ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা

টেলিযোগাযোগ আধুনিক করতে বিটিসিএলের মহাপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০২০

টেলিযোগাযোগ আধুনিক করতে বিটিসিএলের মহাপরিকল্পনা

ফিরোজ মান্না ॥ টেলি যোগাযোগকে আরও আধুনিক ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। মহাপরিকল্পনায় ৮টি বড় প্রকল্প রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে ‘টেলি ডেনসিটি ও টেলি এক্সেস ফ্যাসিলিটি’ সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশে নির্ভরযোগ্য আধুনিক টেলিযোগাযোগ সার্ভিস গঠনে ২ হাজার ৫৭৩ দশমিক ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন বিটিসিএলের এমডি ড. রফিকুল মতিন। বিটিসিএলের এমডি ড. রফিকুল মতিন জনকণ্ঠকে বলেন, বিটিসিএলকে টিকে থাকতে হলে হাতে নেয়া মহাপরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে তথ্যপ্রযুক্তি চরম উৎকর্ষের মধ্যে বিটিসিএল টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে আমরা এসডিজি লক্ষ্য পূরণে খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় ধরা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ওয়াই-ফাই যুক্তির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি ইন্টারনেট সেবা’ পৌঁছে দেয়া। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। ‘পূর্বাচলকে গিগাবিট সিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সহায়ক টেলিযোগাযোগ ও আইটি অবকাঠামো স্থাপন’। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ২০৩০ সালের মধ্যে। ‘বেজার আওতায় নির্মাণাধীন-নির্মিতব্য ইকোনমিক জোনগুলোতে টেলিযোগাযোগ ও উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদান’। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২শ’ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সালে। ‘বিটিসিএলসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতায় কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে মতিঝিল, ঢাকাতে বিটিসিএলের নিজস্ব জমিতে বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ’। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫শ’ কোটি টাকা। ‘সব জেলা-উপজেলায় জিপন সেবা বিস্তার এবং ট্রিপল প্লে সার্ভিস চালু করা’। ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। ‘গাজীপুরে অবস্থিত টেলিযোগাযোগ স্টা কলেজকে টেলিযোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরের মাধ্যমে দেশে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলা’। ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে ২০৩০ সালের আগেই। আরও দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য মোট তিনটি প্রকল্প স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে বাস্তবায়ন করা করা হবে। আবাসনের জন্য নেয়া তিন প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বিটিসিএল আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। এক সময় বিটিসিএল লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিটিসিএলের উন্নয়ন না ঘটায় এটি দিন দিন লোকসানের দিকে চলে গেছে। এখান থেকে প্রতিষ্ঠানকে লাভের দিকে নিতে বিটিসিএল যে কর্মপরিকল্পনা দিয়েছে তা যুগের সঙ্গে মিল রেখেই দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনাটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে কর্মপরিকল্পনায় কিছুটা এদিক সেদিক হতে পারে। তবে খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। কারণ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার জন্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি বিটিসিএলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সরকার কর্মপরিকল্পনার অনুমোদন দেবে। এদিকে একনেক সভায় ‘মডার্নাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ শীর্ষক এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ২০২০ সালের জুনের মধ্যে ‘মডার্নাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। মোট প্রকল্প ব্যয় ২ হাজার ৫৭৩ দশমিক ৪০ কোটি টাকার মধ্যে সরকারী কোষাগার থেকে দেয়া হবে ৭৫৬ কোটি টাকা। বাকি এক হাজার ৮১৭ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসাবে চীন সরকার ঋণ দেবে। এই প্রকল্পের কাজ চলছে। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে। কারণ এখন টেলিফোনে কথা বলার দিন নেই। টেলিফোনের মাধ্যমে আগামী দিনে খুব একটা ‘প্রোডাক্টিভ’ কাজ করা সম্ভব হবে না। এখন চলে এসেছে ‘ডেটা ট্রান্সফার’র যুগ।
×