ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

দারুণ প্রস্তুতি, লক্ষ্য এশিয়া কাপ

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০১:২৫, ২৬ জুলাই ২০২৫

দারুণ প্রস্তুতি, লক্ষ্য এশিয়া কাপ

.

এক সপ্তাহের মধ্যে দু-দুটি ইতিহাস; ১৬ জুলাই কলম্বোতে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ (২-১) জয়ের পর ২২ জুলাই মিরপুরে পাকিস্তান-বধ (২-১)। যদিও নিজ আঙিনায় শেষটা ভাল হয়নি। একাদশে পাঁচ পরিবর্তন এনে শেষ ম্যাচে হারতে হয়েছে বড় ব্যবধানে। এর আগে সংযুক্ত আমিরাতে (২-১) লজ্জার হারের পর পাকিস্তানে (৩-০ তে হার) ভরাডুবি সঙ্গী করে শ্রীলঙ্কায় দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। টানা দেড় মাস স্পোর্টিং উইকেটে খেলে আসা বাংলাদেশ শেরেবাংলার স্লো-কন্ডিশনে কিভাবে মানিয়ে নেয়, সেটিই ছিল বড় শঙ্কা। যেটা দারুণভাবে উৎরে গেছেন তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, মুস্তাফিজুর রহমনার। যদিও মিরপুরের উইকেট নিয়ে প্রশ্নটা রয়েই গেছে। প্রশ্ন আছে দল গোছানো নিয়েও। কারণ আগামি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপের আগে এটিই বাংলাদেশের শেষ সিরিজ। তার আগে নিজেদের আরও ভালভাবে গুছিয়ে নিতে অধিনায়ক লিটনও আরেকটি দিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে চাইছেন। বোর্ডও চেষ্টা করে যাচ্ছে। 
আগামী বছর ভারত ও শ্রীলঙ্কায় হবে টি২০ বিশ্বকাপের দশম  আসর। ফলে সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপও হবে টি২০ ফরম্যাটে। লিটনের নেতৃত্বে এ বছর ১২টি টি২০ খেলে ৫টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের আগে ওপেনিংয়ে মোটামুটি একটি সমন্বয় দাঁড়িয়ে গেছে। সৌম্য সরকারকে সরিয়ে এ বছর প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে পারভেজ হোসেন ইমনকে। ইমন আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। শারজায় আমিরাতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি দিয়ে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন। ওপেনিংয়ে ইমনের সঙ্গী তানজিদ হাসান তামিমও ছিলেন উজ্জ্বল। সেঞ্চুরি না পেলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ সিরিজের শেষ ম্যাচে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস খেলে সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। তাঁদের ‘ইনটেন্ট’, শট খেলার ধরন বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে তৃতীয় ওপেনার হিসেবে সুযোগ পাওয়া নাঈম শেখ অবশ্য ব্যর্থÑতিন ম্যাচে তাঁর রান ৩২, ৩ ও ১০। ইমন-তানজিদে ওপেনিং সমন্বয় পেলেও বিকল্প ওপেনার নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। মিডল অর্ডারে নিয়মিত ব্যাট করেছেন অধিনায়ক লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, কখনো নাজমুল হোসেন শান্তও। শান্ত অবশ্য টি২০ দল থেকে একরকম ছিটকেই গেছেন। হৃদয়ের কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। ২০২৪ সালে ২২ ইনিংসে তাঁর রান ছিল ৪৯৩, স্ট্রাইকরেট ছিল ১৩০। ২০২৫ সালে ১১ ইনিংসে হৃদয় রান করেছেন ২৪৬, স্ট্রাইকরেট ১১৪। স্ট্রাইকরেট ও ধারাবাহিকতায় লিটনও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। 
গত ১২ ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ ২৭২ রান, স্ট্রাইকরেট ১২৬। ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে খেলা ৭৬ রানের ইনিংসটা তাঁর একমাত্র ভালো ইনিংস। যেখানে বেশি স্বস্তি, সেটা হলো ফিনিশিং বিভাগ। জাকের আলী ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী দারুণ ছন্দে রয়েছেন। ৬ ও ৭ নম্বরে নেমে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার সামর্থ্য রেখেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে জাকেরের ৫৫ রান (৪৮ বলে, ৫টি ছক্কা) বাংলাদেশকে জয় এনে দেয়। দুজনে মিলে শেষ দিকের চাপ সামলে দ্রুত রান তোলার সামর্থ্য দেখিয়েছেন। পেস আক্রমণ নিয়ে আপাতত টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তামুক্ত থাকতে পারে। মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হয়েছে। বিশেষ নজর ছিল তরুণ বোলারদের ওপর। সেখানে সবচেয়ে বড় স্বস্তির নাম শরিফুল ইসলামের পারফরম্যান্স। ৮ ইনিংসে ১২ উইকেট নিয়ে তিনি পাকিস্তান সিরিজে বাংলাদেশের সেরা বোলার। তানজিম সাকিবও খারাপ করেননি। মুস্তাফিজ, তাসকিন, শরিফুল, সাইফউদ্দিন আর তানজিমকে নিয়েই পেস আক্রমণ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। বিশেষ নজর কেড়েছেন স্পিনার শেখ মেহেদি হাসান। সাইফউদ্দিনের প্রত্যাবর্তনও চোখে পড়ার মতো। 
প্রধান নির্বাচক গাজী আশারাফ এরই মধ্যে জানিয়েছেন এশিয়া কাপের আগে দল আর খুব একটা নড়াচড়া করবেন না। তার মানে চোটাঘাত কিংবা বিশেষ কিছু না হলে এই পাকিস্তান সিরিজের স্কোয়াড নিয়েই এশিয়া কাপে যেতে পারে বাংলাদেশ। পরিবর্তন হলেও বড় জোর দু-এক জায়গায় হতে পারে। লিটন জানিয়েছেন আমিরাত এবং পাকিস্তানে হারের পর শ্রীলঙ্কায় এবং ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে কন্ডিশন অনুযায়ী প্ল্যান সাজিয়ে ভাল ফল এসেছে। পাশাপাশি এশিয়া কাপের আগে আরেকটি সিরিজ খেলতে পারলে আরও ভাল হবে বলেও মনে করেন টি২০ অধিনায়ক। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) চেষ্টা করে যাচ্ছে। আগস্টে ভারত সিরিজ স্থগিত হওয়ায় আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি সিরিজ খেলার কথা ভাবছে বিসিবি। আর পাকিস্তান চাইছে তাদের মাটিতে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করতে। ফলে একটা সিরিজ যে হচ্ছে, সেটি ধরেই নেওয়া যায়।

প্যানেল

×