
বিশ্বকাপ সামনে রেখে অনুশীলনে ব্যস্ত হল্যান্ডের ফুটবলাররা
গোটা দুনিয়া এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনায় মাতোয়ারা হওয়ার অপেক্ষায়। ২০ নভেম্বর এশিয়ার দেশ কাতারে পর্দা উঠছে ২২তম বিশ্বকাপের। এই মহাযজ্ঞে শামিল হতে অংশগ্রহণকারী ৩২টি দল মরুর বুকে আসতে শুরু করেছে। এ ধারাবাহিকতায় বুধবার কাতারে পৌঁছেছে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা ইংল্যান্ড ও টোটাল ফুটবলের জনক হল্যান্ড। বিশ্বকাপের প্রথম হেভিওয়েট দল হিসেবে কাতারে পৌঁছেছে দল দুটি।
ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পারে খেলা তারকা ফরোয়ার্ড হ্যারি কেনের নেতৃত্বে কাতার পৌঁছেছে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের দল চার বছর আগে সেমিফাইনালে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছিল। এবার তাই ৫৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটানোর পালা। সাম্প্রতিক সময়ে ইংলিশরা ক্রিকেটের ওয়ানডে ও টি২০ দুটি বিশ্বকাপেরই শিরোপা জিতেছে। ২০১৯ সালে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। আর গত ১৩ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো জিতে নিয়েছে স্বল্পঘরানার টি২০ বিশ্বকাপের ট্রফি। অর্থাৎ বর্তমানে ইংলিশরা ক্রিকেটের ওয়ানডে ও টি২০ দুটিরই বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
ইংলিশরা শুধু ক্রিকেটই নয় ফুটবলেরও জনক। কিন্তু ১৯৬৬ সালের পর আর বিশ্বকাপ ফুটবল জেতা হয়নি তাদের। রাশিয়া বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরমেন্সে স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হতে হয় তাদের। সেমিফাইনালে এগিয়ে যেয়েও শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল ইংলিশরা। শেষটা ভালো না হলেও দলটির অধিনায়ক হ্যারি কেন সর্বোচ্চ গোল করে ঠিকই জিতে নিয়েছিলেন গোল্ডেন বুট। চার বছর পর আবারও দুয়ারে বিশ্বকাপ। আরেকবার হাহাকার ঘোচানোর মিশন। কাতার পৌঁছে ইংলিশ অধিনায়ক ও কোচ তেমনই জানিয়েছেন। অধিনায়ক হ্যারি কেন বলেন, আমরা জানি আমাদের লক্ষ্য কি। আমাদের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা আমরা বুঝি। আগেরবার কাছাকাছি গিয়েও পারিনি। এবার চেষ্টা করব সেই গ্লানি দূর করতে।
স্বপ্ন থাকলেও বাস্তবববাদী ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। তিনি বলেন, সবারই লক্ষ্য থাকে সর্বোচ্চ সাফল্য পাওয়া। আমাদেরও তাই। ছেলেরা সবাই নিজের সেরাটা দিতে মুখিয়ে আছেন। কিন্তু সবসময় চাইলেও সবকিছু পাওয়া যায় না। এজন্য ভাগ্যও কিছুটা সঙ্গে থাকা লাগে। তবে আমি আশাবাদী আমার দল নিয়ে। এবারের বিশ্বকাপে ‘বি’ গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ইংল্যান্ড। সেখানে তাদের তিন প্রতিপক্ষ ওয়েলস, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। আগামী সোমবার এশিয়ান পরাশক্তি ইরানের বিরুদ্ধে ম্যাচ মিশন শুরু করবে ইংলিশরা। গ্রুপের সেরা দুটি প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পাবে।
নিজেদের সবটুকু দিয়ে এবার ভালো কিছুর অপেক্ষায় কাতার এসেছে হল্যান্ড। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ‘অভাগা’ টিম তারা। টোটাল ফুটবলের জনক হিসেবে খ্যাত দেশটি তিনবার অর্থাৎ ১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। কিন্তু একবারও সোনার ট্রফি জিততে পারেনি। প্রতিবারই ফাইনালে হারের বেদনায় কাতরাতে হয়েছে। এবার আরেকবার হাহাকার ঘোচানোর মিশনে এসেছে ডাচরা। দলটির কোচ লুইস ভ্যান গাল অবশ্য আগেভাগেই ট্রফি নিয়ে ভাবছেন না। তিনি নিজেদের স্বাভাবিক খেলার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে ডাচ কোচ কাতারকে বিশ্বকাপের আয়োজক করায় ফিফার কড়া সমালোচনা করেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এসে পৌঁছেছে ডেনামার্কও। ডেনিশদেরও এবার বড় স্বপ্ন। ইউরোপের বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফরমেন্স প্রদর্শন করেছে তারা। মরুর বুকেও পরাশক্তিদের চমকে দেয়ার অপেক্ষায় আছে তারা। এর পাশাপাশি মানবাধিকারের পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার তাগিদে বিশেষ জার্সি পড়ে তাদের অনুশীলন করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিফার অনুমতি মেলেনি। তবে ড্যানিশ কোচ ক্যাসপার হালমান্ড জানিয়েছেন, কাতারে পৌঁছার পর তাদের সব ফোকাসই থাকবে শুধু ফুটবলে। ড্যানিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী জ্যাকব জেনসেন বলেন, ফুটবলাররা এখানে খেলতে এসেছে; বিশ^কাপ জয়ের স্বপ্ন তাদের মনে। তারা এখন শুধুই খেলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
এদিকে কাতারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে পশ্চিমা বিশ^সহ আরও কিছু দেশ। এসব নিয়ে বিশ^ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। যে কারণে ফিফার পক্ষ থেকে ‘ফুটবল বিশ^কে একত্রিত করে’ শীর্ষক একটি ভিডিও ফিচার প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে নেইমার, করিম বেঞ্জামা, এডুয়ার্ড মেন্ডির মতো তারকারা অংশ নিয়েছেন। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্টিনো বলেন, যদিও ফুটবলই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।
কিন্তু ফিফা বিশ^কাপে মাঠের বাইরেও কিছু কিছু মূল্যবোধ ও নীতি সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায়। আমরা আনন্দিত যে, বর্তমান ও অতীতের সব তারকা ফুটবলারই আমাদের এই সমন্বিত নীতিতে নিজেদের একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে পুরো বিশ^ এখন এক প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়িয়েছে। ফিফা প্রধান বিশ^কাপের সময় রাশিয়া ও ইউক্রেনকে অন্তত এক মাসের জন্য যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছেন।