ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভবিষ্যতে ব্রাজিলের প্লে-মেকার হবেন এ তরুণ!

রড্রিগোর মধ্যে নেইমারের ছায়া!

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ২ ডিসেম্বর ২০২২

রড্রিগোর মধ্যে নেইমারের ছায়া!

রড্রিগো সিলভা দ্য গোয়েস অনেক রূপেই আবির্ভূত হতে পারেন

রড্রিগো সিলভা দ্য গোয়েস অনেক রূপেই আবির্ভূত হতে পারেন। ২১ বছর বয়সী এ তরুণ ব্রাজিলিয়ান তারকা মূলত ফরোয়ার্ড হলেও এবার বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছেন সেটি তার পরিচয়কে ভিন্নভাবে তুলে ধরেছে। তিনি ডানপ্রান্ত, বাঁপ্রান্ত দৌড়ে খেলেছেন, ক্যাসেমিরো যে জয়সূচক গোল করেছেন সেটার জোগান দিয়েছেন রড্রিগো। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেছেন তিনি। কিন্তু মাঠে আসার পর ব্রাজিলের আক্রমণভাগকে আরও জোরালো করতে পেরেছেন রড্রিগো।

একজন প্লে-মেকার হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করতে হয় সেই তৎপরতা দেখা গেছে তার মধ্যে। নেইমার জুনিয়র অনুপস্থিত থাকায় যেন তার কাজটাই করেছেন এ তরুণ। এ কারণে অনেকেই মনে করছেন ভবিষ্যতে নেইমারের ১০ নম্বর জার্সির দাবিদার রড্রিগোই। তিনিই হতে চলেছেন সেলেসাওদের পরবর্তী প্লে-মেকার। কারণ তার মধ্যে ৯ ও ১০ নম্বর জার্সিধারীদের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। আর তাই পরের ম্যাচ থেকে প্রথমবারের মতো রড্রিগোকে দেখা যেতে পারে দলের প্রথম একাদশে।
সুইসদের বিপক্ষে কিছুটা শঙ্কিত মনোভাব নিয়ে ব্রাজিল মোকাবিলায় নামে। কারণ দলের সুপার স্টার নেইমার নেই যা প্রতিপক্ষকে যেমন ভারমুক্ত করে, তেমনি চাপে ফেলে ব্রাজিলকেও। এ কারণে সার্বিয়ার বিপক্ষে যে বিধ্বংসী চেহারায় মুহুর্মুহু আক্রমণে ভয়ানক ব্রাজিলকে দেখা গেছে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ঠিক তেমনটাই দেখা যায়নি। কিছুটা যেন জড়তা ও গতি মন্থরতা দেখা গেছে সেলেসাওদের মধ্যে। নেইমার দলের মূল চালিকাশক্তি।

সকল আক্রমণের উৎস তৈরি করেন তিনি। কিন্তু সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৮০ মিনিটের সময় পায়ের গোঁড়ালিতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। সেই ইনজুরিতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নামা হয়নি তাকে। নিশ্চিতভাবেই নেইমারের অভাব টের পেয়েছে ব্রাজিল। তাদের খেলার ধরনেই সেটি বোঝা গেছে। এজন্য ফরমেশনও বদলেছে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রড্রিগো নামতেই আক্রমণের ধার বেড়েছে। তিনি প্লে-মেকারের দায়িত্ব পালন করেছেন।

শেষ পর্যন্ত তার কাছ থেকেই বল পেয়ে গোল করেছেন মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরো। একজন ফরোয়ার্ড হয়ে অ্যাসিস্ট করেছেন মিডফিল্ডারকে। আসলে এই ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হয়েছেন সেদিন রড্রিগো। কোচ তিতে সেই পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। এবার তাই রড্রিগোকে আরও বেশি সময় মাঠে রাখার পরিকল্পনা চলছে। ক্যামেরুনের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে শুক্রবার মাঠে নামবে ব্রাজিল। নেইমারের গোঁড়ালির যে পরিস্থিতি, তাতে করে আগেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হওয়াতে তাকে খেলানোর ঝুঁকি নেবেন না তিতে।

সেক্ষেত্রে এবার রড্রিগোর মোক্ষম সুযোগ বেশি সময় ধরে মাঠে থেকে নিজেকে মেলে ধরার। বিশেষ করে নেইমারের ভূমিকাতেই তাকে দেখা যাবে এবং কেমন করবেন তার ওপর নির্ধারিত হবে আসলেই ভবিষ্যতে নেইমারের ১০ নম্বর জার্সি ও তার পজিশন নেওয়ার অবস্থানে আছেন কিনা রড্রিগো।
২০১৯ সালে ব্রাজিলের জার্সিতে অভিষেক হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৯ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। গোল করেছেন মাত্র একটি। কারণ অধিকাংশ সময়ই তিনি খেলেন বদলি হিসেবে। ক্লাব পর্যায়ে স্প্যানিশ লা লিগার জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদে রড্রিগো আছেন ২০১৯ থেকেই। তার আগে ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব সান্তোসে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় খেলেছেন তিনি। এই সান্তোসেই নেইমারের শুরু।

সেখান থেকেই তিনি নিজের নামকে বিকশিত করেছেন এবং ইউরোপের ফুটবল অঙ্গনে নেইমারের নাম আছড়ে পড়েছে। তারপর তো নেইমার ইউরোপে এসে হয়ে গেছেন ব্রাজিলের মেগা স্টার। সেখান থেকে আসা রড্রিগোর নাম-ডাক অবশ্য অতটা বেশি নয়। কারণ রিয়াল মাদ্রিদ ক্যাস্টিলার অন্তর্ভুক্ত তিনি। এটি রিয়ালের রিজার্ভ দল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেজন্য রড্রিগোকে শুরুর একাদশে দেখা যায় না। তিনি খেলেন বদলি হিসেবে।

এভাবেই রিয়ালের হয়ে ৮৬ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন ২১ বছর বয়সী রড্রিগো। গোল পেয়েছেন ১১টি। কিন্তু নিজেকে চেনাতে পেরেছেন এ তরুণ ফরোয়ার্ড। এবার বিশ্বকাপেও বদলি খেলোয়াড় হিসেবে আলো ছড়িয়ে রড্রিগো নিজেকে আলোকিত করেছেন। রিয়ালে থাকাকালীন রড্রিগোর সঙ্গে খেলেছেন ক্যাসেমিরো। তাই এ তরুণকে বেশ ভালোভাবে জানা আছে তার। এজন্য ক্যাসেমিরোর দারুণ আস্থা রড্রিগোর ওপর। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর তাকে ফুটবল খেলার সক্ষমতা উপহার দিয়েছেন। তার খেলা দেখাটা মনোমুগ্ধকর।’

কিন্তু রড্রিগোর প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়াটা কঠিন করে দিয়েছেন রাফিনহা, অ্যান্টনি, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি, পেড্রো ও রিচার্লিসনরা। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে শুরুর একাদশে জায়গা করে নিতে হলে অন্য ভূমিকাতে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে রড্রিগোকে। সেই চেষ্টাই করেছেন সুইসদের বিপক্ষে।

ব্রাজিলের সহকারী কোচ ম্যাথিউস বাচি বলেছেন, ‘আমরা তাকে ৯ ও ১০ নম্বর জার্সিধারীদের এবং একজন ‘নেইমার’ এর মতো ছায়া দেখতে পেয়েছি। সে বহুরূপী, ডানেও খেলে আবার বামেও। একটা গিরগিটি যেভাবে প্রয়োজনে নিজেকে বদলে ফেলে তার মধ্যে সে ধরনের কার্যবিধি বেশ ভালোভাবেই পরিলক্ষিত হয়।’

×