ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইনজুরিতে কাতার বিশ্বকাপ শেষ বেঞ্জামার

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২০ নভেম্বর ২০২২

ইনজুরিতে কাতার বিশ্বকাপ শেষ বেঞ্জামার

করিম বেঞ্জামার ইনজুরিতে হৃদয় ভেঙ্গেছে ফরাসীদের

এবারই হয়তো শেষ বিশ্বকাপ হতো করিম মোস্তফা বেঞ্জামার। ৩৪ বছর বয়সে এসে ফরমের তুঙ্গে ছিলেন এই তারকা স্ট্রাইকার। দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে এবার জিতেছেন মর্যাদার ব্যালন ডি’অর। তাই বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের অন্যতম নির্ভরতার নাম ছিলেন বেঞ্জামা। তাই ফিটনেস সমস্যার পরো দলে ছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর একদিন আগেই ফিটনেস টেস্টের পর জানা গেল বাম উরুর ইনজুরির কারণে খেলা হচ্ছে না এ স্ট্রাইকারের। শনিবার দোহায় দলের সঙ্গে অনুশীলন শেষ করে দৌঁড়ানোর সময় উরুতে টান লাগে তার এবং তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। এরপর এমআরআই স্ক্যানের পর জানানো হয় অন্তত ৩ সপ্তাহ লাগবে তার ফিট হতে। এ নিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না তার। এর আগে ২০১০ ও ২০১৮ বিশ্বকাপেও বেঞ্জামা নানা বিতর্কের কারণে খেলতে পারেননি। শুধু ২০১৪ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ হয় তার। তার অবর্তমানে ফরাসিদের আক্রমণভাগ বড় ধরণের ধাক্কাই খেয়েছে। কারণ আগেই দুই অন্যতম তারকা মিডফিল্ডার পল পোগবা ও এনগোলো কান্তে এবং রক্ষণভাগে আরেক ভরসা, সেন্টার ব্যাক প্রেসনেল কিমপেম্বে ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঠাঁই পাননি।
গত মৌসুমে জাতীয় দল ফ্রান্স ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুর্দান্ত  মৌসুম কাটিয়েছেন বেঞ্জামা। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৫ ও লা লিগায় ২৭ গোলসহ গত মৌসুমে ক্লাব ফুটবলে সবমিলিয়ে ৪৬ ম্যাচে করেন ৪৪ গোল। ইউরোপ সেরার আসরে উপহার দেন দুটি হ্যাটট্রিক। তার দুর্দান্ত পারফরমেন্সে রিয়াল মাদ্রিদ গত  মৌসুমে স্প্যানিশ লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ ছাড়াও জিতেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। এছাড়া জাতীয় দল ফ্রান্সকেও জিতিয়েছেন উয়েফা নেশন্স কাপ। গত আগস্টে তাই ইউরোপের বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাবো জয় করেন তিনি। অসাধারণ এতসব পারফরমেন্সেই তিনি এবার মর্যাদার ব্যালন ডি’অর লাভ করেন। তাই এবারই প্রথম কোনো বিশ্বকাপ আসরে তাকে দলের জন্য অপরিহার্য ভেবেছেন কোচ দিদিয়ের দেশম। কারণ, ২০১০ বিশ্বকাপের আগে যৌন কেলেঙ্কারির জন্য অভিযুক্ত হয়ে সমালোচিত ছিলেন। তাছাড়া রিয়ালের হয়ে ক্লাব পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারেননি। অন্তত তাকে পারফরমেন্সে ঘাটতির জন্যই নেওয়া হয়নি, সেটিই বলেছেন তখন ফ্রান্সের হেড কোচ রেমন্ড ডমিনিখ। যদিও কোচের এই সিদ্ধান্ত ও যুক্তিতে কেউ পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কিন্তু পরে তার যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হলে বিশ্বব্যাপী সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় বেঞ্জামার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা না পাওয়ার কারণ।

কিন্তু সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে থাকা অন্য খেলোয়াড় ঠিকই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঠাঁই করে নেন। কোচ ডমিনিখ সেই সময় বলেছেন, ‘করিম অনেক তরুণ এবং খুবই মেধাবী। আমি নিশ্চিত যে, তিনি অন্য বিশ্বকাপে খেলবেন।’  তখন মাত্র ২২ বছর বয়সী ছিলেন বেঞ্জামা। ডমিনিখের কথার সত্যতা প্রমাণ করে ২০১০ সালের দুঃখটা ঘুঁচিয়েছেন বেঞ্জামা। তিনি ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলেছেন। অভিষেক বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই হন্ডুরাসের বিপক্ষে জোড়া গোল করেন বেঞ্জামা এবং ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫-২ গোলে ফরাসিরা হারলেও একটি গোল করেন বেঞ্জামা। ২০১৮ বিশ্বকাপে বেঞ্জামাকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখেননি কোচ দেশম। আরেকটি যৌন কেলেঙ্কারির মামলায় জড়িয়েছেন সেবার। সতীর্থ ম্যাথিউ ভালবুয়েনার সঙ্গে একটি সেক্স টেপকা-ে ফেঁসে খেলা হয়নি বিশ্বকাপে। ওই টেপ দিয়ে ভ্যালবুয়েনাকে ব্ল্যাকমেল করে চাঁদা নেওয়া হয় এবং বেঞ্জামা টেপটার বিষয়ে অনেক কিছুই জানতেন। যাই হোক, এবার কাতার বিশ্বকাপের আগে বেঞ্জামার বিপক্ষে কোনো ধরনের অভিযোগ ছিল না। বরং দল সংশ্লিষ্ট সবাই এবং ফরাসি দলের ভক্ত-সমর্থকরা নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন বেঞ্জামাকে কাতার বিশ্বকাপে খেলানোর জন্য। কারণ ফরমের তুঙ্গে থাকা বেঞ্জামা যেন ৩৪ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি পরিণত আর দুরন্ত হয়ে ওঠেন। ২২ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবার বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে ফ্রান্স। দলের সঙ্গে কিছুটা পরেই যোগ দেন বেঞ্জামা। সোমবার ফ্রান্সের বিশ্বকাপ অনুশীলন শুরু হয়। আর খোলা মাঠে বিশ্বকাপ উপলক্ষে গত বুধবার ফ্রান্সের প্রথম দিনের অনুশীলনে রাফায়েল ভারানের সঙ্গে অনেকক্ষণ ওয়ার্ম-আপ করেন তিনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার আর বাইরে দেখা যায়নি তাকে, ইনডোরে (ক্লোজ ডোর) অনুশীলন করেছেন। শনিবার আবারো বেঞ্জামা বাইরে আসেন। দোহায় দলের সঙ্গে সন্ধ্যায় অনুশীলনও করেন। কিন্ত অনুশীলন শেষে দৌড়াতে গিয়ে বাঁ পায়ের উরুতে টান লাগলে তীব্র ব্যথায় কাতরাতে থাকেন বেঞ্জামা।
এরপর এমআরআই করানো হয়। ফ্রেঞ্চ ফেডারেশন রাতে জানায়, ৩ সপ্তাহ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় থাকতে হবে বেঞ্জামাকে। অর্থাৎ বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না এ স্ট্রাইকারের। কোচ দেশম এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি করিমের জন্য চরম দুঃখবোধ করছি। কারণ, তার জন্য এই বিশ্বকাপ ছিল অনেক বড় একটি লক্ষ্য পূরণের। তবে ফ্রান্স দলে এই বিশাল আঘাতের পরো স্কোয়াডের বাকিদের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। সামনে আমাদের জন্য যে বিরাট চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, সেটা উতরে যাওয়ার জন্য আমরা আমাদের সবটুকু উজাড় করে দেব।’

×