ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোন্ ভুলের খেসারত দিল বাংলাদেশ?

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০১:০৯, ১২ জুন ২০২৫

কোন্ ভুলের খেসারত দিল বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে আর কোনো ম্যাচ নিয়ে এত আলোড়ন হয়নি। অকল্পনীয় হাইপ বা উত্তাপ দেখা গেছে এএফসি এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যকার ম্যাচ ঘিরে। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত খেলায় আধিপত্য বিস্তার করে খেলেও গোল মিসের মহড়া আর কৌশলগত ভুলের কারণে ২-১ গোলে হারতে হয়েছে হামজা চৌধুরী-সামিত সোমদের। 
টানা ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশের খেলাপাগল মানুষ ক্রিকেটে ঝুঁকে পড়েছিল। সেখান থেকে প্রবাসী তারকাদের ভিড়ে চোখের নিমিষে পুরো জাতি রক্তের সঙ্গে মিশে থাকা ফুটবলে ফিরেছে। ঢাকা স্টেডিয়ামে যেন ‘ঈদ আনন্দ’ হয়েছে ফুটবলামোদীদের মাঝে। উত্তাপ-উত্তেজনার এতটুকু কমতি ছিল না। মাঠের খেলাতেও ছিল মুন্সিয়ানা। কিন্তু বেশ কিছু ভুলের কারণে ড্র’র স্বস্তি নিয়েও মাঠ ছাড়া হয়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। কেন এমন হলো? কোন্ ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে? দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এখন এসব নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
বাংলাভিশন টেলিভিশনের ক্রীড়া সম্পাদক সাইফুর রহমান চৌধুরী ফেসবুক পোস্টে  লেখেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে আর কোনো ম্যাচ এত আলোড়ন তোলেনি। অকল্পনীয় হাইপ উঠেছিল। বাফুফে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ৬ প্রবাসী ফুটবলারকে নিয়ে দল গঠন করা হলো। দর্শকরা মাঠে ছুটে গেছেন। টিকিট নিয়ে হাহাকার। অনেক ভিআইপি দর্শক এবং নারী সমর্থক খেলা দেখেছেন। কিন্তু যত গর্জন হলো তত বর্ষণ হলো না। হতাশ বাফুফে, হতাশ বাংলাদেশ। লাল-সবুজের ফুটবলে টানেলের শেষে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। ৫০ লাখ মানুষের দেশ সিঙ্গাপুর, ২০ কোটি মানুষের দেশকে বিরাট লজ্জা উপহার দিল।’

মোহম্মদ জান-ই-আলম নামের প্রবাসী সাংবাদিক অবশ্য এখনই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না। তিনি আলোর রেখাই দেখতে পাচ্ছেন, ‘আমরা এবার পারিনি, ভবিষ্যতে হবে। দ্বিতীয়ার্ধে হামজাকে মনে হয়েছে দলের ইঞ্জিন। উপরে-নিচে সর্বত্র দৌড়েছেন। একমাত্র গোলটা তার ডিফেন্সচেরা  দুর্দান্ত পাসে। গোলপোস্টের নিচে মিতুল মারমা নিজের সেরাটা দিতে পারেনি। প্রতিদিন সেটা সম্ভবও নয়। কদিন আগে ভাইকে হারানোর পরও মিতুল মাঠে নেমেছে, এটাও অনেক। আমাদের স্ট্রাইকার মানের দিক থেকে খুবই নিচু। এই জায়গার ঘাটতি দূর করতেই হবে। ফিনিশারের অভাবে অনেক সুযোগ নষ্ট হয়েছে। ম্যাচজুড়ে অনেকবার এলোমেলো ফুটবল দেখেছি। কোথায় মারলেন, কেন মারলেনÑউত্তর পাইনি অনেক পাস, শট দেখে।

তবে অনেক বছর পর পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে ফুটবল ও ফুটবলাররা। স্টেডিয়ামের গ্যালারি দর্শকে পূর্ণ, মাঠে সমুদ্রের গর্জন, দেশজুড়েও অকুণ্ঠ সমর্থনÑপ্রত্যাশার এমন চাপে কিছুটা খেই হারানো স্বাভাবিক। তাই সিঙ্গাপুরের কাছে হারলেও ম্যাচটা ভালো লেগেছে, উপভোগ করেছি। বাংলাদেশ ফুটবল দলের খেলায় অনেক উন্নতি চোখে পড়েছে। শুভকামনা বাংলাদেশ দলের জন্য।’ তারকা শূটার শারমিন আক্তার রতœা লিখেছেন, দিনের পর দিন একটা অন্য খেলায় বাঙালি তার ইমোশন, ক্রেজ নষ্ট করছে! ২৮ বছর ধরে সে কি মাতামাতি। অথচ মাত্র ১০ দিনের ফুটবল ক্রেজে এক জিত, এক হার! এখনই ক্রিকেটের ফ্যান বেজে ধাক্কার আশঙ্কায় কাউকে কাউকে এই ফলাফলে হতাশ দেখছি। হতাশ না হয়ে পিঠ চাপড়িয়ে বলুন, শাবাশ বাংলাদেশ ফুটবল।

আমি শিওর, এই ফুটবল, ক্রিকেটের মতো সমর্থন আর ফ্যাসিলেটেড হলে ২৮ বছর লাগবে না কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে।’ মোহাম্মদ শফিকুর রহমান নামের এক ক্রীড়াপ্রেমী লিখেন, ‘দলীয় সমন্বয় এবং টিম স্পিরিট আসতে আরও কিছুদিন এক সঙ্গে থেকে কিছু ম্যাচ খেলা দরকার। হারলেও লড়াকু মানসিকতার জন্য ভালো লেগেছে। রেফারির কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের বিরুদ্ধে গেছে। তারপরও  উপভোগ্য একটা  ম্যাচ উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আগামীতে আরও ভালো রেজাল্ট প্রত্যাশা করি। সঙ্গেই আছি।’
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যাপক মাসুদ রানা সাইফুল হারের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন, ‘হামজা, সামিত সোম, ফাহমিদুলদের একসঙ্গে আরও কিছুদিন খেলতে হবে, তবেই সমন্বয় ঠিকঠাক হবে। দলে বিশ্বমানের কোচিং স্টাফ প্রয়োজন, যদি ভালো রেজাল্ট করতে হয়। এই ধরনের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট এবং কোচ দিয়ে আপনি বড়োজোর ভুটানের সঙ্গে জিততে পারবেন কিন্তু ভারত, হংকং কিংবা সিঙ্গাপুর এদের সঙ্গে জেতা কঠিন।
জাস্ট প্লেয়ার নামাতে যে সমন্বয়হীনতা তাতে চরম অপেশাদারিত্ব ফুটে উঠেছে। কোথায়-কোন্ প্লেয়ার খেলবে তার পরিকল্পনাও এলোমেলো। একটা পরাজয় শুধু একটা পরাজয় নয়, অনেক ভুল সংশোধন করার সুযোগ এনে দেয়। পরবর্তী ম্যাচের আগে সিন্ডিকেট মুক্ত বাংলাদেশ ফুটবল দল তৈরি করতে হবে। তবুও দিনশেষে বলব ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। সঠিক পরিকল্পনায় নতুন এই বাংলাদেশ অনবদ্য-অসাধারণ হতে পারে দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়ায়।’

×