
ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণকারী চার অধিনায়ক
শুধু সমীহ নয়, বাংলাদেশকে প্রচণ্ড সমীহ করছে আসরের তিন প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটান। কারণটা অনুমেয়। একে তো বয়সভিত্তিক সাফের ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন বাংলার কিশোরীরা, তার ওপর অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারসহ সদ্য নেপাল থেকে এএফসি এশিয়ান কাপের মূল মঞ্চের টিকিট নিয়ে ফেরা জাতীয় দলের অটজনই আছেন এখানে। অপর সাত জন হলেন মোসাম্মৎ সাগরিকা, মুনকি আক্তার, স্বপ্না রানী, স্বর্ণা রানী মণ্ডল, জয়নব বিবি রিতা, মিলি আক্তার ও উমহেলা মারমা।
ঢাকার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে আজ পর্দা উঠছে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের। বৃহস্পতিবার স্থানীয় এক হোটেলে ট্রফি নিয়ে হয়েছে ফটোসেশন। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে প্রত্যয় ঝরেছে বয়সভিত্তিক চার দলের অধিনায়ক ও কোচের কণ্ঠে। ২০১৮ সালে প্রথম অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সভিত্তিক পর্যায়ে হয়েছিল নারী সাফ। সেবার বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন। এরপর কখনো অনূর্ধ্ব-১৯, কখনো অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে ভারত দুবার চ্যাম্পিয়ন আর একবার রানার্সআপ তারা।
তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশে আসেনি ভারত। এবার নিজেদের মাঠে আবারও সেই মুকুট ধরে রাখার অভিযান। টুর্নমেন্ট পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে ভুটানের কোচ থানকা মায়া ঘালি শুরুতেই বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেওয়ায়। লঙ্কান কোচ শ্রীনাথা কুমারা সরাসরি বাংলাদেশকে এই টুর্নামেন্টের ফেভারিট ও শিরোপার দাবিদার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সফরকারী তিন দলের মধ্যে নেপালই শুধু শিরোপার আশা ব্যক্ত করলেও বাংলাদেশের প্রতি সমীহ প্রকাশ করেছেন কোচ ইয়াম প্রসাদ গুরুং।
নেপাল এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দুর্দান্ত লড়াই করেছে। টাইব্রেকারে তারা হেরে যাওয়ায় এশিয়ান কাপে খেলতে পারছে না। নেপাল সিনিয়র দলে খেলা কাউকে অনূর্ধ্ব-২০ স্কোয়াডে রাখেনি। নেপালের কোচ প্রসাদ গুরুং বলেন,‘আমাদের এই দলে সিনিয়র দলের কেউ নেই। এখান থেকে খেলে খেলোয়াড়রা প্রস্তুত হয়ে জাতীয় দলে যাবে।’ বাংলাদেশ ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন। ২০২৩ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। শামসুন্নাহার জুনিয়রদের দারুণ পারফরম্যান্সের সৌজন্যে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা মুকুট পরে তারা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পরিষ্কার ফেভারিট।
শ্রীলঙ্কান কোচ শ্রীনাথা বলেন,‘সত্যিকার অর্থে আমাদের বাংলাদেশের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক খেলার সামর্থ্য নেই। আমাদের দলের অনেক খেলোয়াড় অ-১৮ বয়সী। অভিজ্ঞতার জন্যই আমাদের এই টুর্নামেন্টে আসা।’ লঙ্কান পুরুষ ফুটবল দলে প্রবাসী ফুটবলার রয়েছেন অনেকে। নারী ফুটবল দলে তেমন কেউ নেই অবশ্য। ভুটানে নারী ফুটবল লিগ চলছে। অনূর্ধ্ব-২০ দলে থাকা প্রত্যেকে সেখানে খেলছেন। বাংলাদেশের দশ জন সিনিয়র ফুটবলার ভুটান লিগে খেলছেন। দলটির অধিনায়ক শেদু তেশরিং বলেন,‘বাংলাদেশের মারিয়া মান্ডার সঙ্গে আমার খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে খুব ভালো গতিশীল খেলোয়াড়।’
শ্রীলঙ্কার মতো ভুটানও মূলত অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এসেছে। এক সময় দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে ভারত ও নেপাল শ্রেষ্ঠত্বের জন্য লড়ত। এই টুর্নামেন্টে ভারত না থাকায় বাংলাদেশ-নেপাল লড়াই হবে। নেপাল মাস দেড়েকের প্রস্তুতি নিলেও শিরোপায় নজর কোচ প্রসাদ গুরুংয়ের,‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। বাংলাদেশ অবশ্যই কঠিন প্রতিপক্ষ, এরপরও আমরা আশাবাদী। এবার ঘাসের মাঠে খেলা হচ্ছে, বিগত সময়ে বাংলাদেশে টার্ফে (কমলাপুর স্টেডিয়ামে) হয়েছিল। আমরা লড়াই করতে প্রস্তুত।’
আগেরবার রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে প্রথম পর্বে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দলকে নিয়ে হয়েছিল ফাইনাল ম্যাচ। তবে এবার নতুন নিয়ম ডাবল রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতি। ফলে নেই কোনো ফাইনাল। প্রত্যেক দল নিজেদের মধ্যে দুবার করে মুখোমুখি হবে। ৬টি করে ম্যাচ খেলবে প্রতিটি দল। যে দল সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জন করবে তারাই হবে চ্যাম্পিয়ন। পুরো টুর্নামেন্ট বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়। গতবার ভারত থাকলেও এবার পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশে দল পাঠায়নি তারা। সুযোগ পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১৩ জুলাই নেপাল, ১৫ ও ১৭ জুলাই ভুটান, ১৯ জুলাই শ্রীলঙ্কা ও ২১ জুলাই নেপালের সঙ্গে ফিরতে দেখা হবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলের। উদ্বোধনী ম্যাচ ও ১৫ জুলাই ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচটি শুরু হবে বেলা ৩টা থেকে। বাকি চারটি ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।