ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাখাইন করিডোর: বাংলাদেশের অবস্থান জানালেন ড. ইউনুস

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ২১ মে ২০২৫

রাখাইন করিডোর: বাংলাদেশের অবস্থান জানালেন ড. ইউনুস

রাখাইন রাজ্যে চলমান মানবিক সংকট ও সহায়তা প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মুখপাত্র ড. মো. ইউনুস। এক প্রশ্নোত্তরভিত্তিক আলোচনায় তিনি জানান, রাখাইনে ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে, যা বাংলাদেশকেও নতুন করে চাপে ফেলছে।

ড. ইউনুস বলেন, “রাখাইনে মানবিক সংকট এতটাই ভয়াবহ যে জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে। এই পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে নতুন করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পারে—এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এর বেশি সম্ভব নয়।”

তিনি জানান, রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব এসেছে, যেখানে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে পারে। তবে এখনও কোনো চুক্তি হয়নি, কারণ এমন সহায়তা কার্যকর করতে আন্তর্জাতিকভাবে কিছু মৌলিক শর্ত পূরণ জরুরি। যেমন—সহায়তা প্রদানে বাধাহীন প্রবেশাধিকার, সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করা এবং সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ রাখা।

আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে ড. ইউনুস বলেন, “মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ আরাকান বাহিনী নেওয়ার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও রাখাইনের অভ্যন্তরে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়তে এই যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ।”

জাতিসংঘের সহায়তায় বাংলাদেশের শর্ত হিসেবে তিনি বলেন, “সহায়তা যেন নিরপেক্ষ হয়, রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয় এবং সামরিক ব্যবহারে যেন কোনোভাবেই না যায়—এগুলো আমাদের মৌলিক অবস্থান। আরাকান বাহিনী রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এখন আমরা তাদের বাস্তব পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছি।”

নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রসঙ্গে ড. ইউনুস বলেন, “সহায়তা প্রদানকারীদের জন্য ল্যান্ডমাইন ও আইইডির মতো বিস্ফোরক ঝুঁকি রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই পরিকল্পনা করতে হবে।”

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশের অবস্থানও ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, “আরও বাস্তুচ্যুত মানুষকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। তাই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে আরাকান বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।”

সংক্ষেপে, ড. ইউনুস বলেন, রাখাইনে স্থিতিশীলতা ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই। এজন্য বাংলাদেশ মানবিক সহায়তার পক্ষে থাকলেও তা যেন সঠিক ও নিরাপদভাবে হয়—সে বিষয়েই জোর দিচ্ছে।

আলিফ

×