
.
গত বছর দুবাইয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট গৌরবময় সাফল্য পায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হাত দিয়ে। স্বাগতিক আরব আমিরাতকে বিধ্বস্ত করে প্রথমবার যুব এশিয়া কাপ জয় করে। এখানেই বাংলাদেশ জাতীয় দল ২০১৮ সালে ভারতের কাছে হেরে এশিয়ার সেরা হতে পারেনি। পরের বছর কলম্বোয় ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কাছে হাতের মুঠোয় আসা জয় হাতছাড়া করে রানার্সআপ হয় বাংলাদেশের যুবারা। সেই দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বড়দের আক্ষেপ, ৫ বছর আগে কলম্বোয় নিজেদের হতাশা ভুলেছে আজিজুল হাকিম তামিমের দল। ৮ বারের যুব এশিয়া কাপ শিরোপাধারী ভারতীয় যুবাদের ৫৯ রানে বিধ্বস্ত করে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। রবিবার নিজেদের জন্য পয়মন্ত হয়ে ওঠা দুবাইয়ে আগে ব্যাট করে টাইগার যুবারা ৪৯.১ ওভারে মাত্র ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায়। কিন্তু তারা ছিলেন প্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী। স্বল্প পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশের বোলাররা আক্রমণাত্মক মেজাজে বোলিং আর বারুদের মতো জ্বলে উঠে ৩৫.২ ওভারে ভারতের ইনিংস থামিয়ে দেয় ১৩৯ রানে। টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করে মৌলভিবাজারের পেসার ইকবাল হোসেন ইমন হয়েছে আসরের সেরা খেলোয়াড় এবং ফাইনালেরও ম্যাচসেরা।
প্রত্যয় আর আত্মবিশ্বাস আগেই ছিল। দলের প্রধান কোচ ২০১৯ সালের যুব এশিয়া কাপ রানার্সআপ ও ২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপ জেতানো নাভিদ নাওয়াজ। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আছেন গতবার এশিয়া কাপ জেতা ৫ ক্রিকেটার। তাই শিরোপা ধরে রাখার বড় আত্মবিশ্বাস নিয়েই এবার এশিয়া কাপ শুরু করে টাইগার যুবারা। তবে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু সেমিফাইনালে ফেভারিট শ্রীলঙ্কাকে বিধ্বস্ত করে ফাইনাল নিশ্চিতের পর আবার শিরোপা স্বপ্ন বাস্তব করার স্পৃহা জেগে ওঠে। কিন্তু রবিবার ফাইনালে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে তেমন সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে মাত্র ১ উইকেটে ৪১ রান তুলতে পারলেও ৬৬ রানের মধ্যেই আরও দুই উইকেট খুইয়েছে তারা। ইনফর্ম অধিনায়ক আজিজুল ২৮ বলে ১৬, দুই ওপেনার জাওয়াদ আবরার ৩৫ বলে ২০ ও কালাম সিদ্দিকী ১ রানে বিদায় নিয়েছেন। তবে এরপর শিহাব জেমস ও রিজন হোসেন ৬২ রানের জুটি গড়েছেন। রানের গতি যদিও বাড়েনি। শিহাব ৬৭ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ৪০ রানে বিদায় নেন। পরে রিজনও ৬৫ বলে ৩ চারে ৪৭ রানে আউট হন। শেষ পর্যন্ত ৫ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ১৯৮ রানে। উইকেটরক্ষক ব্যাটার ফরিদ হাসান ৪৯ বলে ৩ চারে ৩৯ রান করেন। ২টি করে উইকেট নেন ইউধাজিত গুহ, চেতন শর্মা ও হার্দিক রাজ।
পুঁজি স্বল্প হলেও আশা হারায়নি বাংলাদেশের যুবারা। সেটি ম্যাচ শেষে অধিনায়ক আজিজুল বলেছেন, অল্প রানে আটকে গেলেও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি জানতাম, আমার বোলাররা কী করতে পারে। সেটাই করেছেন বোলাররা। বাংলাদেশের ৪ পেসার মারুফ মৃধা, আল ফাহাদ, রিজন হোসেন ও ইকবাল হোসেন ইমন আক্রমণাত্মক মেজাজে বোলিং করেছেন। এছাড়া ফিল্ডারদের মধ্যে ছিল তীব্র তৎপরতা। তবু অন্তত দুটি ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে, কিছু মিস ফিল্ডিং হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশী যুবা ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা ও নিজেদের তীব্রতা ভারতীয় ব্যাটারদের কোণঠাসা করেছে। ৪৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে তারা। বড় কোনো জুটিই গড়তে পারেনি ভারতীয় যুবারা। সম্মিলিতভাবে শুরুর দিকে মারুফ, ফাহাদ ও রিজন দুর্দান্ত বোলিং করে এই চাপ তৈরি করেছেন। পরে কিছুটা পুরনো বলে এসে জাদু দেখিয়েছেন ইকবাল। তিনি একটানা ৩টি উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের মিডলঅর্ডার ধসিয়ে দেন। আর পরে ব্যাট হাতে ব্যর্থ অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম বাঁহাতি স্পিনে মাত্র ২.২ ওভার বোলিং করে ৮ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে থামিয়ে দেন ভারতের জয়ের আশা। ১৪ ওভার ৪ বল বাকি থাকতেই সেজন্য ভারতের ইনিংস গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৩৯ রানে। ইকবাল ৭ ওভারে ১ মেডেনে ২৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। ফাহাদ নিয়েছেন ২ উইকেট। ভারতের পক্ষে কেপি কার্থিকিয়া ৪৩ বলে ২ চারে ২১ ও অধিনায়ক মোহাম্মদ আমান ৬৫ বলে ১ চারে ২৬ রান করতে পেরেছেন।
ভারতের বিপক্ষে এবার যুব এশিয়া কাপ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের যুবারা ২৭ রানে জয় পায় শারজাতে। সেখানেই বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের যুবারা দুবাইয়ে সব ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। তাই দুবাই যেন নিজেদের মাঠ হয়ে ওঠে টাইগার যুবাদের জন্য। তাই কম পুঁজি নিয়েও ফাইনালে জিততে আত্মবিশ^াসী হয়েই নামে তারা। ১১ আসরের মধ্যে ভারত সর্বাধিক ৮ বারই শিরোপা জিতেছে। আর বাংলাদেশ ২০১৯ সালে প্রথমবার ফাইনালে উঠে তাদের কাছেই মাত্র ৫ রানে পরাজিত হয়। গত বছর দুবাইয়ে হওয়া ফাইনালে আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জয় করে বাংলাদেশের যুবারা। টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিততে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ এবার হট ফেভারিট ভারতকে বিধ্বস্ত করে। আর কোনো দলই একাধিকবার যুব এশিয়া কাপে শিরোপা জিততে পারেনি। আফগানিস্তান ২০১৭ সালে শিরোপা জেতে। আর বাংলাদেশ জিতল দুইবার। তাই অধিনায়ক আজিজুল হাকিম বলেছেন, খুব ভালো লাগছে। আলহামদুলিল্লা! আমরা সবাই খুব খুশি। ভারতের ব্যাটসম্যানরা অফসাইডে একটু লড়াই করছিল। বিশেষ করে চতুর্থ বা পঞ্চম স্টাম্প বরাবর বলে। পরিকল্পনা ছিল, অফসাইডে বোলিং করে তাদের ঝামেলায় ফেলা। আমাদের সব সমর্থক এবং বাংলাদেশের সব মানুষকে ধন্যবাদ।
জোবায়ের আহমেদ