ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সিরাজ-গোলায় বিধ্বস্ত লঙ্কা, শিরোপা ভারতের

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩; আপডেট: ২২:৩৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সিরাজ-গোলায় বিধ্বস্ত লঙ্কা, শিরোপা ভারতের

এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা উদ্যাপন করছেন ভারতের ক্রিকেটাররা

বৃষ্টি ও ভেজা আউটফিল্ডের কারণে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয় খেলা। বিড়ম্বনার মাঝেও কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ক্ষণে ক্ষণে উল্লাস। কখন মাঠে গড়াবে ফাইনাল? যেন তর সইছিল না। কিন্তু টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া দাসুন শানাকাদের ওপর দিয়ে মোহাম্মদ সিরাজ যে পেস-তান্ডব চালালেন, তাতে স্বাগতিক দর্শকরা ভাবতেই পারেন, খেলাটা শুরু না হলেই বুঝি ভালো হতো! ১৫.২ ওভারে মাত্র ৫০ রানে অলআউটের লজ্জায় ডুবল শ্রীলঙ্কা। ফাইনাল তো বটেই, এশিয়া কাপের ইতিহাসেই যা দলীয় সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড। দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন, কুসল মেন্ডিস ১৭ ও দুশান হেমন্ত ১৩*, বাকি আট জন আউট হয়েছেন সিঙ্গেল ডিজিটে।

টানা ৭ ওভার বোলিং করে ১ মেডেন, ২১ রান দিয়ে সিরাজ একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। জবাবে দুই ওপেনার শুভমান গিল (১৯ বলে ২৭*) ও ইশান কিষানের (১৮ বলে ২৩*) দারুণ ব্যাটিংয়ে ৬.১ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। ১০ উইকেটের বিশাল জয়ে তুলে নেয় রেকর্ড অষ্টম শিরোপা। দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচসেরা সিরাজ।
একের পর এক শ্রীলঙ্কান ব্যাটারদের আত্মাহুতি দেখে সাবেকদের অনেকেই তাৎক্ষণিক টুইটে হতাশা প্রকাশ করেন। সত্যি গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে অনিশ্চয়তার যেন শেষ নেই। ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপে এর আগে দলীয় সর্বোচ্চ নিম্ন রানের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে গুটিয়ে গিয়েছিল ৮৭ রানে। সেই লজ্জা এবার নিজেদের করে নিল লঙ্কানরা। আর ফাইনালে সর্বনিম্ন স্কোর ১৭৩। ২০০৮ সালের ফাইনালে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে হেরেছিল এই ভারত। সেই লজ্জাও এবার ফিরিয়ে দিল রোহিত শর্মার দল। কুসল মেন্ডিস (৩৪ বলে ১৭) ও দুশান হেমন্তের (১৫ বলে অপরাজিত ১৩) দৃঢ়তায় অবশ্য অল্পের জন্য ওয়ানডেতে নিজেদের দলীয় লজ্জার রেকর্ড এড়াতে সক্ষম হয়েছে লঙ্কানরা! ২০১২ সালে পার্লে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তারা গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র  ৪৩ রানে। বৃষ্টি, কাভারে ঢাকা পুরো মাঠ, এবারের এশিয়া কাপে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের এ চিত্র তো নিয়মিত। এ নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। পরের দিকে ব্যাট করা কঠিন হচ্ছে।

বিশেষ করে স্পিনারদের বিপক্ষে। সেই চিন্তা থেকেই হয়তো টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন শানাকা। কিন্তু সেই পর্যন্ত আর যাওয়ার সুযোগ পেলেন কোথায়! বুমরাহর করা দিনের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার কুসল পেরেরা। রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। এরপর শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামান ভারতীয় সিরাজ। বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী ডানহাতি এ পেসার।
শুরুটা করেন ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে পাথুম নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে। জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচে এই ওপেনার আটকা পড়েন ৪ লে ২ রান করে। দ্বিতীয় বল ডট। তবে এর পরের বলে সাদিরা সামাবিক্রমাকে (২ বলে ০) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন সিরাজ। এই ইনফর্ম ব্যাটার রিভিউ নিয়েছিলেন তবে শেষ রক্ষা হয়নি। চতুর্থ বলে আবারও উইকেট! এবার তার শিকারে পরিণত হয়েছেন চারিথ আসালঙ্কা (১ বলে ০)।  প্রথম চার বলে ৩ উইকেট নেওয়ার পর পঞ্চম বলটি ছিল হ্যাটট্রিক ডেলিভারি। সেটিতে দারুণ এক শটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করেন ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা। কিন্তু পরের বলেই তিনি উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। ২ বলে ওই চারেই শেষ হয় তার ইনিংস। ফলে এক ওভারেই ৪ উইকেট পেয়েছেন সিরাজ। 
নিজের তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে আবারও উইকেট পেয়েছেন। চতুর্থ বলে বোল্ড করেছেন অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে (৪ বলে ০)। ফলে নিজের করা ১৬ বলে মধ্যেই ৫ উইকেট পেয়েছেন তিনি। বল বাই বল পরিসংখ্যান যখন থেকে রাখা হচ্ছে, তাতে চামিন্দা ভাসের রেকর্ড ছুঁয়েছেন সিরাজ। ভাস ১৬তম বলে পঞ্চম উইকেটটি নিয়েছিলেন ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেবার ভালোবাসা দিবসের ম্যাচে প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিকসহ বাংলাদেশের ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ভাস। 
ফাইফার নিয়েই থেমে থাকেননি সিরাজ। ১২তম ওভারে এসে লঙ্কানদের শেষ ভরসা কুশল মেন্ডিসকে (৩৪ বলে ৩ চারে ১৭) ফিরিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারসেরা ৭ ওভারে ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। আগের সেরা ছিল ৪/৩২ এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই গত জানুয়ারিতে। সর্বোপরি ওয়ানডেতে ভারতের হয়ে এটি চতুর্থসেরা বোলিং। সবার ওপরে স্টুয়ার্ট বিনির ৪ রানে ৬ উইকেট, বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৪ সালে, মিরপুরে। এশিয়া কাপের সেরা বোলিং ফিগারে তালিকাতেও বসেছেন সিরাজ। ২০০৮ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেই ১৩ রান ৬ উইকেট নিয়েছিলেন লঙ্কান স্পিনার অজন্তা মেন্ডিস। এবার সেই একই মঞ্চে লঙ্কান ব্যাটারদের বিপক্ষে নতুন কীর্তি গড়লেন সিরাজ। যেখানে তার বোলিং ফিগারটাও ২১ রানে ৬ উইকেট। প্রথম ১০ ওভারে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার তালিকাতেও নিজেকে সবার ওপরে নিয়ে গিয়েছেন এই পেসার। ১০ ওভারের মাঝে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এর আগে ৪ উইকেট ছিল জাভাগাল শ্রীনাথ, ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রিত বুমরাহর। সিরাজের আগুন ঝরানোর দিনে জ্বলে উঠেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়াও। তার ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট। বুমরাহ পেয়েছেন ১ উইকেট। না সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কা, না বিশ্ব ক্রিকেট, এমন ফাইনাল নিশ্চই কেউ চায়নি।

×