
ছবি: সংগৃহীত
ফ্যাবিয়ান রুইজের জোড়া গোলের মাধ্যমে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) বুধবার ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে। এই জয়ে চেলসির বিপক্ষে ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছে ফরাসি ক্লাবটি।
নিউইয়র্কের বাইরে মেটলাইফ স্টেডিয়ামে কিলিয়ান এমবাপ্পের সাবেক ক্লাব পুনর্মিলনীতে পিএসজির এমন জয়ে, সাদা জার্সিতে ভরা ৭৭ হাজার ৫৪২ দর্শকের গ্যালারি নীরব হয়ে পড়ে। ম্যাচের শুরুর ৯ মিনিটের মধ্যেই রুইজ ও উসমান ডেম্বেলে গোল করে রিয়ালকে চমকে দেন তারা।
স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রুইজ প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি গোল করেন এবং ম্যাচের শেষ দিকে গনসালো রামোস চতুর্থ গোলটি করেন। লুইস এনরিকের দল ফিফার নতুন এই প্রতিযোগিতায় এখন শিরোপা জয়ের এক ধাপ দূরে।
রবিবার চেলসির বিপক্ষে জয় পেলে পিএসজির জন্য এটি হবে অনন্য সাফল্যের বছর। মে মাসে ফ্রেঞ্চ লিগ শিরোপা ও প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর এবার বিশ্বকাপ শিরোপার দারপ্রান্তে তারা।
এর আগে ইন্টার মিলানকে ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে রেকর্ড ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে পিএসজি শুরু থেকেই ক্লাব বিশ্বকাপে দাপট দেখায়। এরপর আতলেতিকো মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে হারানোর পর রিয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে দেওয়ার কাজটাও সহজেই সেরেছে তারা।
পিএসজির সুনির্দিষ্ট খেলা ছিল রিয়ালের বিপরীতে। জাভি আলোনসোর অধীনে নতুনভাবে গড়ে ওঠা রিয়াল পুরো ম্যাচেই এলোমেলো দেখিয়েছে।
এদিকে এমবাপ্পেও এই ম্যাচে কোনো প্রভাবই রাখতে পারেননি। এক বছর আগে পিএসজি ছেড়ে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে খেললেও পুরনো জাদু ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন তিনি।
পিএসজির হয়ে ২৫৬টি গোল করা এমবাপ্পে এমন পরাজয়ের মুখোমুখি হতে চাননি। প্রথমবারের মতো ৩২ দলের ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে নিজেদের ১৫টি ইউরোপিয়ান কাপের সঙ্গে আরেকটি বড় শিরোপা যোগ করার আশা ছিল রিয়ালের, কিন্তু পিএসজির কাছে পাত্তা পেল না তারা।
এমবাপ্পে ছাড়া আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে পিএসজি। পিএসজি এখন এতটাই পরিণত দল যে, চেলসির বিপক্ষে হারলে সেটাই এখন বড় চমক হবে।
বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে লাল কার্ডের কারণে নিষিদ্ধ হওয়া সেন্টার-ব্যাক উইলিয়ান পাচোকে ছাড়াই খেলতে নামে পিএসজি। কিন্তু তাতেও কোনো সমস্যা হয়নি। লুকাস বেরালদো অনায়াসেই রক্ষণ সামলান, বাকি মূল একাদশও ছিল পূর্ণ শক্তিতে।
রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষেও সমস্যা কম ছিল না। সেন্টার-ব্যাক ডিন হুইজসেন নিষিদ্ধ ছিলেন, সঙ্গে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের অনুপস্থিতি আরও বড় ধাক্কা দেয়।
এমবাপ্পে গ্রুপ পর্বে অসুস্থতার কারণে খেলতে পারেননি, তবে প্রথম একাদশে ফিরলেও তরুণ ফরোয়ার্ড গঞ্জালো গার্সিয়াও ছিলেন মূল একাদশে।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে নিয়ে রিয়ালের আক্রমণভাগ ছিল পূর্ণ, কিন্তু পিএসজির দাপটে তারা পুরোপুরি হারিয়ে যায়।
ম্যাচের শুরুতেই দুইবার অসাধারণ সেভ করেন রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া। প্রথমবার ফ্যাবিয়ান রুইজের শট এবং দ্বিতীয়বার নুনো মেন্ডেসের কাছাকাছি শট রুখে দেন তিনি।
তবু ষষ্ঠ মিনিটেই পিএসজির গোল ঠেকাতে পারেননি কর্তোয়া। রাউল আসেনসিওর বাজে রক্ষণ সামলানোর সুযোগ নিয়ে ডেম্বেলে বল পেয়ে যান। কর্তোয়া তার শট ঠেকালেও ফিরতি বলে গোল করেন রুইজ।
এর মাত্র তিন মিনিট পর আবারও গোল! রিয়ালের ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগার জুড বেলিংহামের সহজ পাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হলে সুযোগ লুফে নেন ডেম্বেলে। দারুণ ড্রিবলিংয়ে ঢুকে গিয়ে নিচু শটে বল জড়ান জালে।
এটি ছিল ডেম্বেলের এই মৌসুমের ৩৪তম গোল। আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত এই ফরোয়ার্ড দুর্দান্ত খেলায় ব্যালন ডি’অর দৌড়েও শক্ত প্রতিযোগী হয়ে উঠেছেন।
প্রথমার্ধের মাঝপথেই পিএসজি তৃতীয় গোল করে রিয়ালকে আরও বড় লজ্জায় ফেলে। এমবাপ্পের একটি শট ডিফ্লেক্ট হয়ে সহজে ধরেন পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুমা। এরপর রিয়ালের আর কোনো খেলোয়াড় বলের স্পর্শই পাননি, এর মধ্যেই তারা আবার নিজেদের জালে বল দেখতে পান।
ডেম্বেলে বল বাড়ান হাকিমির উদ্দেশ্যে, যিনি রুইজের কাছে পাস দেন। রুইজ এক টাচে বল ধরে ফেদেরিকো ভালভার্দেকে কাটিয়ে নিখুঁত ফিনিশ করেন।
খভিচা কভারাতসখেলিয়া প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই চতুর্থ গোলের সুযোগ মিস করেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দেজিরে দোয়েও একটি গোল করেছিলেন, তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয়।
রিয়ালের পক্ষে ফিরে আসার কোনো সুযোগই ছিল না। জাবি আলোনসো ঘণ্টা পেরোনোর পরপরই জুড বেলিংহাম ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে তুলে নেন—পরাজয় মেনে নেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত।
শেষ দিকে, ৮৭ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় ব্র্যাডলি বারকোলার পাস থেকে বল ধরে গনসালো রামোস চতুর্থ গোলটি করেন, ম্যাচের মোড় পুরোপুরি শেষ করে দেন।
আবির