ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিকভাবে শক্ত থাকতে চান শাহাদাত

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:২০, ৬ জুন ২০২৩

মানসিকভাবে শক্ত থাকতে চান শাহাদাত

মিরপুর শেরেবাংলায় সোমবার অনুশীলনে ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরামর্শ কোচ হাতুরুসিংহের

ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট সামনে রেখে জাতীয় দল ঘোষণা করেছে মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক প্যানেল। যেখানে চমক হয়ে এসেছে শাহাদাত হোসেন দিপু ও মোহাম্মদ মুশফিক হাসানের নাম। সুযোগ পেয়ে যারপরনাই রোমাঞ্চিত দুই তরুণ। ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সবচেয়ে প্রতিভাবানদের একজন ছিলেন শাহাদাত। সতীর্থদের অনেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেললেও তিনি এগিয়েছেন কিছুটা ধীরলয়ে। তবে যখন ডানা মেলতে শুরু করেছেন তখন তার মাঝে মিলছে আগামী দিনের ভরসার ছবি। 
সোমবার হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে অনুশীলনের পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে হাজির হন ২১ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটার। এত ক্যামেরা, এত সাংবাদকর্মীর মুখোমুখি সম্ভবত এই প্রথম। চেহারায় ছিল ¯œায়ুর চাপ। জানিয়েছেন, বিস্ময়ের ঘোরে বন্দি না হয়ে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে চান। 
আগের দিন সন্ধ্যায় দলে থাকার খবর পেয়ে ভাসছেন সবার অভিনন্দনে। গতকাল প্রথম ক্যাম্পে যোগ দিয়েও পেয়েছেন সাদর সম্ভাষণ। 
জাতীয় দলের আবহে এসে তার মনে হচ্ছে স্কিলটা ধরে রেখে বাড়াতে হবে মনের জোর, ‘স্কিল তো ভালো সবাই বলে। তবে আমি অনুভব করি মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার এখানে খেলার জন্য।’ খুব ছোট বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। পরে বড় ভাইয়ের সহায়তায় এগিয়েছেন, ধীরে ধীরে জায়গা করে নিয়েছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটের মঞ্চে। ব্যাপারটা স্বপ্ন পূরণের মতো, ‘খুশি তো লাগবেই, স্বাভাবিক। সবারই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। আমারও ওই একই খুশি লাগছে। দিনের পর দিন যেন আমি আরও উন্নতি করতে পারি সেটাই চেষ্টা থাকবে।’ আপাতত ভাবনার জগৎকে জটিল না করে স্কিলে শান দিতে চান এই তরুণ।

বাড়াতে চান মনোবল, ‘নিজের স্কিল আরও উন্নত করার চেষ্টা করব। মানসিকভাবে আরও শক্ত হওয়ার চেষ্টা করব। এটাই আমার কাজ। এসব কাজে যত উন্নতি করব, তাহলে আমার জন্য খেলাটা আরও সহজ হবে।’ ২০২১ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক শাহাদাতের। ২০ ম্যাচে ৩৬.১৪ গড়ে ১২৬৫ রান করছেন। ১০ ফিফটির সঙ্গে সেঞ্চুরি ২টি। 
সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৪ ইনিংসে করেছেন ১৪৬ রান। তার আগে পরিণত ক্রিকেটের ছাপ রেখেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগেও। টেকনিক তার বেশ আঁটসাঁট, হাতে নান্দনিক শটের পসরা। কিছু পরিস্থিতিতে দেখিয়েছেন টেম্পারমেন্টে প্রমাণ। ‘তামিম ভাই, মুশফিক ভাইদের সঙ্গে খেলা বা ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করার সুযোগ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশ রোমাঞ্চ কাজ করবে। এত দিন যাদের খেলা টিভিতে দেখেছি, তাদের সঙ্গে খেলব, এটা তো স্বপ্ন।’ আগের দিনই বলছিলেন শাহাদাত। একই অনুভূতি মুশফিক হাসানেরও, ‘রোমাঞ্চকর তো অবশ্যই। ড্রেসিংরুম শেয়ার করার অভিজ্ঞতা আছে। তবে জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে ভাগাভাগি করতে পারলে অনেক কিছু শেখা হবে।’ গত বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক মুশফিকের। ১৩ ম্যাচে ৪৯ উইকেট নিয়েছেন রংপুরের ডানহাতি এই পেসার। এক ইনিংসে ৫ উইকেট তিনবার। ঘরোয়া লঙ্গার ভার্সনের অভিজ্ঞতা দীর্ঘ নয়।

মুশফিকের তো লাল বলের এটিই ছিল প্রথম মৌসুম। তারপরও জায়গা পেয়ে গেছেন টেস্ট দলে। একটু কি তাড়াহুড়ো হয়ে গেল? ‘তাড়াতাড়ি কেন হবে? ওরা তো এইচপিতে ছিল, এÑ দলেও ছিল, ওরা আমাদের পর্যবেক্ষণেই ছিল। আমরা ভালোমতোই মনিটর করছিলাম।’ বলছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন।  ক’দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টে সতীর্থদের ব্যর্থতার মাঝে ৭৩ ও ৫০ রানের ইনিংস খেলেন। এই ইনিংগুলোই ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকে টেস্ট দলে আনতে বড় ভূমিকা রেখেছে, ‘ওকে আমরা অনেক দিন থেকেই লঙ্গার ভার্সনের জন্য নজরে রাখছিলাম। ওর মধ্যে সেই টেম্পারমেন্ট আমরা অনেক আগে থেকেই দেখছি। 
একটি-দুটি ম্যাচ বা মৌসুম দেখে সিদ্ধান্ত নেই না। এবার জাতীয় লিগে ভালো না করলেও আগের দুই বার করেছে। তবে ‘এ’ দলের পারফর্ম্যান্স আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ভালো খেলেছে। আগে ভারতের সঙ্গেও ভালো করেছে। লম্বা সময় উইকেটে থাকার সামর্থ্য তার আছে।’ যোগ করেন মিনহাজুল। 
আর ২০ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার মুশফিক হাসানকে নিয়ে তার মূল্যায়ন,‘ ধারাবাহিকভাবে এক জায়গায় বল করতে পারে ভালো গতিতে। গতিটা ধরে রাখতে পারে সব স্পেলে। শারীরিকভাবে বেশ শক্তিশালী। 
‘এ’ দলের ম্যাচগুলোতে ভালো বল করেছে। হয়তো অনেক উইকেট পায়নি, কিন্তু বোলিং ভালো করেছে।’ মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি শুরু আগামী ১৪ জুন। কয়েক জনের চোট সমস্যা বা অতি নাটকীয় কিছু না হলে শাহাদাত-মুশফিকের টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সুযোগ এলেও তারা তা দুহাতে লুফে নিতে তৈরি বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচক, ‘আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী, ওরা যদি একাদশে সুযোগ পায়, তাহলে ভালো করতে পারবে। সুযোগ না পেলেও দলের সঙ্গে থেকে শিখতে পারবে।’

×