বল হাতে মিরাজ সফল হলেও দলগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ
এমন টেস্ট ম্যাচ সাম্প্রতিক সময়ে খুব কমই খেলেছে বাংলাদেশ দল। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের মাটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়ে যে দলটি সিরিজ জিতেছে, তারাই এবার মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখেছে ভারতে এসে। কানপুর টেস্টে ওভারের হিসেবে মাত্র ১৭৩.২ ওভার খেলা হয়েছে। তাতেই ৭ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে আড়াই দিন ও ৭ সেশনের বেশি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর জিততে মরিয়া ভারত পরিকল্পনা নেয় টি২০ মেজাজে ব্যাট করার। সেই পরিকল্পনা বেশ কাজে দিয়েছে।
ম্যাচের চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে উইকেট পড়েছে ২৯টি যার ১৭টিই বাংলাদেশের। দুইবার অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ, একবারও গুটিয়ে যায়নি ভারত। মাত্র ৯৫ রানের টার্গেট পেয়ে পঞ্চম দিন চা বিরতির প্রায় আধা ঘণ্টা আগে ৩ উইকেটে ৯৮ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। চেন্নাই টেস্টে ২৮০ রানের হেরেছিল বাংলাদেশ। তাই ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তরা। সেজন্য ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দুষেছেন তিনি। এই জয়ে ভারত চলমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।
আগের দিনই বোঝা যাচ্ছিল এই টেস্টে বাংলাদেশ হারের তীব্র শঙ্কায় আছে। কারণ ভারতের ব্যাটিং শক্তির সঠিক প্রয়োগ। তারা টি২০ মেজাজে ব্যাট চালিয়েছে এবং টেস্ট ক্রিকেটে যেভাবে ব্যাটিং এতোদিন দেখেছে বিশ^ তার পুরোপুরি বিপরীত ছিল তাদের মনোভাব। জেতার আকাক্সক্ষায় শেষ চেষ্টা হিসেবে ৮.২২ রানরেটে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩৪.৪ ওভার ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৮৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে তারা। কানপুরের উইকেট যেভাবে ব্যাটিংয়ের জন্য সহায়ক ছিল তার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেছে ভারত ‘যা হওয়ার হবে’ সেই মানসিকতায় খেলে।
আর সেটাই টনিকের মতো কাজে দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক ছাড়া প্রত্যাশামাফিক ব্যাট করতে পারেননি আর কেউ। তাই এমন ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও ২৩৩ রানের মামুলি সংগ্রহে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে চাপ নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ দিন শেষেই ২৬ রান তুলতে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। সেখান থেকে পঞ্চম দিন পুরোটা সময়ই বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং করার চ্যালেঞ্জ। তবে শুরুতেই মুমিনুল ২ রানে রবিচন্দ্রন অশি^নের বলে সাজঘরে ফেরেন।
তবু প্রথম ঘণ্টায় ১৫ ওভারে ৫৪ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। সাদমান ইসলাম অনিক দারুণ খেলছিলেন, তার সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তও। কিন্তু শান্তই প্রথম রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ভুলটা করেছেন। তিনি ৩৭ বলে ১৯ রানে রবীন্দ্র জাদেজাকে অহেতুক এমন শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন। তারপরই ধস নামে। সাকিব তার ক্যারিয়ারের সম্ভবত সর্বশেষ টেস্ট ইনিংস খেলেছেন এবং শূন্য রানেই সাজঘরে ফিরেছেন। ৫৫ রানের জুটি ভাঙার পর সাদমান অর্ধশতক পেয়ে গেলেও ১০১ বলে ৫০ রানেই আউট হয়ে যান আকাশ দীপের পেসে। এরপর মুশফিকুর রহিম ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। ৬৩ বলে ৭ চারে ৩৭ রান করে তিনিও জাসপ্রিত বুমরাহর পেসে বোল্ড হয়েছেন। ফলে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস।
বুমরাহ, অশি^ন ও জাদেজা ৩টি করে উইকেট নেন। বোলাররা তেমন সুবিধা পাননি, এরপরও বাংলাদেশী ব্যাটাররা নিজ থেকেই আত্মাহুতি দিয়েছেন। ভারত যেখানে টেস্ট ইতিহাসে দলীয় রানের ক্ষেত্রে দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ ও ২৫০ রানের বিশ^ রেকর্ড গড়েছে সেখানে এমন দুর্দশা বাংলাদেশের। মাত্র ৯৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে এদিনও দ্রুতগতিতে রান তুলেছে ভারত। প্রথম থেকেই মেহেদি হাসান মিরাজ বোলিং শুরু করে অবশ্র রোহিত শর্মা (৮) ও শুভমান গিলের (৬) উইকেট তুলে নিয়েছেন। কিন্তু জয়সওয়াল ৪৫ বলে ৮ চার, ১ ছয়ে ৫১ রান করে দলকে জয় থেকে মাত্র ৩ রান দূরে রেখে সাজঘরে ফেরেন। বিরাট কোহলি ৩৭ বলে ৪ চারে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
চা বিরতির বেশ আগেই ৩ উইকেটে ৯৮ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত। ফলে ২-০ ব্যবধানে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছে তারা। দুইদিনের কম সময়ে এর আগে হারতে দেখা যায়নি বাংলাদেশকে। তাই হতাশ অধিনায়ক শান্ত বলেছেন, ‘দুই টেস্টেই আমরা ভালো ব্যাট করতে পারিনি। এই কন্ডিশনে আমাদের ভালো ব্যাট করতে হবে। যদি আমাদের ব্যাটসম্যানদের দেখেন ৩০/৪০ বল খেলেই আউট হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যান নামার পর বড় স্কোরের জন্য খেলাটা টেস্ট ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ।’
কানপুরে এটি সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। যদিও উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য স্বর্গ থাকার কারণে এটাই স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেটা কাজে লাগাতে পারেননি। এবারও তাই ভারতের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ হতে হলো বাংলাদেশ দলকে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা ভারত তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে ফাইনালের পথ আরও সুগম করল।