
জুলাই বিপ্লবের শহীদ জাবের ইব্রাহীমের পিতা এক আবেগঘন সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করে বলেন, “গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মব জাস্টিস (গণপিটুনি বা গণআক্রমণ) ঘটেছে শেখ হাসিনার শাসনামলে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি আমাদের রাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।”
তিনি জানান, তাঁর ছেলে জাবের ইব্রাহীম মাত্র ৬ বছর বয়সে উত্তরা জুলাই বিপ্লবে শহীদ হন। “উত্তরার এপিবিএন-এর উত্তর দিক থেকে পুলিশের ছোড়া গুলিতেই আমার ছেলের মৃত্যু হয় ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটার দিকে,”—জানান তিনি।
শহীদ জাবেরের পিতা বলেন, “আমার ছেলের হাতে ছিল ‘We Want Justice’ লেখা একটি পোস্টার। কিন্তু আজও আমরা সেই ন্যায়বিচার পাইনি। মামলা করেছি, কিন্তু কোনো মামলারই ফলাফল এখনো দৃশ্যমান নয়। এখনো আমরা বিচারের আশায় অপেক্ষায় আছি।”
জুলাই অভ্যুত্থানে মব হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,
“গত আওয়ামী সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সবই অবৈধ ছিল। বিচারহীনতা আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে তারা রীতিমতো নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। গত ১৭ বছরের শাসনে মানুষকে ট্যাগ দিয়ে হত্যা করা, গুম, খুন, অত্যাচার, অবিচার—এসবই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিশ্বজিৎ দাসকে ‘ছাত্রশিবির’ ট্যাগ দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, অথচ সে ছিল একজন নিরীহ হিন্দু যুবক। এটাই ছিল প্রকৃত মব জাস্টিস।”
আপনি শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্র আপনাকে কতটুকু মূল্যায়ন করেছে?—এমন প্রশ্নে তিনি জুলাই সনদ প্রকাশের দাবি জানিয়ে বলেন,
“আমরা শহীদ পরিবার এখনো মূল্যায়নের কাতারে আসতে পারিনি। গত ১১ মাসেও জুলাই সনদ প্রকাশ হয়নি। আমরা চাই এই জুলাই মাসেই সনদ প্রকাশ করা হোক। এটি শুধু একটি কাগজ নয়—এটি আমাদের শহীদদের ন্যায্য স্বীকৃতি।”
সামনে জাতীয় নির্বাচন। এখনো বিচার পাননি—এ নিয়ে কী বলবেন?
“আমরা আরেকটি ‘২৪ দেখতে চাই না। একাত্তর দেখেছি, নব্বই দেখেছি, এখন আমরা চাই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে একটি সুন্দর রাষ্ট্র গড়া হোক। আগে বিচার, পরে নির্বাচন। বিচার ছাড়া সংস্কারহীন নির্বাচন মানি না। বিচার ও সংস্কারের পরেই হোক আগামী নির্বাচন।”
সবশেষে তিনি বলেন, “আমরা চাই জাতি যেন আর কখনো শহীদদের আত্মত্যাগ ভুলে না যায়। হাতে হাত মিলে, মুষ্টিবদ্ধভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি—এটাই শহীদ পরিবারের চাওয়া।”
সানজানা