ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাকেরগঞ্জে জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ

সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ২১:২৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাকেরগঞ্জে জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ

তরমুজ ক্ষেত। ছবি: জনকণ্ঠ

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের ভূমিগুলো বছরের পর বছর অনাবাদি ও পতিত থাকলেও এই বছর প্রথম সেখানে তরমুজ চাষ হচ্ছে। জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলাতে এই বছর সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে। 

সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি ও বাজারজাতকরণে সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণ করে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের আলাউদ্দিন মৃধা, নিজাম ফিটার, মস্তফা, মুছা বয়াতি,শামিম, জুয়েল তরমুজ চাষিরা বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা,গারুড়িয়ার, ফরিদপুর, দুর্গাপাশা ইউনিয়নের নদীর চরাঞ্চলের জমি লিজ নিয়ে এই বছরে প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন।

জানা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে আগে কখনো তরমুজ চাষ হয়নি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে পটুয়াখালী জেলা থেকে আগত শতাধিক কৃষক পরীক্ষামূলক ভরপাশা ইউনিয়নের পায়রা নদীর চরে,গারুড়িয়ার ইউনিয়নের তুলাতলী নদীর চরে, ফরিদপুর উপজেলার কারখানা নদীর চরে ও দুর্গপাশা ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করেছেন। 

গলাচিপা আমখোলা এলাকা থেকে আসা পেশাদার তরমুজ চাষিরা এই বছর ভরপাশা দুধলমৌ গ্রামের পায়রা নদীর চরাঞ্চলে ২০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে বাকেরগঞ্জে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে ভিক্টর সুগার, ওশেন সুগার, ব্লাক বেরী ও দেশীয় জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চরাঞ্চলে যুগের পর যুগ অনাবাদি অবস্থায় থাকা জনমানবশূন্য বিস্তৃর্ণ ভূমি এখন তরমুজ চাষে সবুজে পরিণত হয়েছে। উপজেলার ভরপাশা,গারুড়িয়ার, ফরিদপুর, দুর্গপাশ ইউনিয়নে চরাঞ্চলে যতদূর চোখ যাবে, দেখা মেলবে তরমুজের আবাদ। 

ভরপাশা ইউনিয়নে তরমুজ চাষী আলাউদ্দিন মৃধা বলেন, বাকেরগঞ্জে এই বছর প্রথম উৎপাদিত তরমুজের আকার বড় হয়েছে। এখন মাঠে ৮/১০ কেজি  ওজনের তরমুজ রয়েছে। ১৫ দিন পরেই এই তরমুজ ক্ষেত থেকে উঠানো হবে। পাইকারদের মাধ্যমে এই তরমুজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাটবাজারে বিক্রয় করা হবে। 

তাছাড়া গত বছর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাকেরগঞ্জের চরাঞ্চলে উৎপাদিত তরমুজ রমজান মাস সামনে রেখে বাজারজাত করনের চাহিদা বাড়বে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বাকেরগঞ্জ  থেকে সংগৃহীত তরমুজ সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে খুব সহজে। 

পটুয়াখালী জেলা থেকে তরমুজ চাষ করতে আসা কৃষক খেতের মাঝেই ‘টংঘর’ স্থাপন করে থাকা-খাওয়া আর বিশ্রাম করছেন। চরাঞ্চলে তরমুজের মাঠে  রোদের উত্তাপ এড়িয়ে কৃষক এখন তরমুজ খেতে আগাছা ও পোকা দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পড়ন্ত বিকেলে পায়রা নদী থেকে পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে ড্রেনের মাধ্যমে শ্রমিকেরা বালতি দিয়ে তরমুজ খেতে পানি ছড়িয়ে দিচ্ছেন।  পরিবেশ ভালো হওয়ায় ৭ দিনের মধ্যে কিছু কিছু খেতে খুচরা পর্যায়ে তরমুজ বিক্রি শুরু হলেও আগামী ১৫ দিন পরে জমে উঠবে তরমুজের বেচাকেনা।

গলাচিপা আমখোলা থেকে আসা তরমুজ চাষি নিজাম ফিটার জানান, তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে পাঁচ মাসের জন্য প্রায় ৫০ একর জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। প্রতি একরে উৎপাদন ও পরিচর্যা ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি একর থেকে তিনি দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করেন।

তিনি আরও জানান, তরমুজ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই। সময় কম লাগে। লাভও ভালো। এই বছর তিনি প্রথম বাকেরগঞ্জের স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজ বিক্রি শেষে তিনি আবার নিজ এলাকায় চলে যাবেন। তবে সঠিক সময়ে সার ও ঔষধ পেলে ফলন আরো ভালো হতো। তরমুজ চাষিরা অভিযোগ করে বলেন সরকারি কোন সহযোগিতা আমরা পাই না। যদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের উৎপাদিত তরমুজ বিদেশে বিক্রি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তারা সরকারের উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন। 

বাকেরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মুছা ইবনে সাঈদ জানান, এই বছর প্রথম চরাঞ্চলে তরমুজের চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে আরো বেশি তরমুজ আবাদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এসআর

×