ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

বিজ্ঞানীদের চাঞ্চল্যকর দাবি: পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি বাড়বে, দিনে কমবে সময়!

প্রকাশিত: ২১:০১, ৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:০৩, ৯ জুলাই ২০২৫

বিজ্ঞানীদের চাঞ্চল্যকর দাবি: পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি বাড়বে, দিনে কমবে সময়!

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুতগতিতে ঘুরবে, যার ফলে আগামী কয়েক সপ্তাহে প্রতিদিনের দৈর্ঘ্য সামান্য কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ‘লাইভ সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ৯ জুলাই, ২২ জুলাই ও ৫ আগস্ট চাঁদের অবস্থান পৃথিবীর ঘূর্ণনে প্রভাব ফেলবে, ফলে প্রতিদিনই প্রায় ১.৩ থেকে ১.৫১ মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত ছোট হতে পারে।

সাধারণভাবে একটি দিন মানে হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা বা ৮৬,৪০০ সেকেন্ড। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতি স্থির নয়। এটি প্রভাবিত হয় চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং ভূপৃষ্ঠের ভরবিন্যাসে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে।

ইতিহাস বলছে, পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীরে ধীরে কমেছে। প্রায় ১ থেকে ২ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর একদিন ছিল মাত্র ১৯ ঘণ্টার, কারণ তখন চাঁদ অনেক কাছাকাছি ছিল এবং তার মহাকর্ষীয় টান অনেক বেশি ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ দূরে সরে যাওয়ায় দিনে সময় বেড়েছে।

তবে ২০২০ সালে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ঘূর্ণন অনেকটা বেড়ে গেছে বলে রেকর্ড করেন, যা ১৯৭০-এর দশক থেকে নজিরবিহীন। এমনকি ২০২৪ সালের ৫ জুলাই রেকর্ড করা হয়েছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ছোট দিন, যা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় ১.৬৬ মিলিসেকেন্ড কম।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট দিনে চাঁদের পৃথিবীর নিরক্ষরেখা থেকে দূরত্বের তারতম্য পৃথিবীর ঘূর্ণনে প্রভাব ফেলতে পারে, অনেকটা ঘূর্ণায়মান খেলনা টপের মতো যার গতি অক্ষ পরিবর্তনে বাড়ে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, বরফ গলার ফলে ভরের স্থানান্তর, ভূগর্ভস্থ পানির গতি পরিবর্তন, এমনকি ভূমিকম্প ও ঋতুচক্রও পৃথিবীর ঘূর্ণনে সামান্য পরিবর্তন আনে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালের জাপানের ভূমিকম্পে পৃথিবীর দিন ১.৮ মাইক্রোসেকেন্ড কমে গিয়েছিল।

লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড হোম ‘লাইভ সায়েন্স’-কে বলেন, ‘উত্তর গোলার্ধে বেশি ভূমি রয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের গ্রীষ্মকালে গাছপালায় পাতা গজায় এবং মাটির কাছ থেকে ভর সরে যায় উপরের দিকে, যা পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষ থেকে দূরে চলে যায়।’

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, পৃথিবীর ভরের বিন্যাস পরিবর্তিত হলে তার ঘূর্ণনও পরিবর্তিত হয়—ঠিক যেমন একজন স্কেটার যখন হাত গুটিয়ে নেয় তখন তার ঘূর্ণনের গতি বেড়ে যায়, আর হাত ছড়িয়ে দিলে গতি কমে যায়।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের সামান্য পরিবর্তন আপাতত দৈনন্দিন জীবনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না, তবে ভবিষ্যতের আবহাওয়া, সময় গণনা ও উপগ্রহ প্রযুক্তির উপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকতে পারে।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×