ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অথচ মাঝপথেই ফিরছেন মুস্তাফিজ!

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:২১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

অথচ মাঝপথেই ফিরছেন মুস্তাফিজ!

মুস্তাফিজুর রহমান

চলতি মাসেই পাকিস্তানের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলবে কিউইরা। টি২০ বিশ্বকাপ আসন্ন, অথচ নিয়মিত ৯ ক্রিকেটারকে ছাড়া এই সফরের জন্য দল ঘোষণা করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এএনজেড)। দলটি কি তবে বিশ্বকাপ জিততে চায় না? আসলে আইপিএলকেই বিশ্বকাপে প্রস্তুতির সেরা মঞ্চ ভাবছে এএনজেড। বিপরীতে দারুণ ছন্দে থাকা মুস্তাফিজুর রহমানের আসর শেষ হয়ে যাচ্ছে মধ্যপথে! যখন বল হাতে দারুণ করছেন টাইগার বাঁহাতি পেসার।

এ পর্যায়ে পাঁচ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিকারি তিনি (পরিসংখ্যান ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত।) পাকিস্তান সফর বাদ দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বেশিরভাগ ক্রিকেটার যেখানে আইপিএলে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন, ফিজকে সেখানে ঘরের মাঠে জিম্বাবুইয়ের মতো দলের সঙ্গে সিরিজ খেলতে দেশে ফিরতে হচ্ছে। বিসিবি অবশ্য বলতে পারে, মুস্তাফিজের অনাপত্তিপত্রের মেয়াদ তো একদিন বাড়ানো হয়েছে। 
প্রথমে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তাকে আইপিএলে খেলার অনুমতি (এনওসি) দেওয়া হয়েছিল। সেটি ১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে! সেদিন তার দল চেন্নাই সুপার কিংস পাঞ্জাবের বিপক্ষে খেলবে। সব ঠিক থাকলে পরদিন (২ মে) দেশে ফিরবেন মুস্তাফিজ। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সহকারী ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস জানিয়েছেন, চেন্নাই এবং ইন্ডিয়ান বোর্ডের (বিসিসিআই) বিশেষ অনুরোধেই একদিনের এনওসি বাড়ানো হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বোর্ড পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ও যদি আইপিএলে এরকম ভালো খেলতে থাকে তাহলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে। এ জিনিসটা চিন্তা করতে পারে বোর্ড। এটা নির্ভর করছে কোচিং স্টাফ, নির্বাচক, জাতীয় দলের সঙ্গে যারা আছেন তারা চিন্তাভাবনা করবেন। ও যে ভালো করছেন, এটা আসলে বাংলাদেশের জন্য ভালো।’ 
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিনিয়র পরিচালক, সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান মনে করেন, আইপিএলে মুস্তাফিজের এই পারফরম্যান্সের কারণে বাংলাদেশ দলই উপকৃত হবে বেশি। এ কারণে তিনি চান,  চেন্নাইয়ের হয়ে যত বেশি পারা যায়, ম্যাচ খেলুক মুস্তাফিজ।   চেন্নাইয়ের হয়ে সব ম্যাচ খেলতে গেলে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজ মিস করবেন বাংলাদেশের এ পেসার।

আকরাম খান মনে করেন, জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এ সিরিজ না  খেলে বরং মুস্তাফিজের আইপিএলেই খেলা উচিত। সেখানে  সে যে ধরনের পরিবেশ পাবে খেলার জন্য, তাতে আগামী টি২০ বিশ্বকাপের জন্য সে নিজেকে আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতে পারবে। অনেক কিছু শিখতে পারবে সেখান থেকে।
আকরাম খান বলেন, ‘জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে খেলার চেয়ে আমার মনে হয়, ওখানে (আইপিএলে) খেললে সে অনেক কিছু শিখতে পারবে। সেখানে ড্রেসিং রুম আছে, বড় ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলবে, ওখানকার স্ট্যান্ডার্ড ভালো। বিভিন্ন উইকেটে খেলতেছে, বিভিন্ন ধরনের ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলছে, আমার মনে হয় এই সুযোগটা ওর পাওয়া উচিত।’ জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে পাঁচ ম্যাচের টি২০ খেলবে বাংলাদেশ। 
আগামী ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশে পাঁচটি টি২০ বাংলাদেশে আসবে জিম্বাবুইয়ে। ৩ মে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে প্রথম ম্যাচ। যা শেষ হবে ১২ মে। এরপর তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলতে যুক্তরাষ্ট্র যাবে বাংলাদেশ। ওই সিরিজ শুরু ২১ মে। দুই সিরিজের মাঝে সপ্তাহখানেক সময় থাকলেও, তখন আর মুস্তাফিজকে আইপিএল খেলতে ছাড়বে না বিসিবি।

ফেরার আগে আর ৪টি ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকছে ফিজের সামনে। চেন্নাইয়ের জার্সিতে প্রথমবার খেলতে নেমে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। আইপিএলে নিজের সেরা বোলিং করে সেদিন জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। মাঝে টি২০ বিশ্বকাপের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য দেশে ফেরায় একটি ম্যাচ খেলতে পারেননি। বাকি চার ম্যাচে তিনি ধরেন ৬ শিকার।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে খরুচে বোলিং করেন তিনি। টি২০তে নিজের সর্বোচ্চ ৫৫ রান দিয়ে ১ উইকেট পান ২৮ বছর বয়সী পেসার। যদিও জয় পায় তার দল। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি না হতে পারুন, মুস্তাফিজের সম্ভাবনা আছে আইপিএলে নিজের উইকেটশিকারের রেকর্ড ভাঙার। আইপিএলের এক টুর্নামেন্টে কাটার মাস্টার সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট পেয়েছিলেন ২০১৬ সালে। সেটা ছিল তাঁর অভিষেক মৌসুম। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে সেই বছর ১৬ ম্যাচ খেলে ১৭ উইকেট পেয়েছিলেন মুস্তাফিজ।

মুাস্তাফিজ কি পারবেন নিজের রেকর্ড ভাঙতে? কাজটা কঠিন। কারণ, মুস্তাফিজের হাতে আছে আর মাত্র চারটি ম্যাচ। লক্ষেèৗ সুপার জায়ান্টস (১৯ ও ২৩ এপ্রিল), সানরাইজার্স হায়দরাবাদের (২৮ এপ্রিল), পাঞ্জাব কিংস (১ মে)। মুস্তাফিজ চারটি ম্যাচেই একাদশে থাকবেন কি না, সেটিও একটা প্রশ্ন। চার ম্যাচে দুটি চেন্নাই খেলবে নিজেদের মাঠে। প্রথম চার ম্যাচে ৯ উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজ একই তালে এগোলে পরের চার ম্যাচ শেষে তো ১৮ উইকেট হতেই পারে। কিন্তু ক্রিকেট তো আর অঙ্কের নিয়ম মেনে চলে না।

মুস্তাফিজ শেষ চার ম্যাচে ৮ উইকেটের বেশিও পেতে পারেন, আবার কোনো উইকেট না-ও পেতে পারেন। এবার মুস্তফিজ ১০ উইকেটের ৮টিই পেয়েছেন চেন্নাইয়ের হোম ভেন্যু এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। নিজের রেকর্ড ভাঙতে লক্ষেèৗ ও হায়দরাবাদের বিপক্ষে ‘হোম’ ম্যাচ দুটিই বড় ভরসা হবে তাঁর। চেন্নাইয়ের উইকেট যে দারুণভাবে মানিয়ে গেছে মুস্তাফিজের বোলিংয়ের সঙ্গে।

অভিষেক মৌসুমে ১৭ উইকেট নেওয়ার পর মুস্তাফিজ আইপিএলে আর একবারই উইকেটসংখ্যায় দুই অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন। ২০২১ সালে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ১৪ ম্যাচে ১৪ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। আইপিএলে সব মিলিয়ে ৫৩ ম্যাচ খেলে মুস্তাফিজ উইকেট পেয়েছেন ৫৭টি। সংখ্যাটা এবার কোথায় দাঁড়ায়, সেটিই দেখার অপেক্ষা।

×