ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের প্রশংসা, পাকিদের সঙ্গী হতাশা

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৩৫, ১৫ নভেম্বর ২০২২

ইংল্যান্ডের প্রশংসা, পাকিদের সঙ্গী হতাশা

বাটলারদের এই উৎসবের দিনে বিপরীত চিত্র মেলবোর্নের গ্যালারিতে, হতাশায় মুহ্যমান পাকিস্তানের দর্শকরা

গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে ছোট্ট ফরম্যাটের টি২০ যেন আরও বেশি অনিশ্চয়তায় পূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ায় শ্রেষ্ঠত্বের অষ্টম আসরে সেটি আরও একবার দেখল বিশ্ব ক্রিকেট। যে দুইটা দলের সেমিফাইনালে ওঠাই ছিল ঘোরতর অনিশ্চিত, সেই তারাই উঠে এলো ফাইনালের মঞ্চে। ১৯৯২-এ ইমরান খানের সাফল্যের পুনরাবৃত্তির স্বপ্নে বিভোর বাবর আজমদের হতাশায় ডুবিয়ে উৎসবে মেতে উঠল জস বাটলারের ইংল্যান্ড।
প্রথম মিশনেই নায়ক লিটল ম্যান স্যাম কুরান। বাটলারের ইতিহাস লেখার হাতে কলম হয়ে ধরা দিলেন সেই বেন স্টোকস। ফল ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর আরেক আসরের আগেই টি২০ ট্রফির ‘অনন্য ডাবল’। ইংলিশদের জন্য চারদিক থেকে যখন ভেসে আসছে প্রশংসার জোয়ার, পাকিদের জন্য তখন কেবলই আফসোস আর হতাশা, কষ্টও কম নয়। গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরকেই যেমন কষ্ট দিচ্ছে ফাইনালে শাহিন শাহ আফ্রিদির চোট।
‘টি২০ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় শিরোপা জেতায় ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন। অসাধারণ অর্জন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ফাইনাল ছিল। আফ্রিদি চোট না পেলে ম্যাচটি আরও জমতে পারত। কী রোলার কোস্টার যাত্রার এক বিশ্বকাপ!’ টুইট শচীন টেন্ডুলকরের। ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্ষা ভোগলের চোখে এই ইংল্যান্ডই সাদা বলের (ওয়ানডে ও টি০) ক্রিকেটে সেরা,‘ইয়ন মরগান যে বিবর্তন নিয়ে এসেছিল তা এখনও শক্তভাবে বেঁচে আছে। ক্রিকেট বিশ্বে সাদা বলে সবার সেরা দল ইংল্যান্ড। একসঙ্গে দুই সংস্করণের বিশ্বকাপ জেতা অসাধারণ সাফল্য।’ এক সার্কেলে দুটি ভিন্ন ফর‌্যমাটের শিরোপা জয়ের নজির আর দ্বিতীয়টি নেই।

২০১৯ সালে মরগানের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ইংলিশরা। ২০২৩ সালে আরেকটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগেই টি২০র শিরোপা জিতলেন বাটলার। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভনও ভোগলের সঙ্গে একমত, ‘সাদা বলের ক্রিকেটে বিশ্বের সেরা দল ইংল্যান্ড। দুর্দান্ত সব খেলোয়াড় রয়েছে। রঙিন পোশাকে এখন দুটি শিরোপা তাদের হাতে। এটি পুরোপুরি প্রাপ্য। বেন স্টোকস এমন এক ক্রিকেটার যে জানে কীভাবে বড় মুহূর্ত জিততে হয়। সেরা দল হতে দলগুলোর সেরা খেলোয়াড় প্রয়োজন হয়, আর ইংল্যান্ডের এমন অনেক সেরা খেলোয়াড় আছে।’ ফাইনালে বাবরদের হারের বড় কারণ অবশ্যই ব্যাটিং ব্যর্থতা। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ১৩৭ রানে থামে পাকিস্তানের সংগ্রহ। অল্প পুঁজি নিয়েও যথেষ্ট ফাইট করে বোলাররা।

দুর্ভাগ্য ২.১ ওভার বল করার পর চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন তারকা পেসার আফ্রিদি। আর চাপের মধ্যেও অপরাজিত ৫২ রানের মহামূল্যবান ইনিংসে ৫ উইকেটের জয় এনে দেন ইংল্যান্ডের ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বাকাপ জয়ের নায়ক স্টোকস। তবে মাত্র ১২ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন কুরান, ১৩ শিকারে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারও ওঠে ২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি এ পেসারের হাতে। সাবেক অধিনায়ক ও কোচ ওয়াকার ইউনুসের প্রতিক্রিয়া, ‘বাটলার ও তার দলকে অভিনন্দন। কুরান আর স্টোকস সত্যি অসাধারণ। এ শিরোপা তাদের প্রাপ্য। আর বাবরদের বলব মাথা উঁচু রাখো, আসরে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িছে তাতে তোমরা আমাদের গর্বিত করেছো।’
ব্যাটিং নিয়ে হতাশ আরেক সাবেক তারকা শহিদ আফ্রিদি, ‘ব্যাটিং বিভাগ এমন গর্তই খুঁড়েছে যে বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণও তা ভরাট করতে পারেনি। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া এবং দারুণ একটি (ফাইনাল) ম্যাচ উপহার দেওয়া দলের অসামান্য প্রচেষ্টা। ছেলেরা মাথা উঁচু রাখো। আমরা টি২০ বিশ্বকাপের রানার্সআপ।’ শাহিন আফ্রিদির চোট কষ্ট দিচ্ছে শোয়েব আক্তারকে, ‘শাহিন আফ্রিদির চোট পাওয়াটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। ব্যাপার না, এমন হতেই পারে। আমি দলের সঙ্গে আছি। চিন্তার কিছু নেই। কষ্ট হচ্ছে, কিছুটা হতাশও। কোনো ব্যাপার না। আবার যাব এবং বিশ্বকাপ জিতব।’
পাকিস্তান বড় সুযোগ হারিয়েছে বলেই মনে করেন ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ইনজামাম উল হক, ‘আমরা বড় একটা সুযোগ হারালাম। ব্যাটিংয়ে আমাদের শুরুটা ভালোই ছিল। কিন্তু প্রত্যাশিতভাবে শেষ করতে পারিনি। ১৬০-১৭০ রান হতে পারত।
আমরাও ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছিলাম। আমি বুঝতে পারছি ছেলেদের কতটা খারাপ লাগছে। ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতিও আমি জানি। বিশ্বকাপ জিতলে কেমন লাগে, আর হারলে কেমন লাগে, সবাই আমার জানা। মূল বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান যেভাবে টুর্নামেন্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা ছিল দুর্দান্ত। এই কৃতিত্ব বাবর আজম ও তার দলকে দেয়া উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওরা লড়াইয়ের মানসিকতা দেখিয়েছে।’

×