ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

হ্যাক না করেও পাওয়া যাচ্ছে পাসওয়ার্ড—নতুন আতঙ্কের নাম ‘Infostealers’

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ২২ জুলাই ২০২৫

হ্যাক না করেও পাওয়া যাচ্ছে পাসওয়ার্ড—নতুন আতঙ্কের নাম ‘Infostealers’

ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারনেটে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়া বলতে আমরা সাধারণত হ্যাকার, পরিচয় চোর বা গোয়েন্দা সংস্থার অবৈধ নজরদারি কল্পনা করি। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে, মাত্র ৫০ ডলার খরচ করলেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি থেকে যে কেউ কিনতে পারে এসব চুরি হওয়া তথ্য — ঠিক শুনছেন, যে কেউ।

এই কোম্পানির নাম Farnsworth Intelligence, যার প্রতিষ্ঠাতা ২৩ বছর বয়সী এইডেন রেইনি। কোম্পানিটি তাদের কাজকর্ম লুকানোর চেষ্টা করছে না মোটেই। বরং তাদের প্রধান পণ্যটির নামই “Infostealers” — এবং তাদের ওয়েবসাইটের নাম Infostealers.info। সম্প্রতি ৪০৪ মিডিয়ার এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাত্র পঞ্চাশ ডলার দিয়ে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এই ওয়েবসাইট থেকে।

এটা কোনো সাধারণ “people search” টাইপ সাইট নয়, যেখানে পুরনো ফোন নম্বর বা ঠিকানা পাওয়া যায়। বরং এখানে রয়েছে ডেটা ব্রিচের মাধ্যমে চুরি হওয়া তথ্য — কোম্পানি ও অনলাইন সার্ভিস থেকে সরাসরি চুরি করা তথ্য যা প্রায় সব দেশের আইনেই অপরাধ।

তালিকায় আছে আপনার ব্রাউজারে সেভ করা অটোফিল ঠিকানা থেকে শুরু করে ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড পর্যন্ত!

এখানেই শেষ নয়। Farnsworth Intelligence-এর প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট “Infostealer Data Platform” আরও গভীর তথ্য দেয়, যার মধ্যে আছে বিভিন্ন সাইটের লগইন তথ্যও। যদিও এই সেবা যে কেউ পেতে পারে না, তবে “বিশেষ যৌক্তিক কারণ” দেখালে পাওয়া সম্ভব। কোম্পানির দাবি অনুযায়ী, এই প্ল্যাটফর্ম সাংবাদিকতা, সাইবার সিকিউরিটি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ব্র্যান্ড প্রটেকশন ইত্যাদির জন্য ব্যবহারযোগ্য।

কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো — এসব তথ্য পেতে কোনো ওয়ারেন্ট বা আদালতের আদেশের প্রয়োজন পড়ে না। যে কেউ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে, নিজেদের প্রয়োজনে, এসব তথ্য কিনে ফেলতে পারে।

কোম্পানির পাবলিক প্রচারণাতেও লুকোছাপার বালাই নেই। তারা গর্ব করে বলেছে, তারা “মানব গোয়েন্দাগিরিতে” পারদর্শী এবং এমনকি উত্তর কোরিয়ার একটি “ল্যাপটপ ফার্ম” পর্যন্ত হ্যাক করে তথ্য বের করেছে। এই তথ্য ব্যবহার করে নাকি তারা বহু কোম্পানিকে লাখো ডলার ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়েছে।

তবে এত স্পষ্টভাবে চুরি হওয়া তথ্য বিক্রি করার বিষয়টি গুরুতর উদ্বেগের। আইনত এসব প্রমাণ সাধারণত ফৌজদারি মামলায় ব্যবহার করা যায় না, কিন্তু তাতে থেমে থাকেন না অনেকেই। একজন নির্যাতনকারী সাবেক সঙ্গী, যিনি এখন ঠিকানা জানেন — তাঁর জন্য এই তথ্য হতে পারে ভয়ঙ্কর অস্ত্র। কোনো দুর্বল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এমন তথ্য সহজলভ্য হলে তার ফল ভয়াবহ হতে পারে।

এ নিয়ে ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের কোপার কুইন্টিন বলেন, “চুরি হওয়া মোবাইল ফোন বিক্রি করা যেমন বেআইনি ও অনৈতিক, এটাও তার চেয়ে কোনো অংশে আলাদা নয়।”

৪০৪ মিডিয়া Farnsworth Intelligence এবং এর প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

যেটা স্পষ্টভাবে বলা যায় — ব্যক্তিগত, চুরি হওয়া তথ্য সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করা নিছক ব্যবসা নয়; বরং এটি প্রযুক্তির নামে নির্লজ্জ, নৃশংস এক লোভের উদাহরণ।

আসিফ

আরো পড়ুন  

×