ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

মন্দিরের জায়গায় রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়ায় মামলা দায়ের, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ১৮:০০, ২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:০১, ২ জুলাই ২০২৫

মন্দিরের জায়গায় রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়ায় মামলা দায়ের, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

ছবি: জনকণ্ঠ

কাগজে-কলমে দেবত্তোর সম্পত্তি। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রায় দুইশো’ বছর ধরে পুজাঅর্চণা করে আসছে। অথচ, কালি মন্দিরের জায়গা থেকে নিজবাড়ি পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করেন মাদারীপুরের খোকন শরীফ নামে এক ব্যক্তি। এতে আপত্তি উঠলে ঘটনাস্থল পরির্দশন করে রাস্তা নির্মাণের প্রকল্পটি বাতিল করে পৌর কর্তৃপক্ষ। আর সেই ক্ষোভে এলাকাবাসীর নামে মামলা দিয়েছেন খোকন শরীফ।

তার দাবি, সরকারি কাজে বাধা দেয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। মাদারীপুর পৌরসভার মোবারকদি মৌজার কালিতলা সড়কের কোলঘেসে দুইশো’ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রীশ্রী কালি মন্দির। এই কালি মন্দিরের পেছনে রয়েছে শীতলা ও রক্ষা মায়ের মন্দির। যেখানে নিয়মিত পূজাঅর্চণা করে আসছে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সেই দেবত্তোর সম্পত্তিতে রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে আপত্তি ওঠে ।

স্থানীয়রা জানান, মোবারকদি গ্রামের বাসিন্দা হারুন অর রশিদের কাছ থেকে ২০০৬ সালের ১৮ জুন সদর সাব-রেজিষ্টার অফিসের ২৪৮৫ নং দলিলমূলে ২৬ শতাংশ জমি কিনেন শহরের কলেজ রোড এলাকার খোকন শরীফ। এরপর মন্দিরের জায়গার উপর দিয়ে তার বাড়ি পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি।

সর্বশেষ মাদারীপুর পৌরসভা থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৭৬ টাকার একটি প্রকল্পও অনুমোদন করিয়ে আনেন তিনি। টেন্ডারের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মন্দিরের জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করতে গেলে বাধা দেয় স্থানীয়রা। পরে এলাকাবাসীর নামে মামলা দিয়ে হয়রানীরও অভিযোগ ওঠে খোকনের বিরুদ্ধে।

সরকারের সর্বশেষ জরীপ বিআরএস কাগজে দেখা যায়, মাদারীপুর পৌরসভার মোবারকদি মৌজার ২১নং দাগে ১২ শতাংশ জমি মন্দিরের নামে রেকর্ড হয়েছে। যার মালিক জেলা প্রশাসক। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ব্যবহারের জন্য সুস্পষ্ট উল্লেখও রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা খোন্দকার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মন্দিরের জায়গায় রাস্তা নির্মাণ এটা কেউই মেনে নিতে চায় না। পথ ছাড়াই খোকন শরীফ এলাকায় হারুন অর রশিদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন। জমি কেনার আগে রাস্তা আছে কিনা সেটা যাচাই-বাছাই করা উচিৎ ছিল। মন্দিরের জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ এটি হিন্দুরের অধিকার খর্ব করা হয়। পুজা হয় এখানে, এই জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা কেউই সম্মতি দিবে না।

নুরু সরদার নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই মন্দিরের পাশেই আমার বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই দেখতেছি হিন্দুরা এখানে পুজা করে আসছে। এটি কালিতলা নামেই পরিচিত। এখানে কোন রাস্তা ছিল না। জোড়পূর্বক মন্দিরের জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নিতে চায় খোকন শরীফ। আমরা বাধা দেয়ায় আমাদের কারই কথা শুনে না।’

প্রতিবেশি মুনসুর শরীফ বলেন, ‘খোকন শরীফ জায়গা কেনার পর থেকেই ঝামেলা তৈরি করেছে। এর আগেও আমি ও আমার পরিবারের নামে একাধিক মামলা দিয়েছে। মামলায় আমরা জেলও খেটেছি। মন্দিরের পাশে আমার জমি। আমার জমি ও মন্দিরের জমির উপর দিয়ে খোকন শরীফ রাস্তা নির্মাণ করতে চায়, এটি বাধা দেয়ায় আবারও মামলা দিয়েছে। আমি একজন ইজিবাইক চালক, আমার আয়ের রোজগার দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু বার বার মামলার পেছনে খরচ বহন করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই মামলা আর হয়রানী থেকে প্রতিকার চাই।’

মোবারকদি কালিতলা সার্বজনীন কালি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন মন্ডল বলেন, ‘আমার পূর্ব পুরুষরা এই মন্দিরে কালি পূজা করে আসছে। আমি ও আমার প্রজন্মও করছি পূজাঅর্চনা। কিন্তু মন্দিরের জায়গায় রাস্তা নির্মাণ, এটি মন্দির কমিটি ও এলাকার লোকজন মেনে নিবে না। খোকন শরীফের যদি রাস্তা প্রয়োজন হয়, তিনি বিকল্প চিন্তা করতে পারেন। মন্দির-মসজিদ পবিত্র জায়গা, এমন জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কেউই মেনে নিবো না।’

খোকন শরীফের দাবি, ‘সরকারি জায়গায় রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়ায় মামলা দিয়েছেন তিনি। এটি তার অধিকার। নিজবাড়িতে প্রবেশের রাস্তা না থাকায় ঘটেছে এমন ঘটনা। আদালতে দায়েরকৃত মামলায় যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেটিই মেনে নিবেন। আর মন্দির কমিটির সাথে সমঝোতার চেষ্টা চলছে, তাদের আপত্তি থাকলে এটি নিয়ে আর সামনে আগাবেন না বলেও জানান তিনি।’

মাদারীপুর পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুল আলম জানান, ‘মন্দির কমিটির লিখিত অভিযোগের পর রাস্তা নির্মাণের টেন্ডার বাতিলও করা হয়েছে। মন্দিরের জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কোনভাবেই সম্ভব নয়। আগে বিষয়টি অবগত থাকলে সেখানে কোন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হতো না।’
 

সায়মা ইসলাম

×