ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

১২৫ বছরের পুরনো হিলবার্টের গাণিতিক রহস্যের সমাধান!

প্রকাশিত: ২১:২৪, ১০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:২৬, ১০ জুলাই ২০২৫

১২৫ বছরের পুরনো হিলবার্টের গাণিতিক রহস্যের সমাধান!

ছবি: সংগৃহীত

গণিতের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। প্রায় ১২৫ বছর আগে, ১৯০০ সালে প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্ট যে ২৩টি গাণিতিক সমস্যার তালিকা করেছিলেন, তার অন্যতম কঠিন ও রহস্যময় ৬ নম্বর সমস্যার অবশেষে সমাধান মিলেছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

এই সাফল্য শুধু একটি সমস্যার সমাধান নয়, বরং পদার্থবিজ্ঞানের তিনটি জটিল তত্ত্বকে একই গাণিতিক ছাতার নিচে আনার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

কী ছিল হিলবার্টের ষষ্ঠ সমস্যা?

হিলবার্ট চেয়েছিলেন, পদার্থবিজ্ঞানের সমস্ত তত্ত্বকে একটি শক্তিশালী গাণিতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানো হোক। অর্থাৎ, যেসব সূত্র দিয়ে আমরা জগৎকে ব্যাখ্যা করিতা যেন ধাপে ধাপে গাণিতিক যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যায়। কিন্তু বিগত এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই উদ্দেশ্যে কেউ সফল হতে পারেননি।

একটি নদী, তিনটি স্তর, এক সমস্যা

এই সমস্যার মূল ছিল তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের গতি ও আচরণ ব্যাখ্যা করা। বিজ্ঞানীরা একে বোঝাতে তিনটি স্তরে তিনটি আলাদা তত্ত্ব ব্যবহার করেন

  • ক্ষুদ্র স্তর (মাইক্রোস্কোপিক): নিউটনের সূত্রে ব্যাখ্যাযোগ্য অণু-পরমাণুর গতিবিধি।
  • মধ্য স্তর (মেসোস্কোপিক): হাজার হাজার কণার গড় আচরণ ব্যাখ্যা করে বোলজম্যান সমীকরণ।
  • বড় স্তর (ম্যাক্রোস্কোপিক): খালি চোখে দেখা পানির স্রোত ব্যাখ্যা করে অয়লার ও নেভিয়ার-স্টোকস সমীকরণ।

তিনটি স্তর তিনভাবে বোঝালেও, তারা সবাই একই বাস্তবতাকে উপস্থাপন করে। তাই তাদের মধ্যে একটি গাণিতিক সংযোগ থাকা উচিত ছিল। কিন্তু এতদিন বিজ্ঞানীরা এই সংযোগটি খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

অবশেষে মিলল সেই যোগসূত্র

চলতি বছর তিনজন গণিতবিদশিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউ দেং এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহের হানি ও শিয়াও মাএই দীর্ঘদিনের রহস্যের সমাধান করেছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁদের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কোটি কোটি কণার আচরণ যখন গড় হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের আকার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ধরে নেওয়া হয়, তখন তা বোলজম্যান সমীকরণের সঙ্গে মিলে যায়।

এই সমাধানের সবচেয়ে বড় দিক ছিলকেবল একটি মুহূর্তের জন্য নয়, বরং দীর্ঘ সময় ধরে এই সংযোগকে প্রমাণ করা। যা আগে কখনও সম্ভব হয়নি।

গণিতের জন্য যুগান্তকারী মুহূর্ত

এই আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হলোএকই বাস্তবতাকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করলেও, তার ভিত্তি এক এবং সেটি গাণিতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়ও এই সংযোগ সূত্র প্রয়োগ করে ভবিষ্যতে আরও জটিল তত্ত্বের সমাধান বের করা যেতে পারে।

বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তাৎক্ষণিক প্রভাব না ফেললেও, বিজ্ঞানের মৌলিক ভিত্তি আরও মজবুত করবে। এখন গবেষকরা আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারবেন, তাঁরা প্রকৃতিকে যে সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করছেন, তা শুধু ধারণা নয়গণিতের কঠিন সত্য।

এই গবেষণার মাধ্যমে হিলবার্টের ষষ্ঠ সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সমাধান হয়েছে। গবেষকরা আশা করছেন, একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞানের আরও গভীর রহস্যের জট খোলা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, ডেভিড হিলবার্টের ২৩টি সমস্যার মধ্যে অনেকগুলোরই আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সমাধান হয়নি। এই সাফল্য নতুন প্রজন্মের গণিতবিদদের আরও উৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স।

রাকিব

×