
দীর্ঘ ৫৮ বছর পর শিরোপা জয়ের আশায় অধিনায়ক হ্যারি কেনের (সামনে) নেতৃত্বে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছেন ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা
সর্বোচ্চ তিনবার ইউরোর শিরোপা জিতে যৌথভাবে জার্মানির সঙ্গে শীর্ষে অবস্থান করছে স্পেন। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত মহাদেশীয় এই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা জিততেই পারেনি ইংল্যান্ড। উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আজ জিতলেই প্রথমবারের মতো স্বপ্নের এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করবে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। সেইসঙ্গে ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের দীর্ঘ ৫৮ বছর পর আবার কোন শিরোপায় চুমো আঁকবে কেন-বেলিংহ্যামরা।
পক্ষান্তরে ইংলিশদের হারাতে পারলে ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের এই মঞ্চে এককভাবে রেকর্ড সর্বোচ্চ চারবার ট্রফি উঁচিয়ে ধরার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়বে ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরোজয়ী স্পেন। ঠিক এমন সমীকরণ সামনে রেখেই জার্মানির বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় একে অপরের মুখোমুখি হবে স্পেন-ইংল্যান্ড।
গ্যারেথ সাউথগেটের অধীনে ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করে ইংল্যান্ড। তার কোচিংয়েই দীর্ঘ সময় পর ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে থ্রি-লায়ন্সরা। এরপর ২০২০ ইউরোতে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ফাইনাল খেলারও নজির গড়ে এই দল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তীরে এসে তরী ডুবে যায়। প্রথমবার ফাইনালের টিকিট কেটেও নিজেদের হোমগ্রাউন্ড ওয়েম্বলিতে শিরোপার লড়াইয়ে ইতালির কাছে হেরে যায় ইংল্যান্ড।
এরপর কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা দলটি এবার টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর ফাইনালে জায়গা করে নেয়। সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্সের পাশাপাশি নামেÑ ভারে শক্তিশালী দলটি ফেভারিটের ট্যাগ গায়ে মেখেই শুরু করেছিল ইউরোর মিশন। কিন্তু মূল মঞ্চে ইংলিশদের খেলায় যেন ছিল না সেই সুর-তাল, ছন্দ। গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো কিংবা কোয়ার্টার ফাইনালে প্রত্যাশামতো খেলতে না পারলেও কক্ষচ্যুত হয়নি ইংল্যান্ড। সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসকেও বিদায় করে টানা দুইবার ইউরোপীয় ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী আসরের ফাইনালের টিকিট কাটে ইংলিশবাহিনী। শিরোপা জয়ের শেষধাপে তাদের পরীক্ষাটা আজ টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা স্পেনের বিপক্ষে।
এবারের আসরে গ্রুপপর্বে ক্রোয়েশিয়া, ইতালি ও আলবেনিয়াকে হারিয়ে উড়ন্ত সূচনা করে ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী স্পেন। এরপর শেষ ষোলোতে জর্জিয়া, কোয়ার্টারে স্বাগতিক জার্মানি এবং সেমিফাইনালে টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্সকেও উড়িয়ে অপরাজিত থেকেই ফাইনালের মঞ্চে পা রাখে লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল। ভিভিয়ান-ওলমো-ইয়ামালরা শিরোপার লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও নান্দনিক খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মরিয়া।
জার্মানি বিপক্ষে শেষ আটের রোমাঞ্চকর ম্যাচটিতে স্পেনের রক্ষণভাগের দুই কা-ারি ডানি কারভাহাল ও রবিন লি নরমান্ড হলুদ কার্ড পেয়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে সেমিতে খেলতে পারেননি। কিন্তু এই দুজনই ফাইনালে মূল দলে ফিরছেন। গত এক বছর কারভাহালের পারফর্ম্যান্স নিঃসন্দেহে ক্যারিয়ার সেরা হিসেবেই সবাই বিবেচনা করবে। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক অধিনায়ক নাচোকে পেছনে ফেলে মূল দলে জায়গা ধরে রেখেছেন লি নরমান্ড। তবে পেড্রিকে নিয়ে হতাশা যেন কাটছেই না।
টনি ক্রুসের সঙ্গে সংঘর্ষে বাম হাঁটুতে আঘাত পেয়ে ইউরো থেকে ছিটকে গেছেন এই তরুণ ফুটবলার। লিচেস্টার সিটির সাবেক খেলোয়াড় আয়োজে পেরেজও ইনজুরির কারণে সাইডলাইনে চলে গেছেন। লামিন ইয়ামাল, নিকো উইলিয়াম ও ডানি ওলমোকে নিয়ে ইংল্যান্ডকে বাড়তি চিন্তা করতেই হচ্ছে। এই তিন তরুণ তুর্কিই এখন স্পেনের প্রাণ। অন্যদিকে জুড বেলিংহ্যাম, কোল পালমার, ওলি ওয়াটকিন্স কিংবা হ্যারি কেন ইংলিশদের আশার প্রতীক। নক আউট পর্বে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড গড়া ইংলিশ অধিনায়ক অভিজ্ঞ হ্যারি কেন লা রোজাদের জন্য নিঃসন্দেহে বাড়তি আতঙ্কের নাম।