ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

জামালপুরের লাউচাপড়া, প্রকৃতির ছোঁয়ায় অবকাশের স্নিগ্ধতা

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১ জুলাই ২০২৫

জামালপুরের লাউচাপড়া, প্রকৃতির ছোঁয়ায় অবকাশের স্নিগ্ধতা

ছবিঃ সংগৃহীত

যান্ত্রিক শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে নিঃশব্দ প্রকৃতির কোলে আশ্রয় নেওয়ার স্বপ্ন অনেকেরই। সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ যেন জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার গারো পাহাড়ঘেঁষা এক নিভৃত গ্রাম লাউচাপড়া। সবুজ পাহাড়, বনভূমি, পাখির কলতান আর নির্মল বাতাসে ভরপুর এই অবকাশকেন্দ্রটি আজ হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য।

লাউচাপড়া অবকাশকেন্দ্রটি জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি যেতে চাইলে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ড্রীমল্যান্ড পরিবহনের বাসে জামালপুরের বকশিগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়া যায়। সাধারণ ভাড়া ৪৫০ টাকা, স্পেশাল সার্ভিসে ৬৫০ টাকা। বকশিগঞ্জ থেকে লাউচাপড়া অবকাশকেন্দ্র পর্যন্ত সিএনজিভাড়া ৬০ টাকা।

বকশিগঞ্জ থেকে অবকাশকেন্দ্রের যাত্রাপথে দু’পাশে সবুজের চাদরে মোড়া গারো পাহাড়ের হাতছানি যেন মন ভরিয়ে দেয় আগেই। পাহাড়ের গা ঘেঁষে আঁকাবাঁকা পথ আর পাখিদের ডাকে পথচলা হয়ে ওঠে অনন্য অভিজ্ঞতা। ঠিক যেন রঙতুলিতে আঁকা কোনো ছবির মতো নিস্তব্ধ এক প্রকৃতি।

লাউচাপড়া অবকাশের প্রধান আকর্ষণ বিশাল ওয়াচ টাওয়ারটি, যা পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে অপার সবুজের রাজ্যকে আরও নিকট করে তোলে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে চারপাশজুড়ে শুধুই গারো পাহাড়ের নিসর্গ। দূরে চোখ মেললেই দেখা যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঘন সবুজ পাহাড়শ্রেণি।

এছাড়াও এখানে রয়েছে পাথুরে পথ, কৃত্রিম লেক, গাছগাছালির ছায়া, পাহাড়ি ট্রেইল এবং শান্ত পরিবেশে বিশ্রামের উপযোগী জায়গা। শীতের মৌসুমে এখানে পিকনিক পার্টির ভিড় জমে, আবার নিরিবিলি দিনের বিকেলে লেকের ধারে বসে সময় কাটানোও এক অনন্য আনন্দ।

লাউচাপড়ার ঠিক পাশেই গারো জনগোষ্ঠীর বসবাস ছোট্ট একটি গ্রাম দিকলাকোনা। বাইশটি পরিবার নিয়ে গঠিত এই গ্রামে রয়েছে এক অনন্য সামাজিক বন্ধন ও ধর্মীয় ঐতিহ্য। বড়দিন, ইস্টার কিংবা ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে তারা আয়োজন করে নানা উৎসব। গ্রামপ্রধান প্রীতি সন সারমার আন্তরিকতা ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন অনেক পর্যটক।

বকশিগঞ্জের বেস্টমপাড়া গ্রামের রাজু আহম্মেদ বলেন, “লাউচাপড়া আমাদের গর্ব। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোকজন আসে। পিকনিক মৌসুমে তো এলাকার রাস্তাঘাট জমজমাট হয়ে যায়। এতে আমাদের স্থানীয় বাজারেও অনেক উপকার হচ্ছে। অনেকে এখন নিজ উদ্যোগে ছোটখাটো খাবারের দোকান দিয়েছে, কেউ আবার সিএনজি চালিয়ে আয় করছে। পর্যটকদের জন্য যদি আরও কিছু সুবিধা বাড়ানো যায়, যেমন ভালো টয়লেট ব্যবস্থা, খাবারের দোকান, নিরাপদ রাতযাপনের ব্যবস্থা—তাহলে লাউচাপড়া শুধু বকশিগঞ্জ নয়, পুরো জামালপুর জেলার জন্যই পরিচিতি বয়ে আনবে।”

লাউচাপড়ায় রাত কাটাতে চাইলে রয়েছে দুটি রেস্টহাউস: জেলা পরিষদের “পাহাড়িকা বাংলো” এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন “বনফুল রিসোর্ট”। জেলা পরিষদের বাংলোতে থাকতে হলে পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। বনফুল রিসোর্টে সাধারণ কক্ষের ভাড়া ১০০০ টাকা, আর তাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া ১৫০০ টাকা। প্রবেশে ফি ২০ টাকা, যানবাহনের জন্য নির্ধারিত পার্কিং ফি রয়েছে।

লাউচাপড়া কেবল একটি অবকাশকেন্দ্র নয়, এটি প্রকৃতির এক উদারতা—যেখানে সময় যেন ধীরে চলে। সবুজে ভরা পাহাড়, পাখির গান, নরম রোদ আর নির্জন বিকেল আপনাকে ছুঁয়ে যাবে নিঃশব্দে। প্রকৃতির সাথে এমন এক নিবিড় দেখা, যা শহরের কোলাহলে কখনোই মেলে না।

ইমরান

×