
ছবি:ট্রফি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উদযাপন
দু’বার কোয়ার্টার ফাইনাল, ১২ বার সেমিফাইনাল ও একবার ফাইনালে হারা দক্ষিণ আফ্রিকা এবার প্রতিশোধ নিলো। মুছে ফেললো ‘চোকার্স’ তকমা। ঐতিহাসিক লর্ডসের ফাইনালে এইডেন মার্করামের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হলেন টেম্বা বাভুমার দল। আর তাতেই দীর্ঘ ২৭ বছরের শিরোপা খরা ঘোচালো প্রোটিয়ারা।
শনিবার লর্ডসে কাভার পয়েন্ট দিয়ে গতিদানব মিচেল স্টার্কের বলে কাইল ভেরেইনার দারুণ এক বাউন্ডারিতে সাদা পোশাকে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আর কোনো আইসিসির শিরোপা জিততে পারেনি তারা। আর এই জয়ে সব সংস্করণ মিলিয়ে ৪৩ ইনিংস পর পাওয়া এইডেন মার্করামের লড়াকু সেঞ্চুরি রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২০৭ বলে ১৪টি চারের সহায়তায় ১৩৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক। পাশাপাশি আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রোটিয়াদের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তিনি।
চতুর্থ ইনিংসে প্রোটিয়াদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৮২ রান। সংখ্যা দেখে খুব বড় মনে না হলেও আবহাওয়া ও পরিস্থিতির বিচারে সেটা বেশ বড়। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পেসারদের তোপের মুখে আগের তিন ইনিংসে যেভাবে ভেঙে পড়েছে দুই দলের ব্যাটিং লাইনআপ, সেই হিসেবে এই লক্ষ্য তাড়া করা ছিল অসাধ্য ব্যাপার। আর সেই অসাধ্যকে রীতিমতো সাধন করেছে প্রোটিয়া ব্যাটাররা। আর ১৪৮ বছরের ইতিহাসে ২৮২ ও এর বেশি রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে জয়ের উদাহরণ ছিল মাত্র ৫০টি। লর্ডসে তো মাত্র দুবারই কোনো দল চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ বা এর বেশি লক্ষ্য ছুঁয়ে জিতেছিল। সংখ্যাটাকে তিন বানিয়ে ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকা।
২ উইকেটে ২১৩ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এ দিন তৃতীয় উইকেটে মার্করাম ও বাভুমার ১৪৭ রানের জুটির কল্যাণেই অজিদের ছিটকে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে বাভুমাকে। হ্যামস্ট্রিংয়ের কারণে পুরো ইনিংসেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ানো প্রোটিয়া অধিনায়ক ফিরেছেন জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে। যাবার আগে ৬৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাভুমা আর মাত্র ১ রান যোগ করতে পেরেছেন।
জিততে চতুর্থ দিনে তাদের প্রয়োজন ছিল ৬৯ রান, হাতে ৮ উইকেট। বাভুমা ৬৬ রানে ফিরলে চতুর্থ উইকেটে ট্রিস্টান স্টাবসের সঙ্গে আবারও জুটি লম্বা করার চেষ্টা করেন মার্করাম। তবে মিচেল স্টার্কের দারুণ এক ইনসুইংয়ে স্টাবসকে ব্যক্তিগত ৮ রানে বোল্ড করে ভাঙেন ২৪ রানের জুটি। একপ্রান্ত আগলে রেখে জয়ের কাছে পৌঁছে দেন ওপেনিংয়ে নামা মার্করাম।
জয়ের জন্য প্রয়োজন আর মাত্র ৬ রান। এ সময় জশ হ্যাজলউডের বলে শর্ট মিডউইকেটে ট্রাভিস হেডকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মার্করাম। দলকে জিতিয়ে শেষ পর্যন্ত ডেভিড বেডিংহাম ২১ ও ভেরেইনার ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে মিচেল স্টার্ক ৩টি, প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজলউড নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
ফাইনালে টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কাগিসো রাবাদা–মার্কো ইয়ানসেনদের তোপের মুখে ২১২ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। স্টার্কের দাপটে প্রোটিয়ারাও সুবিধা করতে পারেনি, প্রথম ইনিংসে ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। ৭৪ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৭ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
ফয়সাল/আফরোজা