
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলোর একটি হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড। এ গ্রিনহাউস গ্যাসকে আটকে রাখার নানা উপায় নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি একদল গবেষক এমন এক অভিনব পদ্ধতির খোঁজ পেয়েছেন, যার মাধ্যমে ডুমুর গাছ কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইডকে কঠিন খনিজে রূপান্তর করছে।
এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে inorganic carbon sequestration, যেখানে কার্বন সরাসরি খনিজ রূপে মাটিতে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষিত থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কার্বন সংরক্ষণের অন্যতম কার্যকর এবং টেকসই উপায় হতে পারে।
সাধারণভাবে গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে সেলুলোজ উৎপন্ন করে এবং সেই সেলুলোজের মাধ্যমে নিজের কাঠামো গঠন করে। তবে কিছু বিশেষ প্রজাতির গাছ, বিশেষ করে ডুমুর গাছ, এই কার্বনকে সেলুলোজে রূপান্তরের বদলে ক্যালসিয়াম অক্সালেট (Calcium Oxalate) তৈরি করে।
পরবর্তীতে গাছের ঝরে পড়া পাতাপল্লব বা মৃত অংশ মাটিতে পড়লে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের প্রভাবে এগুলো ভেঙে গিয়ে রূপ নেয় ক্যালসিয়াম কার্বনেটে অর্থাৎ চুনাপাথরে। খনিজ রূপে এই কার্বন দীর্ঘ সময় মাটিতে সংরক্ষিত থাকে, যা পরিবেশে কার্বনের উপস্থিতি কমাতে সহায়ক।
প্রথমদিকে গবেষকদের ধারণা ছিল, এই খনিজ গঠন কেবল গাছের বাইরের অংশে বা ফাটলযুক্ত জায়গায় সীমিত থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে মৃদু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং উন্নত যন্ত্রের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, গাছের গভীর কাঠের ভেতরেও ক্যালসিয়াম কার্বনেট তৈরি হচ্ছে।
এর আগে এ ধরনের প্রক্রিয়া আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের একটি গাছ ইরোকা (Milicia excelsa)-তে দেখা গিয়েছিল। তবে সেই গাছ কাঠের জন্য পরিচিত হলেও ফল দেয় না। অন্যদিকে ডুমুর গাছ একটি ফলদ বৃক্ষ, যা খাদ্য ও অর্থনৈতিক মূল্য ছাড়াও পরিবেশগত দিক থেকে কার্বন শোষণে ভূমিকা রাখে বিষয়টি গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এখন গবেষকরা জানতে চান, ডুমুর গাছ কী পরিমাণ কার্বন খনিজ রূপে সংরক্ষণ করতে পারে এবং কোন প্রাকৃতিক পরিবেশে এই প্রক্রিয়া সবচেয়ে কার্যকর হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার পুনঃবনায়ন (reforestation) ও জলবায়ু প্রতিরোধে ডুমুর গাছের সম্ভাবনাময় ভূমিকা তুলে ধরেছে। তাই কার্বন মোকাবিলায় ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় ডুমুর গাছকে অন্তর্ভুক্ত করা সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে।
গবেষণাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এর পরিবেশগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই বৃহৎ পরিসরে ব্যবহারিক প্রমাণ ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন আরও গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ।
Jahan