ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে মুখোমুখি আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড

ইডেনে স্বপ্নের শিরোপা লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৩ এপ্রিল ২০১৬

ইডেনে স্বপ্নের শিরোপা লড়াই

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ আনন্দের নগরী থেকে হঠাৎ করেই কষ্টের নগরীতে পরিণত হয়ে গেছে কলকাতা। ইডেন গার্ডেনে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে। এ আনন্দ ছিল। সেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে ভারত। কত আশা ছিল। এ নিয়েও আনন্দ ছিল। কিন্তু মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড ফাইনাল ম্যাচ হবে মানেই বোঝা যাচ্ছে, ম্যাচটিতে নেই স্বাগতিক ভারত। এ কষ্টতো আছেই। আবার শহরে ফাইনাল ম্যাচ হচ্ছে ঠিক। কিন্তু নেই কোন উত্তাপ। থাকবে কি করে, নিজ দল ফাইনালে না থাকার সঙ্গে বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার ভেঙ্গে যে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে; তাতে শোকওতো কাজ করছে! তবুও ম্যাচটি ফাইনাল বলে কথা। প্রথমবারের মতো ভারতে হচ্ছে টি২০ বিশ্বকাপ। যা আজ শেষ হয়ে যাবে। টুর্নামেন্টের পর্দা নেমে যাবে। টি২০’র রাজাদের শহরে ফাইনাল হবে, তা নিয়ে উত্তেজনা একটুও থাকবে না; এমনটি হতে পারে না। উত্তেজনা আছে। কিন্তু সেই উত্তেজনা আসলে চোখে দেখা যাচ্ছে না। যতটা শোনা যাচ্ছে, শুধু দর্শকদের মধ্যে ফাইনাল খেলা ইডেন গার্ডেনে বসে দেখার খানিক ইচ্ছা আছে। বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখার আশা আছে। কিন্তু সেই ফাইনাল যদি নাও দেখা হয়, তাতে আক্ষেপ নেই। ফাইনাল দেখার জন্য ‘গাঁটের পয়সা’ খরচ করার পক্ষপাতি কেউই যেন নেই। সৌজন্য টিকেট পেলে হয়তো ফাইনাল দেখা যেতে পারে। ভাবখানা এমন! ভারত কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে না থাকলে যা হয় আর কি! আবার সেই ফাইনালটি হচ্ছে ভারতে। স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা থাকলেও ফাইনাল দেখতে না পারার জন্য হাহাকার নেই। এসব বিষয় নিয়ে আসলে ‘থোড়াই কেয়ার’ করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড দলের ক্রিকেটাররা। তারাতো আসলে ফাইনালের রোমাঞ্চে মজে আছেন। কিভাবে, কত ধরনের কৌশল অবলম্বন করে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের করে নিতে পারবেন, তা নিয়েই দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে আছে ভাবনা। সেই ভাবনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের আছে মহাপরিকল্পনা। ২০১২ সালের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন সামিই যেমন বলে দিয়েছেন, ‘যেভাবে হোক, কাপটি নিজেদের করে নিতে চাই। অন্য কিছুই নিয়ে ভাবতে রাজি নই। শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবছি। নিজেদের শক্তি কাজে লাগিয়ে কিভাবে ফাইনালটাও জিতে নেব, সেই ভাবনাতেই ব্যস্ত আমরা।’ ২০১০ সালের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মর্গান সহজ পথ অবলম্বন করে জয় ছিনিয়ে আনতে চান। শিরোপাটাও দ্বিতীয়বারের মতো নিজেদের করে নিতে চান। মর্গান যেমন বললেন, ‘আসলে আমাদের হিসেব সহজ। সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছে ভারতকে। সেরা দলকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছে। তাই তারা শক্তিশালী দলও। তবে আমরা অন্য কোন দিকে মনোযোগী নই। ক্রিকেটাররা নিজেদের সম্পর্কে ভাল জানে। টার্গেট খুব স্বচ্ছ, মাঠে গিয়ে নিজের খেলাটা খেলতে হবে। নৈপুণ্য দেখাতে হবে। তাহলেই দলের জন্য কিছু করা হবে। সেটি দলকে জয়ও এনে দেবে। আর জয় পেলেই ‘মুকুট’ আমাদের।’ এ মুকুট যে আসলে কার হবে শেষ পর্যন্ত সেটি নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটেই তর্ক-বিতর্ক চলছে। গ্রুপ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরেছে ইংল্যান্ড। এরপর দুই দলই উঠেছে সেমিফাইনালে। দুই দলই উঠেছে ফাইনালেও। গ্রুপ পর্বের ‘হার-জিত’কে কেউই বড় করে দেখতে রাজি নয়। কারণ একটাই, সেটি গ্রুপ পর্বের খেলা ছিল। আর আজ যেটি হবে, সেটি ফাইনাল ম্যাচ। যে ম্যাচে থাকে ¯œায়ুচাপ। যে ম্যাচে থাকে ভক্ত, সমর্থকদের প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশাই চাপ হয়ে ধরা দেয়। আর ফাইনাল ম্যাচ জিতে শিরোপা হাতে তুলে নেয়ার যে আবেগ, যে আনন্দ, যে অনুভূতি; সেটিতো আছেই। দুই দলের মধ্যে যখন এমন অনুভূতি। শিরোপা জেতার স্বপ্নে বিভোর, সেখানে কলকাতা কিন্তু ঝিমিয়েই আছে। ফাইনাল নিয়ে কারও মধ্যে কোন মাথাব্যথা নেই। তবে যতদূর জানা গেল, টিকেটের চাহিদা কিন্তু কম নয়। আবার ফাইনালকে ঘিরে যে রকম আয়োজন করার কথা শুরু থেকে ছিল; সেই রকম আয়োজনই হবে। তা ভারত ফাইনালে থাকুক আর না থাকুক। ইডেন গার্ডেনের সামনে যে মোহামেডান মাঠ আছে, সেখানে টিকেট বিক্রির বুথ রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে অন্যদিনের মতো নেই কোন ভিড়! মাত্র ১০ থেকে ২০ জনকেই শনিবার সকালে দেখা গেল আনাগোনা করতে। অথচ এখানে এর আগে বিশ্বকাপের যতগুলো ম্যাচ হয়েছে, প্রত্যেক ম্যাচের আগে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, ভারত-পাকিস্তান, বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ হয়েছে। প্রতিটি ম্যাচেই চোখজুড়ানো দর্শক ছিল। টিকেট কিনতে ভিড় লেগে ছিল। অথচ ফাইনাল ম্যাচ এটি। তাতেও কারও নেই কোন ভাবনা! আসলে ভারতের ক্রিকেট দর্শকরা এমনই। দল খেলতে নামার একঘণ্টা আগ পর্যন্ত উত্তেজনা থাকে না পুরো ভারত জুড়ে। শুধু স্টেডিয়ামের আশেপাশেই উত্তেজনা দেখা যায়। আর জিতলে আনন্দ মিছিল বের হয়। হারলে ক্রিকেটারদের ‘গুষ্ঠিশুদ্ধ’ উদ্ধার করা হয়। সেখানে আজকের ফাইনালে নেই ভারত। নিজ দল থাকলেই কোন উত্তাপ কাজ করে না, সেখানে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনাল খেলছে; এ নিয়ে আর কিসের মাথাব্যথা কলকাতাবাসীর। এরপরও সিএবির প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলীর আশা স্টেডিয়াম ভরে যাবে। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছেই জানা গেল গাঙ্গুলী বলেছেন, রবিবার ইডেনের গ্যালারি ভরে যাবে। ফ্লাইওভার ধসে গিয়ে যে মানুষ মারা গেছে তাতে ফাইনালের মাঝখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বন্ধ হচ্ছে না। তবে দু’দলের ক্রিকেটারদের কালো ব্যাজ পরে মাঠে নামার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ম্যাচের আগে নীরবতা পালনও হতে পারে। প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়াকে নিয়ে একটি ছোট তথ্যচিত্র দেখানো হবে মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে। চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর ও প্রেসিডেন্ট জাহির আব্বাস ফাইনালে থাকবেন। আর যারা থাকবেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আসলে সৌজন্য টিকেটপ্রাপ্ত দর্শক! সব মিলিয়ে ৬৬ হাজার না হোক, আজ অন্তত ৫৫-৬০ হাজারের ঢল নামবে ইডেনে, তেমনই মনে করা হচ্ছে। এমন হলেই এখন হয়। তা না হলে যে ফাইনাল ম্যাচ খেলে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ, না ইংল্যান্ড দল মজা পাবে। টি২০ ক্রিকেটটা আসলে বিনোদন। সেই বিনোদন কি আর দর্শক ছাড়া হয়? শিরোপা হাতে তোলার পর যদি স্টেডিয়ামে গর্জন না ওঠে, তাহলে কি আর তাতে থাকে কোন আমেজ? ইডেন গার্ডেনে এর আগে ১৬বার ফাইনাল ম্যাচ হয়েছে। প্রথমবার যে ১৯৮৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়, সেটিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে ইংল্যান্ড। ২৯ বছর পর আবার ইডেন গার্ডেনে কোন বিশ্বকাপের ফাইনাল হচ্ছে। সেই ফাইনালেও আছে ইংল্যান্ড। এবারও কি একই দশা হবে? ইংল্যান্ডের নির্ভরতা হয়ে উঠেছেন এখন জো রুট। তিনি শিরোপা নিজেদের হাতে দেখতে চান। বলেছেন, ‘দুর্দান্ত একটা অভিজ্ঞতার অপেক্ষায় রয়েছি। ছোটবেলা থেকেই এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। কয়েক বছর আগে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু দ্বাদশ ব্যক্তি ছিলাম। এবার মনে হয় ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে।’ দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কি হয়। ইংল্যান্ডই এবার বাজিমাত করে, নাকি ১৯৭৯ সালে যে একবারই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেই ইতিহাসই না এবার টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালেও বজায় থাকে। সেই ফয়সালাই হবে আজ। শিরোপা কার হাতে শোভা পাবে, ২৭ দিন ধরে সবার মুখে মুখে থাকা সেই প্রশ্নের উত্তরও মিলে যাবে।
×