীপুরের মাদক ব্যবসায়ীদেও কাছ থেকে মাদক ক্রয় করতে। আমরা বেশিরভাগ মানুষ ভয়ে কথা বলি না ।
কেননা তাদের কোন ভয় নেই,তারা যে কোনো মুহূর্তে আমাদের ক্ষতি করতে পারে । আমরা এলাকাবাসী অনেকটাই বিপদগ্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। আমরা মাদক মুক্ত সমাজ চাই। মাদকের ব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্তি চাই।
আমাদের এলাকার বরিশুর ২৩ ও ২৪, ব্রাহ্মণকিত্তা ১ ও ২ নম্বর এলাকার আশপাশে প্রতিদিনই ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক বেচাকেনা চলে। মাদারীপুর জামে মসজিদের পশ্চিম পাশে তৈরি হয়েছে স্থায়ী ‘ডিলিং পয়েন্ট যেখানে প্রতিদিন জড়ো হয় মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ রয়েছে, এলাকায় মাদকের মূলহোতা, আলম (৫৬) নিজের বাসাকে মাদকের হাব হিসেবে ব্যবহার করছে। তাকে সহায়তা করছে, রবিন (৪৫), অপু (৩৬) মাহবুব (৩৭) ও সোলেয়মান (৫২),জসিম (২৪), আরাফ (২১), মুহিত (৪৫), কিরামত ( ৩৫)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদারীপুরের স্থানীয় যুবক বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের প্রভাব ও হুমকির কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। সন্ধ্যার পর তাদের মাদক ব্যবসা চলে প্রকাশ্যেই, যেন প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়েই বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছেন এ অবৈধ কার্যক্রম। এমনকি তারা নিজেরা ও জানিয়েছেন তারা ধরা পড়লে জেলে যায় আর আসে। তাদের কাছে অনেকটা অসহায় আমরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় মুরুব্বি বলেন, ইতিপূর্বে কয়েক দফায় মাদকসহ অনেক আসামি মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস শেষে পুনরায় ব্যবসা চালিয়ে আসছে।মাদক মামলা ছাড়াও রয়েছে নারী নির্যাতন সহ একাধিক মামলা।বছরের পর বছর মাদক ব্যবসা চলমান রাখলেও ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না আমাদের এলাকার মানুষ । অনেকটা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই মাদারীপুর,বরিশুর এলাকায় চলছে মাদকের বাণিজ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় যুবক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মাদক কারবারিদের ভয়ে থাকি। তারা যদি জানতে পারে আমি আপনাকে তাদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছি তাহলে তারা আমার ক্ষতি করবে। এলাকায় মাদক কারবারির যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ।
থানায় বহুবার মাদক কারবারিদের নামের তালিকা দিলেও দু-এক জনকে আটক করে পুলিশ। আটকের তিন মাস পর আবার জেল থেকে বের হয়ে মাদক ব্যবসা শুরু করে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী আছে যাদের এক সময় দেখেছি ভাড়া বাসায় থাকত। কিন্তু এখন তারা নিজস্ব বাড়ির মালিক। তবে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জগন্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার সামাজিক বন্ধন, নিরাপত্তা ও নৈতিকতা সবকিছুই ভেঙে পড়েছে। মাদকের ছোবলে শিশু-কিশোরেরাও ঝুঁকির মুখে।
জরুরি ভিত্তিতে অভিযানের বিকল্প নাই। আর সময় নেই, এখনই অবিলম্বে এই চক্রের বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক, শক্তিশালী এবং ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী যদি সত্যিকারের সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসে, তাহলে এই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে এলাকাটিকে রক্ষা করা সম্ভব। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই দ্রুত প্রশাসনকে সক্রিয় করুন। নয়তো, স্থানীয় সমাজ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল হক ডাবলু বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি চালু রয়েছে। মাদারীপুর এলাকায় ইতিমধ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ কাজ করছে। তাছাড়া সাদা পোশাকে ও পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। কোন ভাবেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।
হ্যাপী