ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমদের যন্ত্রণাময় একটি দিন

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২ মার্চ ২০১৯

তামিমদের যন্ত্রণাময় একটি দিন

মিথুন আশরাফ ॥ নিউজিল্যান্ড সফর যেন বাংলাদেশ দলের জন্য বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে। ওয়ানডে সিরিজের কষ্টের ধকল না কাটতেই টেস্টেও সেই বিষাদের ছোঁয়া মিলতে শুরু করে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয়দিনটিই যেমন যন্ত্রণাময় কাটল তামিম, মাহমুদুল্লাহদের। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানের লিডও নিয়ে ফেলেছে। টম লাথাম (১৬১), জিত র‌্যাভালের (১৩২) পর অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও (৯৩*) সেঞ্চুরির কাছাকাছি আছেন। একদিনেই দুই সেঞ্চুরি হয়েছে। এক সেঞ্চুরির কাছে এক ব্যাটসম্যান পৌঁছে গেছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে দ্বিতীয়দিনটিতে শুধু বল কুড়িয়েই কাটাতে হয়েছে বাংলাদেশ ফিল্ডারদের। প্রথম ইনিংসে যখন তামিম ইকবালের ১২৬ রানের অসাধারণ ইনিংসের পরও ২৩৪ রানের বেশি করতে পারল না বাংলাদেশ, তখনই বোঝা হয়ে যায় হ্যামিল্টন টেস্টে বিপদই আছে। নিউজিল্যান্ড যখন প্রথমদিন শেষ হওয়ার আগে কোন উইকেট না হারিয়ে ৮৬ রান করে তাতেই আলামত মিলে বড় স্কোরই গড়তে যাচ্ছে স্বাগতিকরা। সেই স্কোর দ্বিতীয়দিন গিয়ে ৪৫১ রানে ঠেকল। হাতে এখনও নিউজিল্যান্ডের আরও ৬টি উইকেট আছে। প্রথমদিনের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে আরও ৩৬৫ রান যোগ করে। একদিনেই ৩৬৫ রান করে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সৌম্য সরকার ২টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১টি করে উইকেট নিতে পারেন। অনভিজ্ঞ তিন স্পেশালিস্ট পেসার আবু জায়েদ রাহী, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, এবাদত হোসেন শুধু বোলিংই করে গেলেন। কিন্তু কোন উইকেট পেলেন না। পাবেনই বা কিভাবে? দুই ওপেনার র‌্যাভাল ও লাথাম মিলে যে উইকেটে থিতু হয়ে যান। কোন সুযোগই দেননি। শুধু নিজের ও দলের স্কোরবোর্ডে রানই জমা করতে থাকেন। আর জুটি বড় করতে থাকেন। দুইজন মিলে এমনই ব্যাটিং করেন, বাংলাদেশ বোলার আর ফিল্ডারদের ভোগান, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের বুঝিয়ে দেন কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়। প্রথম সেশনে নিউজিল্যান্ডের কোন উইকেটই তুলে নেয়া যায়নি। স্কোরবোর্ডে ১৯৭ রানও হয়। র‌্যাভাল ততক্ষণে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ফেলেন। লাথামও সেই পথে এগিয়ে যান। দুইজন মিলে দলের স্কোরবোর্ডে ২০০ রানও হয়ে যায়। র‌্যাভাল ও লাথাম মিলে সমান তালে রান করতে থাকেন। র‌্যাভাল যেখানে ১৬৩ বলে ১০০ রান করেন। সেখানে লাথাম ১৭০ বলে ১০০ রান করেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি করে ফেলেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যখন নিউজিল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ সেই সফরের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরি (১৭৭ রান) করেছিলেন লাথাম। এবার আবার করলেন। দুইজনের সেঞ্চুরিতেই দল এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, বাংলাদেশ দলের সব ব্যাটসম্যান মিলে যেখানে ২৩৪ রান করেন সেখানে দুই ওপেনার মিলেই সেই রান অতিক্রম করে ফেলে। বাংলাদেশের ১০ ব্যাটসম্যান যা করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড কোন উইকেট না হারিয়েই তা করে ফেলে। র‌্যাভাল ও লাথাম মিলে ২৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। এর আগে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে বাংলাদেশের যত খারাপ অবস্থাই হোক কখনই টেস্টের উদ্বোধনী জুটিতে ১০৪ রানের বেশি করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। তাও সেটি একবারই হয়েছে ২০০১ সালে। আর সব উদ্বোধনী জুটিই ৬০ রানের নিচে ছিল। এবার র‌্যাভাল ও লাথাম মিলে যে কি ভোগান ভুগিয়েছেন তা টেরই পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড রান জমা করেছেন দুই ওপেনার। ২৫৪ রানের জুটি হওয়ার সময় অবশেষে একজন ব্যাটসম্যানকে আউট করা যায়। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ঘূর্ণিতে অবশেষে একটি উইকেট শিকার করার স্বস্তি মিলে। ২২০ বলে ১৯ চার ও ১ ছক্কায় ১৩২ রান করে র‌্যাভাল আউট হন। শেষ পর্যন্ত র‌্যাভাল-লাথামের জুটির অবসান ঘটে। দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে একটিমাত্র উইকেট ফেলা গেছে। ক্লান্ত হয়ে পড়েন ফিল্ডাররা। বোলাররা বল করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠেন। বোলারদের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। যখন দ্বিতীয় সেশনে আর কোন উইকেট পড়েনি। প্রথমদিনের ৮৬ রানের সঙ্গে প্রথম সেশনে গিয়ে ১১১ রান করে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় সেশনে গিয়ে আরও ১২৯ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ড। এবার ১ উইকেটও হারায় স্বাগতিকরা। কিন্তু ততক্ষণে ৩২৬ রান করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের চেয়েও ৯২ রানে এগিয়ে যায়। র‌্যাভাল আউট হলেও লাথাম ঠিকই উইকেট আঁকড়ে থাকেন। কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে এবার বড় জুটি গড়ার দিকে এগিয়ে যান লাথাম। কিন্তু দলের ৩৩৩ রান হতেই লাথাম ও উইলিয়ামসন মিলে ৭৯ রানের জুটি গড়তেই লাথামকে আউট করে দেন সৌম্য সরকার। যেখানে স্পেশালিস্ট পেসাররা উইকেট শিকার করতে পারছিলেন না, সেখানে পার্টটাইম পেসার সৌম্য উইকেট নিতে সক্ষম হন। লাথাম আউট হওয়ার আগে অবশ্য ২৩২ বলে ১৫০ করার পর ২৪৮ বলে ১৭ চার ও ৩ ছক্কায় ১৬১ রান করে ফেলেন। বড় ইনিংস গড়েই আউট হন লাথাম। আরেকটি উইকেট পেতে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। দলের ৩৪৯ রানের সময় সৌম্য এবার রস টেইলরকে (৪) সাজঘরে ফেরান। নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু টেইলরই এই টেস্টে এখন পর্যন্ত বেশি রান করতে পারেননি। আর সবাই বড় ইনিংসই গড়েন। র‌্যাভালের পর লাথাম ও টেইলর আউট হওয়ার পর মনে হয়েছিল এবার বুঝি উইকেট কয়েকটি পড়বে। কিন্তু উল্টো আরেকটি বড় জুটির দেখা মিলল। এবার উইলিয়ামসন ও হেনরি নিকোলস মিলে ১০০ রানের জুটি গড়েন। এই জুটি দলকে ৪৪৯ রানে নিয়ে যান। ততক্ষণেই ২০০ রানের লিড ছাড়িয়ে যায়। দলের ৪৪৯ রানে গিয়ে হাফ সেঞ্চুরি (৫৩) করা নিকোলসকে আউট করতে পারেন মিরাজ। দিনের শেষ মুহূর্তে গিয়ে আরেকটি উইকেট শিকার করা যায়। প্রথম সেশনে কোন উইকেট মিলেনি। দ্বিতীয় সেশনে গিয়ে একটি উইকেট মিলে। তৃতীয় সেশনে গিয়ে আরও তিনটি উইকেট শিকার করা যায়। কিন্তু নিউজিল্যান্ড রানের পাহাড় গড়ে ফেলে। দিন শেষ হওয়ার ২ ওভার আগে নিকোলস আউট হওয়ার পর আর কোন উইকেট মিলেনি। উইলিয়ামসনও উইকেট আঁকড়েই থাকেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৩২ বলে ৯ চারে ৯৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। দিন শেষ হওয়ার আগে ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নামা নেইল ওয়াগনারকে (১*) নিয়ে আজ তৃতীয়দিনের খেলা শুরু করবেন উইলিয়ামসন। প্রথম ইনিংসে ৪৫১ রান করে ফেলায় এখনই নিউজিল্যান্ড ২১৭ রানে এগিয়ে গেছে। এই এগিয়ে থাকা এখন কতদূর গিয়ে ঠেকে সেদিকেই সবার নজর থাকছে। তৃতীয়দিন শুরুর আগে দ্বিতীয়দিনটি যন্ত্রণাময়ই কাটল তামিমদের।
×