
একসময় শুধুই কৃষিভিত্তিক পরিচয়ে পরিচিত ঠাকুরগাঁও জেলা আজ তথ্য প্রযুক্তির হাত ধরে বদলে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে এই জেলার মানুষ এখন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জীবনকে আরও সহজ ও সম্ভাবনাময় করে তুলছে। শহরের গণ্ডি পেরিয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া পৌঁছে গেছে গ্রামের মাটিতেও।
ঠাকুরগাঁও শহরের মাহবুব হোসেন একজন তরুণ ফ্রিল্যান্সার। তিনি জানান, “আমি দুই বছর আগে ইউটিউবে ফ্রি কোর্স দেখে ওয়েব ডিজাইন শিখি। এখন বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাজ করি এবং এখান থেকেই আয় করছি প্রতি মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা।”
সদর উপজেলার জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “বাচ্চাদের সময় দেওয়ার পাশাপাশি আমি ঘরে বসে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করি। আগে যেখানে সংসারের খরচে কষ্ট ছিল, এখন সেখানে আমি পরিবারে সাহায্য করতে পারছি।”
গ্রামের মানুষরাও এখন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ভূমি সেবা, আবেদন ফরম পূরণ, প্রশংসাপত্র বা সরকারি তথ্য পেতে সক্ষম হচ্ছেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কৃষক আজিজুল হক বলেন, “আগে ছোটখাটো কাগজপত্রের জন্য শহরে যেতে হতো। এখন ইউনিয়নে গিয়েই অনলাইনে কাজ হয়ে যাচ্ছে। সময়, খরচ—দুটোই বাঁচছে।”
পীরগঞ্জের সালমা খাতুন নিজের তৈরি করা হস্তশিল্প পণ্য এখন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, “আমার তৈরি পণ্যের চাহিদা এখন ঠাকুরগাঁও ছাড়িয়ে ঢাকায়ও পৌঁছে গেছে। প্রযুক্তি না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।”
জেলার বিভিন্ন স্কুলে এখন ডিজিটাল ক্লাসরুম চালু হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিমা আক্তার বলে, “আমরা আগে শুধু বই দিয়ে পড়তাম, এখন মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে ভিডিও দেখে বুঝতে পারি, শেখা আরও সহজ হয়।”
ইন্টারনেট সংযোগ ও বিদ্যুৎ সমস্যা এখনো কিছু এলাকাকে পিছিয়ে রাখছে। তবে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আইটি সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করছে এ সমস্যা সমাধানে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি করে টেকনোলজি ক্লাব বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছি, যাতে তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তিগত দক্ষতায় আরও এগিয়ে যেতে পারে।”
ঠাকুরগাঁও এখন আর শুধুই ধান-পাটের জেলা নয়, এটি হয়ে উঠছে প্রযুক্তি নির্ভর ভবিষ্যতের একটি মডেল অঞ্চল। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তরুণ উদ্যোক্তা—সবার হাত ধরেই গড়ে উঠছে এক নতুন ঠাকুরগাঁও, যেখানে প্রযুক্তি মানেই সম্ভাবনার নাম।
মুমু