
ইংল্যান্ডের মাটিতে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে চলেছেন ভারত অধিনায়ক শুভমান গিল
সিরিজের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এরপর এজবাস্টনে দু-ইনিংসেই সেঞ্চুরি। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সিরিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি করলেন শুভমান গিল। একটি ডাবল সেঞ্চুরিও রয়েছে। এখনো এক ম্যাচ বাকি। তার মধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছেন ৭০০ রান। সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান তাঁরই। এক সেঞ্চুরিতে কী রেকর্ড গড়লেন শুভমন গিল? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভালো করতে না পারা ভারত অধিনায়ক গিল দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে চমৎকার ব্যাটিং করেছেন।
ম্যাচের শেষ দিন ১৯২ বলে ৯০ ছুঁয়ে গিল তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ২২৮ বলে। চলতি অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে এটি গিলের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের মাটিতে এক সিরিজে তার চেয়ে বেশি শতক নেই আর কারও। এখানে গিলের সমান চারবার তিন অঙ্কের স্বাদ পেয়েছেন কেবল একজন, সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। ১৯৩০ সালের অ্যাশেজে লাল বলের ক্রিকেটে এক সিরিজে সর্বোচ্চ ৯৭৪ রানের রেকর্ড গড়ার পথে ৭ ইনিংসে ৪টি সেঞ্চুরি করেছিলেন ব্র্যাডম্যান।
টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে চার সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন আর কেবল একজন; ১৯২৯-৩০ মৌসুমে ঘরের মাঠে ৮ ইনিংসে তা করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জ হ্যাডলি। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিতে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গী ছিলেন গিল। এবার তাদের ছাড়িয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন তিনি। সব প্রতিপক্ষ মিলিয়ে, এক সিরিজে চারটি সেঞ্চুরি পাওয়া ভারতের তৃতীয় ক্রিকেটার গিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই কীর্তি দুইবার গড়েছিলেন সুনিল গাভাস্কার।
আর বিরাট কোহলি চার শতক করেছিলেন একবার, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে এক সিরিজে চার সেঞ্চুরি গিল ছাড়া আছে কেবল ব্র্যাডম্যান ও গাভাস্কারের। তবে নেতৃত্বের অভিষেক সিরিজেই চারবার তিন অঙ্ক ছোঁয়া প্রথম ক্রিকেটার গিল। টেস্টে নিজের নবম সেঞ্চুরি ছুঁতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শেষ দিন গিলের প্রয়োজন ছিল ২২ রান। আগের দিনের ৭৮ রানে অপরাজিত ব্যাটসম্যান সাবধানী ব্যাটিংয়ে শতকের পথে এগোন।
দিনের প্রথম সেশনের শেষ দিকে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এরপর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি গিল। জফ্রা আর্চারের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ১০৩ রানে বিদায় নেন তিনি। ২৩৮ বল খেলে ও ৩৭৯ মিনিট ক্রিজে থেকে ১২টি চার মারেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
রোহিত শার্মার অবসরের পর এই সফর দিয়ে ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে পথচলা শুরু গিলের। নেতৃত্বের অভিষেকেই সেঞ্চুরি উপহার দেন তিনি; ওই হেডিংলি টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেন ১৪৭ রান। এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্টে রানের ফোয়ারা ছোটান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে ১৬১ রান। ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে গড়েন একই ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি ও দেড়শ ছোঁয়া ইনিংস খেলার রেকর্ড। মাঝে লর্ডসে জ্বলে উঠতে না পারলেও, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এসে আবার নিজেকে মেলে ধরলেন গিল।
গিলকে হাতছানি দিচ্ছে আরও বড় দুটি রেকর্ডও। টেস্টে এক সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি রান ও এক সিরিজে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড। ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে ঘরের মাঠে অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ব্র্যাডম্যান করেছিলেন ৮১০ রান। ভারতের হয়ে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড সুনীল গাভাস্কারের। ১৯৭০-৭১ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে চার ম্যাচে আটবার ব্যাট করে ৭৭৪ রান করেছিলেন গাভাস্কার। গাভাস্কারের সেটি ছিল আবার অভিষেক সিরিজ। এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের বিশ্ব রেকর্ডটাও স্যার ডনের। ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ড সফরে পাঁচ ম্যাচের সাত ইনিংসে ৯৭৪ রান করেছিলেন স্যার ডন।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টের চতুর্থ দিনে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন বেন স্টোকসও। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে এটি তার ১৪তম সেঞ্চুরি। উপমহাদেশের দলটির বিপক্ষে তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পেলেন দ্বিতীয়বার। লম্বা সময় পর সাদা পোশাকে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন স্টোকস। লাল বলে তার আগের শতকটি এসেছিল দুই বছর আগে, ২০৩ সালের জুনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লর্ডসে। ২০ টেস্ট ও ৩৫ ইনিংস পর আবার এই স্বাদ পেলেন তিনি। চলমান ম্যানচেস্টার টেস্টের প্রথম ইনিংসে বল হাতেও আলো ছড়ান স্টোকস।
৭২ রানে ধরেন ৫ উইকেট। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়া চতুর্থ ইংলিশ ক্রিকেটার তিনি। তার আগে এই স্বাদ পেয়েছিলেন টনি গ্রেগ, ইয়ান বোথাম ও গাস অ্যাটকিনসন। তবে একটি জায়গায় অনন্য স্টোকস। এই ডাবলের স্বাদ পাওয়া ইংল্যান্ডের প্রথম অধিনায়ক তিনি। আর সব দেশ মিলিয়ে এই কীর্তিতে নাম লেখানো পঞ্চম অধিনায়ক।
আগের চারজন ছিলেন- ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেনিস অ্যাটকিনসন ও গ্যারি সোবার্স, পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মদ ও ইমরান খান। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে পাঁচ উইকেটের নজির এনিয়ে দেখা গেল ৪১ বার। সবশেষ এই স্বাদ পান দক্ষিণ আফ্রিকার কর্বিন বশ, গত মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এই ম্যাচে আরেকটি কীর্তি গড়েন স্টোকস।
প্যানেল হু