ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

মহাকাশ থেকে দেখা গেল বিরল স্প্রাইট বজ্রপাত

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ৯ জুলাই ২০২৫

মহাকাশ থেকে দেখা গেল বিরল স্প্রাইট বজ্রপাত

ছবি: সংগৃহীত

মহাকাশ থেকে তোলা এক অত্যাশ্চর্য ছবিতে ধরা পড়েছে বিরল ‘স্প্রাইট’ বজ্রপাত। দেখতে অনেকটা লাল রঙের জেলিফিশের মতো এই প্রাকৃতিক আলোর ঝলকানাটি তুলেছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারী নিকোল আয়ার্স। নাসার স্পেসএক্স ক্রু-১০ মিশনের এই পাইলট গত ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার ছবিটি ধারণ করেন, যখন স্পেস স্টেশনটি মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল।

নভোচারী আয়ার্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘অসাধারণ! আজ সকালে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় আমি স্প্রাইটটি দেখতে পেলাম।’

তিনি জানান, স্প্রাইট হলো একটি TLE (Transient Luminous Event) অর্থাৎ ক্ষণস্থায়ী উজ্জ্বল আলোক বিস্ফোরণ, যা মেঘের উপরে সৃষ্টি হয় নিচের বজ্রঝড়ের তীব্র বৈদ্যুতিক সক্রিয়তার কারণে।

কী এই স্প্রাইট?

বিজ্ঞানীদের মতে, স্প্রাইট হলো বজ্রপাতের সময় আকাশের অনেক উঁচুতে তৈরি হওয়া একধরনের প্রাকৃতিক আলোর খেলা। এর কিছু রূপ থাকে নীল রঙের রেখা, আবার কিছু আলো ঘূর্ণায়মান বলয়ের মতো—যাকে বলা হয় ELVES। তবে এর মধ্যেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায় স্প্রাইট, যা এবার স্পষ্টভাবে ক্যামেরাবন্দি করলেন নিকোল আয়ার্স।

এলভস সাধারণত ৪০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এক ধরনের আলোকচক্র। এটি দেখা যায় বজ্রপাতের ঠিক ওপরে বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরে। যখন ইলেকট্রন কণার ধাক্কায় নাইট্রোজেন অণু উদ্দীপ্ত হয়ে আলো ছড়ায়, তখনই এই দৃশ্য তৈরি হয়।

স্প্রাইটকে মাঝেমধ্যে ‘জেলিফিশ’ বলা হয়, কারণ এর আলো নিচের দিকে ছড়ানো শাখা শুঁড়ের মতো দেখতে। আবার কেউ কেউ বলে ‘গাজর’, কারণ এর শেকড়ের মতো আলোর রেখা নিচের দিকে প্রসারিত হয়।

এ ধরনের স্প্রাইট বজ্রঝড় বা হারিকেনের সময় বেশি দেখা যায়। এসব স্প্রাইট কখনও কখনও পৃথিবীর মাটি থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) ওপরে পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

৩০ বছর গবেষণার পরও রহস্য

১৯৫০ সালে বিমানযাত্রীরা প্রথমবারের মতো স্প্রাইট চোখে দেখেন। তবে এর ছবি প্রথম তোলা সম্ভব হয় ১৯৮৯ সালে। এরপর থেকে গবেষণায় দেখা গেছে, বৃহস্পতির মতো গ্রহেও এমন লাল স্প্রাইট দেখা যায়। ধারণা করা হয়, শনি ও শুক্র গ্রহেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

নাসার ‘আর্থ অবজারভেটরি’ জানিয়েছে, নাইট্রোজেন গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে এই লাল আভা দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফক্স ওয়েদার’-এর তথ্য অনুযায়ী, এত বছর গবেষণার পরও বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন কেন কিছু বজ্রপাত স্প্রাইট তৈরি করে, আর কিছু করে না।

মহাকাশে থেকে দেখা যায় স্পষ্ট

আকাশ পরিষ্কার থাকলে মাটিতেও স্প্রাইটের ছবি তোলা সম্ভব। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে নভোচারীরা এগুলো অনেক ভালোভাবে দেখতে পান। কারণ, তারা খুব কাছ থেকে বজ্রঝড়ের আলোক বিস্ফোরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

নিকোল আয়ার্স বলেন, ‘মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে তাকালে অনেক বিরল প্রাকৃতিক দৃশ্য চোখে পড়ে। আমি আশা করি বিজ্ঞানীরা এই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারবেন কীভাবে বজ্রঝড় আকাশে এমন উজ্জ্বল আলোর সৃষ্টি করে, এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্য ও পরস্পরের সম্পর্ক ঠিক কী।’

 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স।

রাকিব

×