
অনুশীলনে এভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন বাংলাদেশের টি২০ অধিনায়ক লিটন কুমার দাস
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন টি২০ অধিনায়ক হলেন লিটন কুমার দাস। রবিবার অভিজ্ঞ এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানকে আগামী টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব দিয়ে দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। চমক দেখিয়ে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে অলরাউন্ডার শেখ মেহেদি হাসানকে। তবে তার এই দায়িত্ব শুধু আসন্ন সফরের জন্য।
নেতৃত্বে না থাকলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরের দলে টিকে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৬ সদস্যের দলে সর্বশেষ সিরিজ থেকে বাদ পড়েছেন পাঁচজন, দলে এসেছেন ছয়জন। প্রথমবার টি২০তে সুযোগ পেয়েছেন ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা। আগামী ১৭ ও ১৯ মে শারজায় স্বাগতিক আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ।
এরপর পাকিস্তানের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শুরু ২৫ মে। শান্তর টি২০ পারফরম্যান্স ভীষণ বিবর্ণ। প্রশ্ন আছে তার টি২০ ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য নিয়েও। সর্বশেষ বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে ৫ ইনিংসে ৫৬ রান করার পর আর সুযোগই পাননি দলে। আন্তর্জাতিক টি২০তে ৪৯ ম্যাচ খেলে তার মোট রান ২২.৮৫ গড়ে ৯৬০, স্ট্রাইক রেট মোটে ১০৮.৩৫। তার পরও তাকে দলের রাখার কারণ হিসেবে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
টি২তে শান্তর পারফর্ম্যান্স ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি নিজেই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে বলেছিলেন এই সংস্করণে অধিনায়কত্ব আর চালিয়ে যেতে চান না। সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসবে লিটনের সম্ভাবনা নিয়েই জোর গুঞ্জন ছিল। বাংলাদেশ সর্বশেষ টি২০ সিরিজে চোটের কারণে শান্ত না থাকায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। দল সিরিজ জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে। লিটনের নিজের ফর্মও অবশ্য ভালো নয়।
সর্বশেষ সিরিজে তিন ইনিংসে তার রান ছিল মাত্র ১৭। সবশেষ ২৪ টি২০ ইনিংসে তার ফিফটি মাত্র একটি। শান্ত ছাড়াও দলে ফিরেছেন তাওহিদ হৃদয়, মুস্তাফিজুর রহমান, তানভির ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম। শান্তর মতোই চোটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ছিলেন না হৃদয়, পারিবারিক কারণে ছিলেন না মুস্তাফিজ। বাদ পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম মেহেদি হাসান মিরাজ।
এ ছাড়াও জায়গা হারিয়েছেন আফিফ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও রিপন ম-ল। দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক অবশ্য জানিয়েছেন, সর্বশেষ সিরিজে স্রেফ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নেওয়া হয়েছিল রিপনকে, খেলানোর জন্য নয়। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লিটনকে।
এখনো পর্যন্ত নানা সময়ে নানা সংস্করণে জাতীয় দলের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে বেশ সফল তিনি। টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন একটি ম্যাচে। ২০২৩ সালে সেই ম্যাচে আফগানিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ২০২২ সালে তার অধিনায়কত্বেই ভারতের বিপক্ষে ধরা দিয়েছিল সিরিজ জয়। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘অভিজ্ঞতা আমাদের এখানে খুব বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে খুব বেশি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আমাদের নেই।
পাশাপাশি ওর (লিটন) বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, পারফর্ম্যান্স নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আমাদের যেটা মনে হয়েছে, ওর মধ্যে যে সম্ভাবনাটা আছে, ও যদি নিজের খেলাটা গুছিয়ে নিতে পারে, তাহলে অনেক বড় সম্পদ হতে পারে। ওর অধিনায়কত্ব নিয়ে সবারই ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আছে।
যারা টেকনিক্যালি খুব সাউন্ড, তারাও তার অধিনায়কত্বের গুণের কথা বলে। পাশাপাশি তার পারফর্ম্যান্সটা খুব জরুরি। এটা যদি আমরা গুছিয়ে নিতে পারি, তাহলে আমাদের এই দলটায় খুব ভালো একটা দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তবে দলের শক্তির একটা বড় জায়গা হয়ে উঠতে পারে।’
লিটনকে অধিনায়ক করা নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন নেই, তবে শেখ মেহেদিকে আগে কখনোই সেভাবে ‘লিডারশিপ’ গ্রুপে দেখা যায়নি, এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও। হুট করে তাকে জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক করা তাই কিছুটা চমকপ্রদই। ‘যে দলটা এখন আছে, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটারের সংখ্যা খুব কম।
আমরা জানি, শেখ মেহেদি কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে অনেকটা অটোমেটিক চয়েজ। ওর যে অভিজ্ঞতা আছে, ট্যাকটিক্যাল জ্ঞান আছে, সেটা আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। সেটা আমাদের চোখে পড়েছে। সেটা নিয়ে নির্বাচক, কোচসহ সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, এই মুহূর্তে যদি তাকে এই সুযোগটা দেই, তাহলে দেখতে পারব, কীভাবে সে এটি প্রয়োগ করে।’ বলেন ফাহিম।
বাংলাদেশ টি২০ দল : লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), শেখ মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন, তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন, জাকের আলি, রিশাদ হোসেন, তানভির ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, তানজিম হাসান, নাহিদ রানা ও শরিফুল ইসলাম।