
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারিতে লিপ্ত আবাহনী ও মোহামেডানের খেলোয়াড়রা
হাতের মুঠোয় থাকা গ্রিন ডেল্টা ইন্সুরেন্স প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগের শিরোপা হাতছাড়া করেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। গত শুক্রবার মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে ২০২৩-২৪ মৌসুমের শেষ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে এগিয়ে ছিল বিখ্যাত সাদা-কালো জার্সিধারীরা। কিন্তু ম্যাচ শেষ হওয়ার ১৭ মিনিট আগে দুই দল মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে মোহামেডান খেলতে অস্বীকৃতি জানালে নিয়ম অনুযায়ী পিছিয়ে থাকার পরও আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
এর ফলে জেতার পথে থাকা শিরোপা মুহূর্তের মধ্যে হাতছাড়া হয়ে যায় মোহামেডানের। এখন আবাহনী ও মেরিনার ইয়াংসের পয়েন্ট সমান থাকায় দুই দল প্লেঅপ ম্যাচ খেলবে। ওই ম্যাচের জয়ী দল শিরোপা উল্লাস করবে। অথচ আবাহনীর বিরুদ্ধে মোহামেডান জয় পেলেই ট্রফি জয়ের উৎসব করতে পারত মোহামেডান। কিন্তু ক্লাব কর্মকর্তাদের হঠকারী সিদ্ধান্তে এটা হয়নি বলে মনে করেন সাবেক খেলোয়াড়, ক্লাবটির সমর্থক থেকে শুরু করে অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অন্তঃপ্রাণ মোহামেডান সমর্থক বলেন, ‘আমরা অনেক আশা নিয়ে মাঠে গিয়েছিলাম। দুই গোলে পিছিয়ে থাকার পর যখন সারি তিন গোল করল, তখন ধরেই নিয়েছিলাম আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছি। কিন্তু এরপর যা হলো তা মোহামেডান সমর্থকও হয়েও মানতে পারছি না। আমার মনে হয়েছে, কয়েকজন কর্মকর্তা ইচ্ছে করে খেলতে চায়নি। ওই সময় বরং খেলোয়াড়দের শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া উচিত ছিল। যে কোনোভাবে ম্যাচটি জিতে মাঠ ছাড়া দরকার ছিল। কিন্তু আমরা না খেলার মতো অবিশ্বাস্য সিদ্ধান্ত দেখলাম। মোহামেডানের এই না খেলার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী’।
তবে এটা ঠিক, প্রিমিয়ার হকি লিগ মানেই যেন বিতর্কে ভরপুর। সেটাই হয়েছে অঘোষিত ফাইনালে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মোহামেডান বাকি সময়ে আর না খেলা। এতে আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। এমন অবস্থায় যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের কাছে ওই ম্যাচের আম্পায়ারের শাস্তি, ম্যাচের ফল বাতিলসহ হকি ফেডারেশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে মোহামেডান। রবিবার দুপুরে মতিঝিল ক্লাব প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ কাজী ফিরোজ রশীদ সেখানে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে হকি লিগজুড়ে যে অন্যায়-অবিচার হয়েছে, এ জন্য আমরা ফেডারেশনকে নানা সময়ে চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠির প্রতিকার পাইনি। তাই এখন বাধ্য হয়ে ক্রীড়ামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সুবিচারের দাবিতে।’ মোহামেডান ম্যাচের দিনই ভিডিও রেফারেল দেখে লাল কার্ডের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছিল আম্পায়ারকে। সংবাদ সম্মেলনও সেই অবস্থানে অনড় আছে ক্লাবটি।
ওই ম্যাচের ওমানি আম্পায়ার ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন। হকি ফেডারেশন আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করে এখন আবাহনী-মেরিনার্স প্লেঅফ ম্যাচ নিয়ে ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে বাস্তবিক অর্থে মন্ত্রীর পক্ষে মোহামেডানের দাবি মানা সম্ভব হবে না বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মোহামেডানের সাবেক পরিচালক এবং কিংবদন্তি হকি ও ফুটবলার প্রতাপ শঙ্কর হাজরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই লিগে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। একটি লিগে তিনটি নিয়ম কিভাবে হয়, সেই জবাব চাই ফেডারেশনের কাছে। এক ম্যাচে (আজাদ-বাংলাদেশ স্পোর্টিং) এক কোয়ার্টার না খেলিয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি। আরেক ম্যাচ পরের দিন কয়েক মিনিট খেলা হলো আর আবাহনী- মোহামেডান খেলা শেষের আগেই ফল ঘোষণা করা হলো।’ গত দুই দশকে মোহামেডানের ফুটবল ও ক্রিকেটে সাফল্য অনেকটাই কম, সেই তুলনায় সফল হকিতে। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি সফল ডিসিপ্লিন থেকে নিজেদের সরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। এ প্রসঙ্গে প্রতাপ শঙ্কর হাজরা বলেন, ‘আম্পায়ারিং ও ফেডারেশন নিরপেক্ষ না হলে সেই লিগে অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা নেই। মন্ত্রী যদি বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত বা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন, তখন আমাদের পরিচালনা পর্ষদ হকি না খেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নে জর্জরিত ছিলেন মোহামেডানের কর্মকর্তারাও। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মোহামেডান ৩-২ গোলে এগিয়ে ছিল। ম্যাচের বাকি ছিল মাত্র ১৭ মিনিট। সেই মুহূর্তে মোহামেডানের খেলোয়াড়রা কেন আবাহনী খেলোয়াড়দের ফাঁদে পড়ে বিবাদে জড়ান? টেন্ট থেকে পুরো দল গিয়ে কেন মারামারি করল? এসব প্রশ্নের জবাবে মোহামেডানের ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স বলেন, ‘আবাহনীর খেলোয়াড় মিমো আগে আক্রমণ করেছে। সেই আক্রমণের প্রেক্ষিতে আমাদের খেলোয়াড়রা রক্তাক্ত হয়েছে। অথচ আম্পায়ার আমাদের বেশি কার্ড দিয়েছেন। হকিতে উত্তেজিত মুহূর্তে খেলোয়াড়রা জড়িয়ে পড়ে। সেটি অনেক দিন থেকেই নতুন কিছু নয়।’ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ ২০১৯ সালের নির্বাচনে মোহামেডানের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মোহামেডান প্যানেল থেকে নির্বাচন করেই তিনি হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। পাঁচ বছরের মধ্যে সেই মোহামেডান সাঈদকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।