ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার সুপারস্টারের এলিট লিগ ছাড়ার গল্প

পেলে থেকে বেকহ্যাম

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৭, ৯ জুন ২০২৩

পেলে থেকে বেকহ্যাম

প্রয়াত ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে ও সাবেক ইংলিশ তারকা ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম

বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকার নাম লিওনেল মেসি। দীর্ঘদিন ধরেই পিএসজি ছেড়ে নতুন ক্লাবে ঠিকানা গড়ার গুঞ্জন ছিল তার। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্যারিস ছাড়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানালেন এলএম টেন। তবে বার্সিলোনা কিংবা আল হিলালে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মিয়ামিকেই বেছে নিলেন তার পরের গন্তব্য হিসেবে। ইউরোপের এলিট লিগ ছেড়ে আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে আর্জেন্টাইন মহাতারকার নতুন ঠিকানা গড়ার সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের অনেকে। তবে এলিট লিগ ছেড়ে তুলনামূলক কম জনপ্রিয় লিগের ক্লাবে যাওয়ার ঘটনা অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও যারা এমন নজির গড়েছেন সেই চার সুপারস্টার নিয়েই এই আয়োজন।
পেলে ॥ নিউইয়র্ক কসমস (যুক্তরাষ্ট্র) ১৯৭৫-৭৭
ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের তো বটেই বিশ্ব ফুটবলেরই অন্যতম সেরা ফুটবলারের নাম পেলে। ১৯৭৭ সালে সবধরনের ফুটবল থেকে অবসর নেন তিনি। তার আগে ১৯৭১ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর গ্রহণ করেন। স্বদেশী ক্লাব সান্তোসের হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর খেলার পর ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক কসমসে যোগ দেন তিনি। সেই সময়ে বছর প্রতি রেকর্ড ১৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নিউইয়র্ক কসমসে নতুন করে ঠিকানা গড়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান। চূড়ান্ত অবসরের আগে কসমসের হয়ে ৬৪ ম্যাচে করেছিলেন ৩৭ গোল। পেলে যুক্তরাষ্ট্রে গেলে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় বহুগুণে। তার যাওয়ার আগে সেই দেশের ম্যাচে গড়ে ১০ হাজারেরও কম সমর্থককে দেখা যেত।

আর পেলে যাওয়ার পরই বদলে যায় সেই চিত্র। তখন ম্যাচে গড়ে ৪০ হাজারেরও বেশি লোক দেখা যেত ফুটবল মাঠে। বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবলার তুলনামূলক কম জনপ্রিয় লিগের ক্লাবে গেলেও মাঠে কোনো ধরনের অবহেলা করেননি পেলে। বরং নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন সঠিকভাবে। তার অনুপ্রেরণাতেই ১৯৭৭ সালে শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় নিউ নিউইয়র্ক কসমস।
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা ॥ আল আরাবি (কাতার) ২০০৩-০৫ সেই সময়ে ম্যারাডোনা ছাড়া আর্জেন্টিনা ভক্তদের কাছে আর কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। সেই ম্যারাডেনাও ১৯৯৪ সালে শেষ হয়ে গেলেন। ২০০২ সালে এসে আর্জেন্টিনা পায় নতুন একটা প্রজন্ম। এই যে মাঝের সময়টা আর্জেন্টিনার নিভু নিভু বাতিটা জ্বালিয়ে রেখেছিলেন একজন বাতিস্তুতা। কাতার বিশ্বকাপের আগে আর্জেন্টিনার শেষ আর্ন্তজাতিক ট্রফিটা জয়ে ছিল তার ছোঁয়া। বর্তমানের মেসি-অ্যাগুয়েরো-ডি মারিয়ার কথা তুলে রাখলে ম্যারাডোনার পর নব্বই পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় আর্জেন্টাইন ছিলেন এই বাতিস্তুতাই। তার ডাক নাম ছিল বাতিগোল। আসলে গোল করাটাই ছিল তার কাজ!

আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬ গোল এবং ১৯৯৪ এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করার কীর্তিও গড়েছিলেন সোনালি চুলের এই ফুটবলার। ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল রোজারিও এর ছোট্ট ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে। কিন্তু ক্যারিয়ার শেষ করেছিলেন কাতারের অখ্যাত ক্লাব আল-আরাবির জার্সিতে! সেখানে প্রথম মৌসুমেই করেছিলেন ২৫ গোল। 
এরপর কাতারের লিগ জনপ্রিয় হয়ে উঠে গোটা দুনিয়াজুড়ে। সর্বশেষ ২০২২ সালে কাতার যে বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার পায় কোনো ধরনের যুক্তি তর্ক ছাড়াই তার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বাতিস্তুতার সেই আল আরাবি ক্লাবে যোগদানকে। 
জিকো ॥ কাশিমা অ্যান্টলার্স (জাপান) ১৯৯১-৯৪ বর্তমান বিশ্ব ফুটবলে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তির দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় জাপানকে। সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপেও জার্মানির মতো দলকে হারিয়ে শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত করেছিল তারা। অথচ ১৯৯১ সাল পর্যন্তও জাপানি ফুটবল তাদের সর্বনিম্ন অবস্থানে অবস্থান করছিল। তাদের তখন পেশাদার লিগের কাঠামো ছিল না। তার পর থেকে জাপানি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ১০০ বছরের পরিকল্পনা হাতে  নেয়। জন্ম হয় জে-লিগের। আর সেই লিগে যোগ দিয়ে গোটা ফুটবল দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি জিকো।

তার অসাধারণ পারফর্ম্যান্সের সৌজন্যেই দ্বিতীয় সারির দল সুমিতোমো মেটালস উন্নীত হয় জে-লিগে। এবং রানার্সআপ হওয়ার পর সেই ক্লাবই নাম বদল করে রাখা হয় কাশিমা অ্যান্টলার্স। জিকোর মতো ফুটবলার সেখানে যাওয়ার পর থেকেই স্টেডিয়ামে প্রচুর দর্শক আসা শুরু হয়। ব্রাজিলের থেকে আরও খেলোয়াড় আসার সঙ্গে সঙ্গে এশিয়ার অন্য সেরা খেলোয়াড়রাও এই লিগে খেলা শুরু করেন যা পরবর্তীতে জাপানের ফুটবলের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। এরপর কোচ হিসেবেও সাফল্যের দেখা পান জিকো। জাপানের জাতীয় দলের কোচের মধ্যে জিকোই সর্বোচ্চ ৭১টি ম্যাচে কোচিং করিয়েছেন।    
ডেভিড বেকহ্যাম ॥ এলএ গ্যালাক্সি (যুক্তরাষ্ট্র) ২০০৭-২০১২ মেজর লিগ সকার ইতিহাসের বিখ্যাত খেলোয়াড় নিঃসন্দেহে ডেভিড বেকহ্যাম। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং রিয়াল মাদ্রিদের মতো ইউরোপের বড় বড় ক্লাবে খেলা এই ইংলিশ তারকা ২০০৭ সালে যোগ দেন লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সিতে। 
তার যাওয়ার পর থেকেই বদলে যায় মেজর সকার লিগ। দীর্ঘ পাঁচ বছর সেখানে কাটান তিনি। এই সময়ে ৯৮ ম্যাচ খেলে করেন ১৮ গোল। বেকহ্যাম এখন ইন্টার মিয়ামি এফসির মালিক, যেখানে যোগ দিলেন লিওনেল মেসি।

×