কোচ জেমি নিডন্স
টি২০ ক্রিকেট মানেই চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি। আর সে কারণে এই ফরমেটে ক্রিকেটারদের শারীরিক গঠন, পেশিশক্তির আছে আলাদা গুরুত্ব। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নেই সেই পেশি শক্তি। টেস্ট ক্রিকেটে বড় দুর্বলতা বাংলাদেশের। এরপর টি২০ ক্রিকেটেও আছে দুর্বলতা। সেটা গত টি২০ বিশ্বকাপেই প্রমাণ হয়েছে। বাংলাদেশ দলের চরম ভরাডুবি হয় সেই আসরে। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ এবং এ বছরের মার্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১-১ সমতায় শেষ করেছে। এই পরিসংখ্যানটাই টি২০ ফরমেটে বাংলাদেশের দুর্বলতা স্পষ্ট করে দেয়। বিগ হিটারের অভাবে এই ফরমেটে খুব বড় সংগ্রহও গড়তে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব ক্রিকেটারই দীর্ঘকায় এবং বিশ্বের অন্যতম ধ্বংসাত্মক টি২০ ব্যাটারদের আধিক্য দলটিতে। সেই দলটির বিপক্ষে এবার ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। শনিবার ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে প্রথম টি২০, দ্বিতীয়টিও এখানে রবিবার। আর তৃতীয় টি২০ ম্যাচ গায়ানাতে। বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স খুব ভাল করেই উপলব্ধি করছেন, পেশি শক্তি কাজে লাগিয়ে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে পেরে ওঠা সম্ভব নয়। তাই কৌশল খাটিয়ে ব্যাটিং করে বড় সংগ্রহ করতে চান তিনি।
২০১৮ সালে সর্বশেষবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুর্দান্ত সাফল্য পায় বাংলাদেশ। সবাইকে বিস্মিত করে ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপ জেতা ক্যারিবীয়দের ২-১ ব্যবধানে সিরিজে পরাজিত করে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে। এর মধ্যে সেন্ট কিটসে হওয়া প্রথম টি২০ ম্যাচে ক্যারিবীয়রা জিতলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের লডারহিলে অনুষ্ঠিত বাকি ২ ম্যাচেই উইন্ডিজকে ভাল ব্যবধানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এবার অবশ্য বিপর্যস্ত একটি দল বাংলাদেশের। নেই মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। এবার ৩ ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। তাই চ্যালেঞ্জটা এবার অনেক কঠিন। তাছাড়া ২০১৮ সালের শেষদিকে বাংলাদেশ সফরে এসে ক্যারিবীয়রা ২-১ ব্যবধানে টি২০ সিরিজ জিতে প্রতিশোধ নেয়। গত বিশ্বকাপেও দুদলের সর্বশেষ মুখোমুখিতে ক্যারিবীয়রা ৩ রানে জিতেছে। আর ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে এবারই প্রথম টি২০ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। এখানে অবশ্য ক্যারিবীয় দলও মাত্র ২ ম্যাচ খেলেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। একটি জিতেছে, আরেকটি হেরেছে। তবু ক্যারিবীয়দের পরিচিত পরিবেশ এবং তাদের আছে টি২০ ক্রিকেটে মারদাঙ্গা ব্যাটিংয়ে পারঙ্গম এক ঝাঁক দীর্ঘকয়া ও দারুন পেশি শক্তি বিশিষ্ট ক্রিকেটার। টি২০ ক্রিকেটে এখানেই বড় ঘাটতি বাংলাদেশের। ব্যাটিং কোচ সিডন্স তাই বললেন, ‘জাতি হিসেবে আমার মনে হয় না আমাদের খুব দীর্ঘকায় গড়নের খেলোয়াড় রয়েছে। যেমন, জস বাটলার র্৬ র্২র্ , গ্লেন ম্যাক্সওয়েল র্৬ র্২র্ , মার্কাস স্টয়নিস বড়সড় দৈহিক গড়নের। তাই আমাদের অন্যভাবে উপায় খুঁজতে হবে। আমরা শক্তির দিক থেকে অন্য দলগুলোকে পেছনে ফেলতে পারব না।’ শারীরিক শক্তির বিচারে পিছিয়ে থেকেও গত সফরে উইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। আর সেটাই এবার বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ হতে পারে। সেভাবেই পরিকল্পনা করে পাওয়ার হিটিংয়ে মনোযোগী হতে হবে বাংলাদেশ দলকে। সিডন্স বলেন, ‘পাওয়ার হিটিং অবশ্যই টি২০ ম্যাচ জেতায়। যত বেশি বাউন্ডারি, তত বেশি ম্যাচ জেতা যায়। তাই আমাদের এখন পাওয়ার হিটিংয়ে মনোযোগ দিতে হবে, ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে।’ তবে পাওয়ার হিটিংয়ে উন্নতি রাতারাতি সম্ভব নয়। সেজন্য সিডন্স উপায়ও বাতলে দিয়েছেন, ‘পাওয়ার হিটিংয়ের দক্ষতা আয়ত্ত করতে অনেক বেশি ট্রেনিং সেশন প্রয়োজন। ট্রেনিংয়ে আরও বেশি সময় দিয়ে দেখতে হবে খেলোয়াড়দের দক্ষতায় পরিবর্তন আনা যায় কি না। এসব দক্ষতা ডেভেলপ করার জন্য সময় প্রয়োজন। তাই অনেক চার মারতে হবে... আপনি জানেন এটি (চার মারা) অনেকগুলো ছক্কা মারার মতোই। আমরা যদি অনেক চার মারতে পারি, অনেক সিঙ্গেল নিতে পারি... পাশাপাশি কিছু ছক্কা হাঁকালে আমরা সংগ্রহ গড়তে পারব।’ খুব বড় সংগ্রহের প্রয়োজন দেখছেন না সিডন্স মূলত বাংলাদেশের দারুণ বোলিং বিভাগের জন্য। বোলারদের ওপর আস্থা রেখেই ব্যাটিং কোচ সিডন্স বলেন, ‘আমাদের বোলিং বিভাগ খুব ভাল। আমার মনে হয় না, আমাদের অনেক বেশি রান করতে হবে। একটা ভাল সংগ্রহ দাঁড় করাতে হবে। তো সিঙ্গেল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।’