ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

বাঁশের তৈরি সামগ্রীতে জীবিকা নির্বাহ করছেন রহম আলী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালকিনি

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ৫ মে ২০২৫

বাঁশের তৈরি সামগ্রীতে জীবিকা নির্বাহ করছেন রহম আলী

বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করছেন রহম আলী

বর্ষা মৌসুম সামনে তাই গ্রামের লোকজন মাছ ধরার অন্যতম সামগ্রী বাঁশের তৈরি চালন ও চাইসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহ করছেন রীতিমতো। বিশেষ করে এর চাহিদা বর্ষা মৌসুম আসলে অনেকটাই বেড়ে যায়। অনেকে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই এসব প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য বিভিন্ন হাট-বাজারে ছুটে যান। তাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বাঁশের তৈরি সামগ্রী বানানোর কারিগররা। হাটে গেলে বাশের তৈরি এসব মাল ক্রয়-বিক্রয় এখন চোখে পড়ার মতো। 
এমনই একজন কারিগর মাদারীপুরের অবিভক্ত কালকিনি উপজেলার গোপালপুর এলাকার ধজ্বী গ্রামের রহম আলী। তার বয়স এখন ৬২ বছর। জটিল রোগে ও বয়সের ভারে তিনি আর আগের মতো কঠিন কাজ করতে পারেন না। তবে তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন। প্রায় ২০ বছর যাবত রহম আলী তার নিজ ঘরের বাড়ান্দায় বসে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মাছ ধরার চালন, চাই, মাটি কাটার ওড়া ও মুরগির খাঁচা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবং কি তিনি হাট-বাজারে বসেও ব্যস্ত থাকেনর এসব সামগ্রী তৈরির কাজে। তিনি বছরের ১২ মাসই এ কাজে ব্যস্ত থাকেন।

তবে বর্ষা আসলে চালন ও চাইসহ মাছ ধরার সামগ্রীর চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে অনেকটা বেড়ে যায়। তাই তিনি এ মৌসুমে এসব তৈরি জিনিসপত্র পাইকারি-খুচরা ও বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে-ঘুরে বিক্রি করে থাকেন। বাঁশই তার কাছে জীবিকা নির্বাহের অন্যতম হাতিয়ার। এ সমস্ত তৈরি করা জিনিসপত্র বাজারে বিক্রি করে যা আয় করেন তা দিয়ে চলে তার পুরো সংসার। তবে প্রথমে শুধু নিজে ব্যবহারের জন্য রহম আলী এগুলো তৈরি করতেন।

কিন্তু হাটে বাজারে এসব জিনিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংসারের ভরনপোষণ যোগান দিতে রহম আলীর কাছে এ শিল্পের গুরুত্ব বেড়েছে। শুধু এখন রহম আলী নয় কালকিনি ও ডাসার উপজেলার অনেক অঞ্চলের বহু মানুষের জীবনের তাগিদে দেখা গেছে এই পেশায়। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কালকিনি ও ডাসার উপজেলার গোপালপুর হাট, শশীকর হাট, সাহেবরামপুর হাট, ফাসিয়াতলা হাট ও ঘোষের হাটসহ প্রত্যন্তাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী সহ¯্রাধিক পরিবার মাছ ধরার চালন, চাই, মাটি কাটার ওড়া ও মুরগির খাঁচা তৈরির কাজের সঙ্গে জরিত রয়েছেন।

অল্প খরচে অধিক আয় বলে এখন বাঁশের তৈরি এ শিল্পকে বেছে নিয়েছে অনেকেই। জীবিকার তাগিদেই এই শিল্পকে বুকে আগলে রেখেছে তারা। অন্যের জমিতে মজুরি খাটলেও তাদের কাছে এ শিল্পের গুরুত্ব কম নয়। কারও-কারও ক্ষেত্রে এই শিল্প সংসারের বাড়তি আয়ের যোগান দেয়। অন্য কাজের চাইতে এ কাজই তাদের কাছে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের। 
স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় এখন বহাল তবিয়তে টিকে আছে বাঁশের তৈরি এ গ্রামীণ শিল্পটি। আজ সোমবার সকালে রহম আলী বলেন, আমার বর্তমান বয়স প্রায় ৬২ বছর। তাই আমি ভারি কাজ করতে পাড়ি না। যার কারণে আমি বাঁশ দিয়ে চালন, চাই ওড়া ও খাঁচাসহ অনেক ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করি। আমি প্রায় ২০ বছর যাবত এ কাজ করে আসছি। আর এ উপার্জনের টাকায় এখন আমার সংসার চলে। পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছি আমরা।

×