ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর শেরেবাংলায় বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ওয়ানডে শুরু বৃহস্পতিবার

শেষ ভালর অপেক্ষায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৯ জুলাই ২০১৫

শেষ ভালর অপেক্ষায় বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার পূর্ণাঙ্গ সিরিজ। শুরুতেই দুই টি২০ ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো। শুরু হলো তিন ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ। সেটিও শেষ হােল। শুরু হলো দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। প্রথম টেস্ট শেষে এবার বৃহস্পতিবার থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে নামার পালা। এ টেস্টটি শেষ হতেই দুই দলের মধ্যকার পূর্ণাঙ্গ সিরিজও শেষ হয়ে যাবে। শেষ এই ম্যাচটির দিকেই এখন দুই দলের দৃষ্টি রয়েছে। তবে বাংলাদেশ চায় যে করেই হোক, শেষটা ভাল করতে। বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালই যেমন মঙ্গলবার বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে আমরা যত টেস্ট ম্যাচ খেলেছি, আমার মনে হয় আমরা ভালই খেলেছি। এটা এই সিরিজের শেষ ম্যাচ। চট্টগ্রামের টেস্টটিতে আমরা যেভাবে এগোচ্ছিলাম, সেভাবে যদি আমরা এখানেও খেলতে পারি, তাহলে এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য সব মিলিয়ে খুব ভাল একটি সিরিজ হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘টেস্টে আমরা এখনও খুব বড় কিছু অর্জন করিনি। এ মাঠে (মিরপুরে) হোক, বা অন্য যে কোন মাঠেই হোক। কিন্তু এখন আমরা আগের চেয়ে ভাল খেলছি। প্রতিপক্ষের সঙ্গে এখন আমরা লড়াই করতে পারি। উইকেট কেমন আচরণ করবে, সে বিষয়ে সবারই ধারণা আছে। আরও যেটা গুরুত্বপূর্ণ, প্রথম সেশনটা আমাদের খুব ভাল করতে হবে। পরে ওই ছন্দটা ধরে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে আশা করি এই ম্যাচটি একটা ভাল টেস্ট ম্যাচ হবে।’ ভাল হলেই বাংলাদেশের পোয়াবারো। অবশ্য তা এরই মধ্যে মিলে গেছে। সিরিজে এখন পর্যন্ত সব ম্যাচের হিসেব করলে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাই। দুই টি২০, তিন ওয়ানডে ও এক টেস্ট হয়েছে। তাতে দুই টি২০ ও এক ওয়ানডে জিতে ৩ জয় নিয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রোটিয়ারা। সিরিজে এখন পর্যন্ত হওয়া ৬ ম্যাচে রেজাল্ট ৩-২। প্রথম টি২০তে ৫২ রানে ও দ্বিতীয় টি২০তে ৩১ রানে জিতে সিরিজ জিতেছে সফরকারীরা। প্রথম ওয়ানডেতেও ৮ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে তারা। আর প্রথম টেস্ট বৃষ্টির জন্য ড্র হয়েছে। সেই হিসেবে দুই টি২০, তিন ওয়ানডে ও এক টেস্টের রেজাল্ট হিসেবে আনলে তিন জয় ও ১ ড্র’তে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান ভাল। তবে বাংলাদেশ যে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের ২ ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় ওয়ানডে ৭ ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ৯ উইকেটে জয় পাওয়ায় সিরিজই জিতে নিয়েছে, সেখানেই টাইগাররা সাফল্য কুড়িয়ে নিয়েছে। যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০০৭ সালের পর আর হারাতেই পারেনি, সেই দলকে পরপর দুই ওয়ানডেতে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে যে টাইগাররা কতটা শক্তিশালী তা আবারও বুঝিয়ে দিয়েছে। দুই দলই টানা খেলে চলেছে। তবে বাংলাদেশ দীর্ঘ পরিসরের এ সিরিজে শেষেও সাফল্য ধরে রেখেছে। এটিই সবার কাছে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। জিম্বাবুইয়ের পর পাকিস্তান, এরপর ভারতকেও ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বধ বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে আলাদাভাবেই উপস্থাপন করেছে। তবে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখাতেই যেন বাংলাদেশ প্রশংসা পাচ্ছে। তামিম যেমন দীর্ঘ সিরিজের পরও শেষদিকে এসে বাংলাদেশের ভাল খেলার রহস্য জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এটা নির্ভর করে ‘মাইন্ড সেট’-এর উপর। সত্যি কথা, এ বছরের আগ পর্যন্ত আমরা খুব বড় কিছু অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু এ বছর সেটা পেরেছি। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে। দলের প্রতি খেলোয়াড়ের মধ্যে সাফল্যের ক্ষুধা আছে। সবাই উন্নতি করতে চায়। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। এখানে আমাদের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়লে তা পারফর্মে প্রভাব ফেলে। আমাদের ফিজিও-ট্রেইনাররা আমাদের নিয়ে প্রচুর কাজ করেন। একেক দিন একেক ধরনের অনুশীলন করানোর চেষ্টা করেন। যাতে কেউ ক্লান্ত হয়ে না পড়ে। আমরা সবাই ওই অনুশীলন স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপভোগ করি। অনুশীলন, টিম মিটিং এসব আমরা এখন উপভোগ করা শিখে গেছি। আমার মনে হয়, যে কোন বিষয় উপভোগ করা শিখলে সেটার ফলাফল ভাল হয়।’ সিরিজের শেষ ম্যাচেও যেন সেটাই ধরে রাখে বাংলাদেশ। তাহলে টেস্ট হার কিংবা জিত যেটিই হোক, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। আর সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে শেষটাও ভাল হবে। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মরনে মরকেলও দ্বিতীয় টেস্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই মনে করছেন। বাংলাদেশ যে দুর্দান্ত ফর্মে আছে। তাই বলেছেন, ‘আশা করি ঢাকা টেস্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কারণ, বাংলাদেশ এখন রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে। তার ওপর নিজেদের মাটিতে খেলতে নামবে তারা। সুতরাং, এখানেও তাদের ভাল করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশকে তাই হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘আশা করি, এই টেস্টটা আমাদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক হবে।’ দুই দলই অনুশীলন করে চলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত, বাংলাদেশ দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অনুশীলন করেছে। অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মরকেল আরও বলেন, ‘আশা করি, ঢাকা টেস্ট পাঁচ দিনে গড়াবে। আমাদের ক্রিকেটাররা মাঠে নামার জন্য ক্ষুধার্ত। দুই দলেই ভাল বোলার রয়েছে। ভাল একটি টেস্ট ম্যাচই হবে ঢাকায়। এটি দিয়েই আমাদের সফর শেষ হচ্ছে। ভাল ক্রিকেট খেলাই লক্ষ্য আমাদের।’ দুই দলই শেষটা ভাল করতে চায়। কার হাতে সেই ‘ভাল’ ধরা দেবে?
×