ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

স্বর্ণালি সময়ে মেসির আর্জেন্টিনা

​​​​​​​রুমেল খান

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ১২ জুলাই ২০২৪

স্বর্ণালি সময়ে মেসির আর্জেন্টিনা

.

সফলতা মানেই কিন্তু একটি গন্তব্যে পৌঁছানো নয়, এটি একটি সফর। আমরা কখনোই গন্তব্যে পৌঁছাই না। প্রথমে একটি লক্ষ্যে পৌঁছবার পর দ্বিতীয়টির দিকে যাত্রা করি, সেখান থেকে পরবর্তী লক্ষ্যে, পরে তার পরবর্তী লক্ষ্যে। সাফল্য হচ্ছে এমন একটি সৌভাগ্য যার মূলে রয়েছে অনুপ্রেরণা, উচ্চাশা, তীব্র ইচ্ছা কঠিন পরিশ্রম। এটি এমন একটি আপেক্ষিক বিষয়, যা বেশি দিন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। যেমন বিশ্ব ফুটবলে। আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতিহাসে একেক সময় আর একেক দশকে একেক দল সেরা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পরে তাদের হটিয়ে অন্য কোনো জাতীয় দল সেই জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে। এমন বেশকিছু দলের নামোল্লেখ করা যায়। যেমন উরুগুয়ে (১৯২৪-৩০), ইতালি (১৯৩৪-৩৮), হাঙ্গেরি (১৯৪৯-৫৪), ব্রাজিল (১৯৫৮-৬২), ব্রাজিল (১৯৭০), পশ্চিম জার্মানি (১৯৭০-৭৬), নেদারল্যান্ডস (১৯৭৪-৭৮), ফ্রান্স (১৯৮২-৮৬), আর্জেন্টিনা (১৯৮৬-৯০), ব্রাজিল (১৯৯৭), ফ্রান্স (১৯৯৮-২০০০), স্পেন (২০০৮-১২) ব্রাজিল (২০১৩)

গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের আলোকে বর্তমান সময়ের সেরা দল হিসেবে অনায়াসেই আর্জেন্টিনার নামোল্লেখ করা যায়। গত ১৭ বছরে তারা ৭টি টুর্নামেন্টের (সপ্তমটি হওয়ার অপেক্ষায়) ফাইনালে উঠেছে। আর শিরোপা জিতেছে দুটি। এই ডিজিটাল যুগে, এই রাফ অ্যান্ড টাফ ফুটবলের সময়ে কোন দলের এতবার ফাইনালে খেলাটা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বপূর্ণ। এজন্য অনেক ফুটবলবোদ্ধা আর্জেন্টিনার নাম দিয়েছেনফাইনালন্টিনা’! আবার অনেকেই একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা ফুটবল দলও মনে করেনলা আলবিসেলেস্তেদলকে। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার কৃতিত্ব, (যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ) যাদের, তাদের ক্ষেত্রে এমনটা বলা যেতেই পারে। একবিংশ শতাব্দীতে আর্জেন্টিনার প্রথম ফাইনাল ছিল ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকা। রানার্সআপ হয় তারা। এরপর আসে সেইঐতিহাসিক টানা তিন ফাইনালের ট্র্যাজেডি ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০১৫ ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনাল। এই তিন ফাইনালেই দুঃখজনকভাবে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর দীর্ঘ বছরের লম্বা বিরতির পর অবশেষে আসে অধরা সাফল্য। ২০২১ কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপার বন্ধ্যত্ব ঘোচায় তারা। এর এক বছর পর তার চেয়েও বড় সাফল্য ধরা দেয় তাদের হাতের মুঠোয়। ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে, দীর্ঘ ৩৬ বছর পর।

আর মাত্র দুদিন বাদেই আরেকটা ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। সেটা কোপা আমেরিকার ফাইনাল (এখানে ২০০৪ ২০০৮ সালের অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালে জয় এবং ২০২২ সালের ফিনালিসালিমার জয়কে বাদ দেয়া হয়েছে) এখানে একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়- এই ছয়টি ফাইনালই খেলেছেন সর্বকালের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। সোমবারের কোপার ফাইনালে খেললে এটা হবে তার জাতীয় দলের জার্সিতে সপ্তম ফাইনাল।  আর্জেন্টিনার সামনে এখন দক্ষিণ আমেরিকান দল হিসেবে টানা দুবার মহাদেশীয়  শিরোপা একবার বিশ্বকাপ জেতার হাতছানি। ইউরোাপ একমাত্র এই কৃতিত্ব আছে স্পেনের (২০০৮ ইউরো, ২০১০ বিশ্বকাপ এবং ২০১২ ইউরো) এবার আর্জেন্টিনার সামনে আছে সেই সুযোগ। স্বপ্নের এই ট্রবলের চক্রপূরণ করতে আর্জেন্টিনার দরকার আর এক জয়।

মোট কথা এই শতাব্দীতে একমাত্র ব্রাজিলই (১টি বিশ্বকাপ, ৩টি কোপা আমেরিকা ৩টি কনফেডারেশন্স কাপ) আর্জেন্টিনার চেয়ে একটি বেশি ( বার) এতগুলো ফাইনাল খেলেছে। তারা এক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার চেয়েও এগিয়ে, কেননা এতগুলো ফাইনাল খেলে তারা বারই শিরোপা জিতেছে। কিন্তু এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং ওশানিয়া অঞ্চলের কোন দেশই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো এতবার ফাইনালে উঠতে পারেনি।

কিন্তু এই শতাব্দীতে ফাইনাল খেলা এবং শিরোপা জেতায় আর্জেন্টিনার চেয়ে এগিয়ে থাকলেও গত বছরে তাদের খেলার মানের চরম অবনতির জন্য ব্রাজিল দলকে নিয়ে চরম হতাশ তাদের ভক্ত-সমর্থক-অনুরাগীরা। এর বিপরীত অবস্থা আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে। আকাশী-নীল দলটির ফ্যানরা আবারও আশায় বুক বেঁধেছেন ৪৮তম কোপা আমেরিকার শিরোপাটি আবারও নিজেদের করে নেবেন মেসি-ডি মারিয়ারাও। যদি এমনটা হয় তাহলে আর্জেন্টিনা এই শতাব্দীর তৃতীয়, কোপার ১৬তম (এককভাবে রেকর্ড) এবং সবমিলিয়ে ২১তম আন্তর্জাতিক ট্রফিজয়ের গৌরবের অধিকারী হতে পারবে (২০টি আন্তর্জাতিক শিরোপাজয় ছাড়াও আর্জেন্টিনা বার অলিম্পিক ফুটবলে স্বর্ণপদক এবং বার ফিনালিসিমা ট্রফি জিতেছে। সেগুলো ধরলে আর্জেন্টিনার পর্যন্ত মোট ট্রফি ২৪টি)

×