ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

আহসান মঞ্জিল: ঢাকার হৃদয়ে এক গর্বিত স্থাপত্য

ইস্পাহানী ইমরান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১ জুলাই ২০২৫

আহসান মঞ্জিল: ঢাকার হৃদয়ে এক গর্বিত স্থাপত্য

ছবিঃ সংগৃহীত

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে দাঁড়ানো আহসান মঞ্জিল আজও যেন নীরবে বলে চলেছে ঢাকা শহরের নবাবি অতীতের গল্প। এক সময়ের রাজকীয় প্রাসাদ, আর আজ তা পর্যটনকেন্দ্র—মাঝখানে বহু পরিবর্তন হলেও ইতিহাসের ভার বহন করে চলেছে এই স্থাপনা।

পুরান ঢাকার এই প্রাসাদটির নির্মাণ শুরু হয় ১৮৫৯ সালে এবং ১৮৭২ সালে নির্মাণ শেষ হয়। তৎকালীন নবাব খাজা আবদুল গনীর প্রাসাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র খাজা আহসানউল্লার নাম অনুসারে এর নামকরণ হয় “আহসান মঞ্জিল”।

নবাবি আমলে এটি ছিল ঢাকার অন্যতম সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। দেশি-বিদেশি বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব এ প্রাসাদে অতিথি হিসেবে এসেছেন, অংশ নিয়েছেন আলোচনা, উৎসব ও নানা ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডে।

আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যে ইউরোপীয় রেনেসাঁ শৈলীর পাশাপাশি মুঘল রীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মূল ভবনটি রং মহল (অফিসিয়াল অংশ) এবং আন্দার মহল (পারিবারিক অংশ)—এই দুটি ভাগে বিভক্ত। ভবনের গম্বুজ, উঁচু সিঁড়ি, ঝাড়বাতি ও কারুকার্যময় ছাদ প্রাসাদের রাজকীয়তা আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

চতুর্দিকে বিস্তৃত বাগান, নদীর পাড় ঘেঁষা প্রশস্ত উঠান এবং ঐতিহ্যবাহী প্রবেশপথ—সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের আওতাধীন একটি শাখা জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবনের ভেতরে ২৩টি গ্যালারিতে নবাব পরিবারের ব্যবহৃত আসবাবপত্র, ছবি, দলিল ও স্মারক উপস্থাপিত হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে ভিড় করেন।

তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের কিছু অংশে দেখা দিয়েছে অবহেলার চিহ্ন। দেয়ালে চিড়, ছাদে পানির দাগ, বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও পর্যটকদের মৌলিক সুবিধার অভাব স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। আশপাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দর্শনার্থীরা।

সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণকর্মীরা মনে করেন, আহসান মঞ্জিলের মতো স্থাপনাগুলো শুধু একটি এলাকার সম্পদ নয়—এগুলি জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল। সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে স্থান দেওয়া সম্ভব।

ইমরান

×