ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

দুই গোলে দুই অনন্য কীর্তি এমবাপের

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:৪২, ২৮ নভেম্বর ২০২২

দুই গোলে দুই অনন্য কীর্তি এমবাপের

.

বাবা ছিলেন ক্যামেরুনিয়ান আর মা ছিলেন আলজিরিয়ান বংশোদ্ভূত। তবে তাদের সন্তানের জন্ম ফ্রান্সের প্যারিসে। শৈশবে একটি বেসরকারি ক্যাথলিক স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে তাকে মেধাবী শিক্ষার্থী মনে করা হতো। তবে বেশ উচ্ছৃঙ্খল ছিলেন তিনি। তবে ফুটবলই তাকে বখে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়। ফুটবলের প্রেমে পড়ে যান। মূলত, তার বড় ভাই ছিলেন একজন পেশাদার ফুটবলার। তবে বড় ভাই নয়, বালকটির আদর্শ ছিলেন তিন গ্রেট জিনেদিন জিদান, রোনালদো নাজারিও এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনাাল্ডো। কি আশ্চর্য, চলমান কাতার বিশ্বকাপে তিনি শেষের জনের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন, তবে ভিন্ন দলে। যার কথা বলছি, তিনি কিলিয়ান এমবাপে, ফ্রান্স জাতীয় ফুটবল দলের তারকা এবং অপরিহার্য ফরোয়ার্ড। তার উদ্ভাসিত নৈপুণ্যেই শনিবার রাতে দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে ফ্রান্স ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে সবার আগে শেষ ১৬তে জায়গা করে নেয়। দলের জয়ে দুটি গোলই করেন ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি এবং ২৩ বছর বয়সী এমবাপে। সেই সঙ্গে গড়েন অনন্য দুটি কীর্তি।

তা হলো জাস্ট ফন্টেইনের পর ফ্রান্সের দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচে গোল করেন তিনি, যা গত ৬০ বছরে প্রথম। এ ছাড়া ম্যাচে নিজের শেষ গোলটি করে স্পর্শ করেন ব্রাজিলিয় কিংবদন্তি পেলের আরেকটি রেকর্ডÑ ২৪ বছর বয়সের আগে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৭ গোলের রেকর্ড। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন ডায়মন্ড লিওনেল মেসির গোলের সংখ্যাও ছুঁয়ে ফেলেন এমবাপে। ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে মেসি তার সতীর্থ। কিন্তু মেসিকে ছুঁতে তার চেয়ে ১১ ম্যাচ কম খেলেন এমবাপে। ৭ গোল পেতে মেসি যেখানে খেলেন ২০ ম্যাচ, এমবাপের সেখানে লেগেছে মাত্র ৯ ম্যাচ। তবে শনিবার রাতে মেক্সিকোর বিপক্ষে গোল করে ফের এমবাপের চেয়ে এগিয়ে যান মেসি। প্রতিটা ম্যাচেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন এমবাপে। একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়ছেন ফরাসি এই তরুণ তুর্কি। নজরকাড়া পারফর্ম্যান্সে সব কীর্তি নিজের করে নিচ্ছেন। তার সেরা পারফর্ম্যান্সে ভর করে ইতোমধ্যেই নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে ফেলেছে ফ্রান্স। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্স দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়। ফাইনালে হারিয়ে দেয় ৪-২ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে। দলের জয়ে একটি গোল করেছিলেন এমবাপে।

সেবার ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ে ব্যাপক অবদান ছিলা তার। তার চেহারা, গতি ও বয়সের কারণে তাকে তখনই তুলনা করা হয়েছিল পেলের সঙ্গে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এমবাপে বুঝিয়ে দেন, তিনি পেলে নন, ‘এমবাপে’ হতেই এসেছেন ফুটবল মঞ্চে। জাতীয় দলের জার্সিতে এ পর্যন্ত ৬১ ম্যাচে ৩১ গোল করেছেন। এবার নিজেদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে গোল করে থিয়েরি অঁরিকে ছুঁয়ে ফেলেন ফরোয়ার্ড অলিভিয়ার জিরুদ (৫১ গোল)। ৩৬ বছর বয়সী জিরুদ হয়তো আর বেশিদিন ফ্রান্সের হয়ে খেলবেন না। এখন যে ফর্মে আছেন, তখন নিশ্চিতভাবেই তাকে টপকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ গোলদাতাও বনে যাবেন এমবাপে। এর বিপক্ষে বাজি ধরার মতো সাহস বোধকরি কারুরই হবে না। শনিবার রাতে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করার পর অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় ফ্রান্সের জয় ও দ্বিতীয় পর্বে নাম লেখানো। গোলের পরই এমবাপে গ্যালারিতে উপস্থিত হাজারো ফরাসি দর্শকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে যেভাবে উজ্জীবিত করেন, তা ছিল দেখার মতো। পিএসজিতে সাম্প্রতিক সময়ে নিজের আচরণের কারণে এমবাপে নিজ দলের সমর্থকদের কাছে এক প্রকার চক্ষুশূলই হয়ে উঠেছিলেন। নেইমারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, মেসির সঙ্গে শীতল সম্পর্ক, ক্লাবের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হতে চাওয়া.... এ সব তাকে অর্জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
তবে কাতার বিশ্বকাপে খেলতে এসে টানা দুই ম্যাচে গোল করে এই মুহূর্তে চলমান আসরের টপ স্কোরার (৩ গোল) হিসেবে নাম লিখে ফেলেছেন। পরের ম্যাচগুলোতে আরও যে গোল পাবে না, এমনটা দাবি করার কেউ নেই।
‘আমরা আজ দারুণ খেলেছি এবং প্রত্যাশিতভাবেই দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে গেছি। যদিও আমাদের হাতে আরেকটি ম্যাচ আছে, আমরা শান্তই আছি এবং পরের ম্যাচেও স্বাভাবিক খেলাই খেলব। আমরা শিরোপা ধরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব এবং কোনো ধরনের চাপে নেই। দেশবাসী আমাদের সঙ্গে আছে’- শনিবার ডেনমার্ককে হারানোর পর এমনটাই মন্তব্য করেন এমবাপে। এখন দেখার বিষয়, কথার সঙ্গে কাজের কতটা সমন্বয় ঘটাতে পারেন এমবাপে।

 

সম্পর্কিত বিষয়:

×