ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

চিন্তা দিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ! এলন মাস্কের নিউরালিংক মস্তিষ্কে চিপ বসাল আরও দুইজনের

প্রকাশিত: ২১:০৭, ২২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:০৯, ২২ জুলাই ২০২৫

চিন্তা দিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ! এলন মাস্কের নিউরালিংক মস্তিষ্কে চিপ বসাল আরও দুইজনের

মাত্র চিন্তা করেই কম্পিউটার বা স্মার্টফোন চালানোর কথা কল্পনা করেছেন কখনও? বিজ্ঞান কল্পকাহিনি নয়, বাস্তবেই এমন এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে এলন মাস্কের নিউরালিংক। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা গত সপ্তাহান্তে আরও দুই অংশগ্রহণকারীর মস্তিষ্কে সফলভাবে ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) ডিভাইস ইনপ্ল্যান্ট করেছে। এ নিয়ে নিউরালিংক চিপপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল নয়জনে।

এই প্রযুক্তি মূলত একজন ব্যক্তির স্নায়ুতন্ত্রকে এমন একটি ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যা তার মস্তিষ্কের সিগন্যাল পড়ে তা বোঝার সক্ষমতা রাখে। এর ফলে ব্যবহারকারী শুধুমাত্র চিন্তা করেই কম্পিউটার বা স্মার্টফোন পরিচালনা করতে পারেন। বিশেষ করে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য এটি এক যুগান্তকারী সম্ভাবনা খুলে দিচ্ছে।

নিউরালিংক জানায়, প্রথমবারের মতো তারা একই দিনে দুটি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছে। এ সম্পর্কে এলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, “উভয় অংশগ্রহণকারী ভালোভাবে সেরে উঠছেন এবং উচ্ছ্বসিত মনোভাব প্রকাশ করছেন। আমরা তাদের নিউরালিংক যাত্রায় পাশে থাকতে পেরে গর্বিত।”

তবে প্রতিষ্ঠানটি অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্য বা অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিউরালিংককে মানুষের ওপর পরীক্ষার অনুমতি দেয়। এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে চিপ প্রতিস্থাপন করা হয়। ওই ব্যক্তি স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির শিকার হয়েছিলেন এবং ইনপ্ল্যান্টের পর তিনি ভিডিও গেম ও দাবা খেলতে সক্ষম হন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতেই তৃতীয় ব্যক্তির শরীরেও এই চিপ বসানো হয়। তখন এলন মাস্ক ঘোষণা দেন, ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে এই প্রযুক্তির আওতায় আনা হবে বলে তার আশা।

নিউরালিংকের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদেরও স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বা এএলএস (অ্যামিয়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস) ছিল। এএলএস ধীরে ধীরে রোগীর হাত, পা এবং শরীরের চলাচলক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে।

বর্তমানে নিউরালিংকের এই ডিভাইসটি প্রাথমিক ক্লিনিকাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। এটি এমন মানুষদের ওপর পরীক্ষা করা হচ্ছে যাদের চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ডিভাইসটির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাই করা হচ্ছে।

তবে মাস্ক মনে করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার আরও ব্যাপক হতে পারে। তিনি লিখেছেন, “নিউরালিংক একদিন লাখো, এমনকি কোটি কোটি মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনবে। কল্পনা করুন, আপনার প্রিয়জন যদি আবার হাঁটতে পারেন, কিংবা স্মৃতিভ্রষ্ট কোনো বাবা-মা যদি সন্তানকে আবার চিনে নিতে পারেন!”

বর্তমানে শুধু নিউরালিংক নয়, বিশ্বব্যাপী আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) নিয়ে গবেষণা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিনিকাল ট্রায়াল ডেটাবেইস অনুযায়ী, এই প্রযুক্তির ব্যবহার শিশুদের সেরিব্রাল পালসি, ডিমেনশিয়া, স্ট্রোক ও অন্যান্য জটিল রোগের ক্ষেত্রেও পর্যালোচনার আওতায় আনা হচ্ছে।

নিউরোটেকনোলজির এই দ্রুত উন্নয়ন চিকিৎসাক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। প্রযুক্তি যখন মানবিক প্রয়োজনে ব্যবহার হয়, তখন তা সত্যিকার অর্থেই বিপ্লব ঘটাতে পারে এটাই যেন প্রমাণ করছে নিউরালিংক।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/3kpfhz79

আফরোজা

×