ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্রমত্তা পদ্মার বুকে শত বছরের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

হৃদয় হোসাইন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ১০ জুন ২০২৫

প্রমত্তা পদ্মার বুকে শত বছরের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী থেকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা পর্যন্ত সংযুক্ত একটি রেলসেতু হলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত।

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ হাজার শ্রমিক দীর্ঘ ৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। ওই বছর ৪ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ট্রেন চলাচলের জন্য ব্রিজটি উদ্বোধন করে। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড র‍্যাবার্ট হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয় ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১,৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫,৮৯৪ ফুট বা ১.৮ কিলোমিটার। এর ওপর দুটি ব্রড-গেজ রেললাইন রয়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ভেড়ামারা ও ঈশ্বরদী উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। ভেড়ামারা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮.৫ কিমি উত্তরে এবং ঈশ্বরদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিমি দক্ষিণে পদ্মা নদীর ওপর সেতুটি অবস্থিত।

জানা যায়, ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন অবিভক্ত ভারত সরকার অসম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে পদ্মা নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব করে।

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে সেতু নির্মাণের অনুমোদন লাভের পর ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইলস সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে সেতু নির্মাণের সমীক্ষা শুরু হয়। ১৯১০-১১ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মার দুই তীরে সেতু রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ হয়। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে সেতুটির গাইড ব্যাংক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি সেতুর গার্ডার নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং গার্ডার নির্মাণের জন্য কূপ খনন করা হয়।

পদ্মা নদীর ওপর ৫,৮৯৪ ফুট বা ১.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি ১৫টি গার্ডার বা স্প্যান সম্বলিত। এটি ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইলসের পেশাদার নির্মাণশৈলীর স্বাক্ষর বহন করে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তর-দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি বিমান থেকে বোমা ফেলে ব্রিজের ১২ নম্বর স্প্যানটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পরে ১৯৭২ সালে একই নকশায় এই স্প্যানটি পুনঃস্থাপন করা হয়। এরপর থেকে এখনো অবধি ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের শতবর্ষ পূর্ণ হয়। একই স্থানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা— হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র—দেখার জন্য ঈদ, পূজা, সরকারি ছুটিসহ প্রতিদিন এখানে মানুষের ভিড় জমে। জেলার সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা।

এম.কে.

×