ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০

তরুণ এই পেসারকে বিসিবির সতর্কবার্তা

ক্ষমা চেয়েছেন তানজিম সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ক্ষমা চেয়েছেন তানজিম সাকিব

তানজিম সাকিব

মাত্র ২০ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে। সেটিও আবার এশিয়া কাপের মতো বড় মঞ্চে ভারতের মতো একটি শক্তিশালী দলের বিপক্ষে। আন্তর্জাতিক যাত্রাটা দুর্দান্ত হলেও এর মাত্র ২ দিন পরই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ডানহাতি পেসার তানজিম হাসান সাকিব। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তার কিছু পুরনো স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। নারী স্বাধীনতা, নারীদের চলাফেরা এবং আচরণ ও চাকরি বিষয়ে কিছু বিতর্কিত পোস্ট সবার নজরে আসে এবং ভাইরাল হয়। বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) পালন নিয়েও তিনি অমর্যাদাকর পোস্ট শেয়ার করেছেন ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে।

এ কারণে দেশের প্রতি তার মমত্ববোধ কিংবা দেশপ্রেম নিয়েও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে জোরালো প্রতিবাদে সোচ্চার হতে থাকেন সবাই। জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করছেন যে ক্রিকেটার তার এই মানসিকতাগুলো সবাইকে বিস্মিত করেছে। সচেতন মহলের মতে তানজিমের এই ন্যক্কারজনক কর্মকা- কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সে যত প্রতিভাবান ক্রিকেটারই হোক এই অপরাধে তার বড় ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত, বাদ দেওয়া দরকার জাতীয় দল থেকে। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি কি নীতি অনুসরণ করবেন সে বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)) কেন নির্দেশনা দেয়নি সেসব নিয়েও অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তানজিমকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং সেও ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছে। 
গত ৩০ বছর ধরেই দেশে নারী স্বাধীনতা এবং নারীদের এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের শাসনভারও নারীর কাঁধেই রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা পদক্ষেপে দেশে নারী স্বাধীনতা অনেক বেড়েছে, সেই সঙ্গে নারীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে, পেশাগত ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছেন এবং পুরুষদের পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে সমান তালে নিজেদের অবদান রাখছেন নারীরা। পুরনো যুগের চিন্তা-চেতনা ছুড়ে ফেলে যখন দেশের অসহায় নারী সমাজ এখন স্বাবলম্বী হয়ে দেশের উন্নয়নের অন্যতম বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছেন সেই সময় জাতীয় দলের একজন উদীয়মান তরুণ ক্রিকেটারের নারী বিদ্বেষমূলক প্রচারণা সবাইকে হতবিহ্বল করে দিয়েছে।

দুর্দান্তভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করা তানজিম সাকিব সেই ক্রিকেটার। এমন পুরনো যুগের মন-মানসিকতা নিয়ে দেশের জার্সি গায়ে বহির্বিশে^ কীভাবে তিনি দেশকে তুলে ধরবেন? এমন প্রশ্নই কিন্তু চারদিকে কয়েকদিন ধরে ঘুরে ফিরেছে। কারণ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নারী স্বাধীনতা, চাকরি করা বিষয় নিয়ে এবং সর্বোপরি ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করার বিষয়টি নিয়েও বিরোধিতা করেছেন। আর এতেই তাকে নিয়ে সমালোচনা ও তীব্র প্রতিবাদ তৈরি হয়। কারণ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। সেদিনটাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য রাষ্ট্রবিরোধী কারও পক্ষেই সম্ভব বলে অভিযোগ তোলেন সবাই।
২০২০ সালে যুব বিশ^কাপজয়ী বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অন্যতম সদস্য তানজিম। তার অর্থ সেই সময় থেকেই তিনি বিসিবির অধীনে রয়েছেন এবং তার আচরণবিধি ও নিয়মনীতি বিসিবির নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। এমনটাই সবাই দাবি করেন। আর সেজন্য তানজিম বিরোধী হয়ে ওঠেন দেশের মানুষ। বিসিবির দিকেও অভিযোগের আঙুল ওঠে। শেষ পর্যন্ত সোমবার বিসিবি জানায় বিষয়টি নিয়ে তারা তানজিমের সঙ্গে কথা বলবেন। তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবিও ওঠে। তবে তানজিমের সঙ্গে আলোচনা করে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল মঙ্গলবার বলেছেন, ‘ক্ষমা সে আমাদের কাছে চেয়েছে। প্রকাশ্যের কথা বলা হয়নি। ক্ষমা আমাদের কাছে চেয়েছে।’

প্রয়োজনে মানসিক উন্নয়নের জন্য তানজিমকে মনোবিদের অধীনেও রাখার ব্যবস্থা নেবে বিসিবি। জালাল বলেছেন, ‘যদি থাকে ওই রকম কোনো সমস্যা, তাহলে আমরা অবশ্যই তাকে সেই সহায়তা করব।’ তানজিমের এই কর্মকা-ে এখন তার পরিবারও বেশ শঙ্কিত। তারাও দুঃখপ্রকাশ করেছে। জালাল বলেছেন, ‘আমাদের নজর আছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করব তাকে। অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করব। 
এই মুহূর্তে সে যেটা বলেছে, তার পরিবারও খুবই শঙ্কিত এ ব্যাপারে। তারাও এ ধরনের একটা পরিস্থিতি হবে, আশা করেনি। তারাও দুঃখ প্রকাশ করেছে।’ কিন্তু এখানেই চুপ করে থাকবে না বিসিবি। তানজিমকে কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এবং আবারও এ ধরনের কা- ঘটালে নেওয়া হবে কঠোর পদক্ষেপ। সেই সতর্কতা জানানোর বিষয়ে জালাল বলেছেন, ‘যেহেতু সামনে বিশ্বকাপ আছে, একটা তরুণ ছেলে এবং বয়স কম আপনারা জানেন। তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কোনো পোস্ট না দেওয়া হয়। আমরা খেয়াল করি, দেখি, পর্যবেক্ষণ করি।

যদি কিছু থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব। সে কারও সঙ্গে মেশে না। সে যা (পোস্ট) দিয়েছে, নিজে থেকে দিয়েছে। যদি ভবিষ্যতে কোনো কার্যক্রম থাকে, আমরা বলেছি আমরা পর্যবেক্ষণ করব। কারণ তার সঙ্গে আমাদের চুক্তির বিষয় আছে। বিসিবির কোড অব কন্ডাক্টের বিষয় আছে।’ সেই আচরণবিধির কথা জালাল এখন বললেও সেটি কেন যুব বিশ^কাজয়ী একজন ক্রিকেটারকে জানায়নি তা খুবই বিস্ময়কর। আর বড় কোনো শাস্তি না দেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরও কেউ এমন করবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? বিসিবি কি আগামীতে আরও সতর্ক হবে ক্রিকেটারদের কোড অব কন্ডাক্টের বিষয়ে?