ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এএফসি গোলকিপিং লেভেল-২ কোর্স করতে গেছেন অস্ট্রেলিয়ায়

ফুটবল কোচ নয়নের আবারও ‘প্রথম’...

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

ফুটবল কোচ নয়নের আবারও ‘প্রথম’...

রুমেল খান ॥৩৮ বছর বয়সী চশমাধারী সুদর্শন। খেলোয়াড়ী জীবন বেশিদিনের নয়। মাত্র দশ বছরের (১৯৯৭-২০০৭)। খেলেছেন মিরপুর চলন্তিকা, ভিক্টোরিয়া, মিরপুর সিটি ক্লাব, শেখ রাসেল এবং ধানম-ি ক্লাবে। ছিলেন গোলরক্ষক। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের গোলরক্ষক কোচ হিসেবে বর্তমানে কর্মরত। তার নাম নুরুজ্জামান নয়ন। যার বিশেষত্ব হচ্ছে ‘প্রথম’ কিছু করা। এর আগে বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশের প্রথম কোচ হিসেবে করেছিলেন গোলকিপিং লেভেল-২ কোর্স। এবার করতে গেলেন লেভেল-১ কোর্স। সেটাও প্রথম বাংলাদেশী কোচ হিসেবেই। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ শেষ হওয়ার দুদিন পর ১৪ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় গেছেন নয়ন। আগামী ২১ অক্টোবর শেষ হবে তার কোচিং কোর্সের মেয়াদ। সেখানে তিনি গেছেন সম্পূর্ণ নিজের খরচে (সবমিলিয়ে ৪ লাখ টাকা)। গোলকিপিং লেভেল-২ কোর্সের আয়োজন করেছে ফুটবল ফেডারেশন অস্ট্রেলিয়া (এফএফএ)। তাদের আমন্ত্রণেই সেখানে গেছেন নয়ন। এর পরের ধাপ কী? জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে নয়ন জানান, ‘গোলকিপিং লেভেল-৩ কোর্স। এটাও করার ইচ্ছে আছে।’ সেই সঙ্গে আরও যোগ করেন, ‘এই কোর্স করে আমি আসলে নিজেকে তৈরি করতে চাই। হতে চাই আরও পরিপূর্ণ-পরিণত কোচ। এরপর জাতীয় দল বা যে কোন ক্লাব যদি আমাকে দিয়ে কাজ করাতে চায় আমি প্রস্তত থাকব।’ ইতোমধ্যেই বিদেশী একটি ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েছেন নয়ন। ‘থাইল্যান্ডের লীগ-টু’র একটি ক্লাব (আংথং এফসি, ২০১৩ সালে রিজিওন্যাল লীগ সেন্ট্রাল-ওয়েস্ট ডিভিশনে চ্যাম্পিয়ন) আমাকে তাদের গোলরক্ষক কোচ হিসেবে কাজ করাার অফার করেছিল। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়াতে সেই প্রস্তাব আর গ্রহণ করিনি। মূল কারণটা হচ্ছে ওদের ওখানে জানুয়ারিতে লীগ হবে। ওই সময়টা ওখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সিডিউল মেলানো কষ্টকর। তাছাড়া আমি চাচ্ছি নিজেকে আরও ম্যাচিউর করে বিদেশী কোন ক্লাবে যোগ দিতে। লেভেল টু কোর্স করে বিদেশে গিয়ে কাজ করলে আমার সম্মানটাও বাড়বে। কাজের সুযোগও বাড়বে।’ বর্তমানে জাতীয় দলে গোলরক্ষক আছেন তিনজন, যাদের কোচিং করিয়ে থাকেন নয়ন। এরা হলেন : আশরাফুল ইসলাম রানা, রাসেল মাহমুদ লিটন এবং আনিসুর রহমান জিকো। এদের প্রসঙ্গে নয়নের ভাষ্য, ‘জাতীয় দল হোক কিংবা ক্লাব পর্যায়েই হোক, আমার প্রথম চেষ্টাই থাকে গোলরক্ষকদের কম্পিটিটিভ করে তোলা। একজনের সঙ্গে আরেকজনের যেন নৈপুণ্যের দূরত্ব বেশি না থাকে। এরপর তাদের ম্যাচ খেলার মতো সদা প্রস্তুত করে তোলা। এগুলোই আমার মূল লক্ষ্য।’ এছাড়া নয়ন এগুলো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বের করার চেষ্টা করেন তাদের মধ্যে কি ধরনের দুর্বলতা আছে। তারপর সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করেন।’ নয়নের উপলব্ধি, ‘তবে গোলরক্ষকদের রাতারাতি নৈপুণ্যের মান উন্নত করা সম্ভব নয়। অনেক সময় লাগে।’ তার মতে, ‘তৃণমূল পর্যায় থেকেই যদি গোলরক্ষকদের টেকনিকে সমস্যা থাকে (ফুটবল-কালচারের কারণে), তাহলে সেটা জাতীয় দলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কাজেই তৃণমূল থেকেই তাদের টেকনিক নিয়ে কাজ করতে পারলে ভাল হয়।’ গোলরক্ষকদের জন্য সবচেয়ে ভীতিকর বিষয় হলো পেনাল্টির মুখোমুখি হওয়া। এ নিয়ে কিভাবে কাজ করে থাকেন নয়ন? ‘পেনাল্টি নিয়ে নিয়মিত কাজ করি না। পেনাল্টি বা টাইব্রেকার মূলত টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে হয়ে থাকে। যখন বোঝা যায় কোন ম্যাচে টাইব্রেকার হতে পারে, তখন এটা নিয়ে কাজ করে থাকি। তবে এটা নিয়ে ডিটেইলস কাজ করার কিছু নেই। মাত্র তিন-চারটি টেকনিক। তাছাড়া ভাগ্য বলেও একটা ব্যাপার থাকে।’ শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলা থাকলে সবচেয়ে বেশি ঝড় বয়ে যায় দুর্বল দলের গোলরক্ষকের ওপর। সেক্ষেত্রে তাদের কিভাবে উজ্জীবিত করা হয়? নয়নের জবাব, ‘গোলরক্ষকদের শক্তিশালী-ইতিবাচক দিকগুলো বারবার স্মরণ করিয়ে দেই এবং মোটিটেভ করি। অনুশীলন তো আছেই।’ নয়ন এর আগে সর্বপ্রথম করেন ২০১১ সালে ইরানে এএফসি ‘সি’ লাইন্সেস কোর্স। এরপর পর্যায়ক্রমে ২০১২ সালে ভুটানে এএফসি ‘বি’ লাইন্সেস কোর্স এবং ২০১৬ সালে নেপালে এএফসি গোলকিপিং লেভেল-১ লাইসেন্স কোর্স। একমাত্র প্রথম কোর্সটাই করেছেন এএফসি-বাফুফের সহায়তায়। বাকিগুলো করেছেন সব নিজের খরচে। ২০১২-১৭ পর্যন্ত তৎকালীন গুলশান-১ এ অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সাবেক হেলথ এ্যান্ড ফিজিক্যাল এডুকেশন টিচার ছিলেন নয়ন। অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের স্থায়ী চাকরির প্রলোভন ত্যাগ করে ফুটবলের সঙ্গেই গাঁটছড়া বাধার সিদ্ধান্ত নেয়া নয়নের কোচিং ক্যারিয়ার বেশিদিনের না হলেও অল্প সময়েই বেশ নজর কেড়েছেন তিনি। জাতীয় পুরুষ বা সিনিয়র ফুটবল দলে এর আগে তিন দফায় কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে নয়নের (২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে)। যদিও তার শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশে নারী জাতীয় দলের হয়ে ২০১২ সালে। জাতীয় নারী দলের কোচ যখন হন তিনি তখন তার বয়স মাত্র ৩২। এত অল্প বয়সে কেউ বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন কি না, এটা গবেষণার বিষয়। ২০০৭ সালে বিয়ে করা এবং দুই ছেলের জনক নয়নের ঘরোয়া ফুটবলের ক্লাবগুলো হলো ঢাকা মোহামেডান (২০১৪-১৫), মুক্তিযোদ্ধা (২০১৬ এবং ২০১৮) এবং চট্টগ্রাম আবাহনী (২০১৭)। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ঢাকা মহিলা ফুটবল লীগে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেডের কোচ ছিলেন। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনগুলোতে এই কোচিং কোর্স করে নয়ন নিজেকে কোন্ উচ্চতায় নিতে পারেন।
×